বিপদ আচমকা আসে। আমিও যে এভাবে বিপদে পড়বো কখনো ভাবিনি। সাতার শেখা হয়নি বলে মাঝেমধ্যে সুইমিংপুলে গিয়ে টিউব ব্যবহার করে সাতার কাটি। অনেকদিন পর আজ উপশহরের “গার্ডেন ক্লাব” –এর সুইমিংপুলে গিয়েছিলাম। এক দুলাভাই সাথে ছিলেন।
সুইমিংপুলে কাপড় চোপড় ও অন্যান্য সামগ্রী রাখার জন্য লকারের ব্যবস্থা থাকে। এজন্য মোবাইল, মানিব্যাগ, চশমা নিয়েই চলে গিয়েছিলাম। কাপড় পরিবর্তন করে রাখতে গিয়ে দেখি, এই সুইমিংপুলে বক্স ঠিকই আছে কিন্তু তালা নেই। এতো কিছু না ভেবে কাপড়ের ভিতরে মোবাইল, মানিব্যাগ রেখে সাতার কাটতে নেমে যাই।
ঘণ্টা-খানেক পর উঠে কাপড় বদলাতে গিয়ে দেখি, মোবাইল ঠিকই আছে, কিন্তু মানিব্যাগ নেই। কে নিয়েছে, কিভাবে নিয়েছে কিছু জানি না। শুধু জানি মানিব্যাগ হারিয়েছি।
জরুরী অনেককিছু ছিলো বলে মন খারাপ বেশি হচ্ছে। (১) ৪৫০০ টাকা। (২) ১০ পাউন্ড। (৩) কমার্শিয়াল ব্যাংকের ভিসা কার্ড ও ডাচ বাংলা ব্যাংকের ডেবিট কার্ড। (৪) ভোটার আইডি কার্ড। (৫) মাদরাসার আইডি কার্ড <অবশ্য মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে> (৬) বিভিন্ন কাজে ব্যবহারের জন্য আমার সবচেয়ে পছন্দের ছবির সর্বশেষ কপি। <আগামীকাল ভর্তি হবো বলে রেখেছিলাম> (৭) রুপোর আংটি। (৮) টেলিটক সিম। (৯) এডিশনাল ডিআইজির পার্সোনাল কার্ড। <বিভিন্ন ঝামেলা থেকে বাঁচতে যেটি সহায়ক হতে পারবে বলে তিনি দিয়েছিলেন> (১০) চলতি বছর পড়ার জন্য বিভিন্ন কিতাব ও গুরুত্বপূর্ণ শরাহের তালিকাসহ হাতে লেখা জরুরী কিছু কাগজ। এসবের বাইরে আরও কিছু কাগজ ছিলো। সবমিলিয়ে একেবারে হতাশ হয়ে পড়েছি।
টাকার জন্য খারাপ লাগছে না। দূরে কোথাও না গেলে আমি সাধারণত এতো টাকা রাখি না। কার্ড ও বিভিন্ন কাগজপত্রের জন্য খুব আফসোস হচ্ছে।
আমি বক্সে কাপড় রাখার সময় একজন ক্লিনার পাঁশের টয়লেটে ছিলো। হয়তো সে মানিব্যাগ সরিয়েছে। হয়তোবা অন্য কেউ। হয়তো “গার্ডেন ক্লাব” –এর কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে কাজটি হয়েছে। আমি ভাবছি, তালা লাগানো নেই, এমন একটি বক্সে সবকিছু রেখে আমি যেমন দোষী, কর্তৃপক্ষও দোষী।
বিশেষকরে তারা যেভাবে তাদের কর্মচারীর পক্ষে সাফাই পেশ করলো, বিষয়টি আমাকে সন্দেহ করতে প্রভাবিত করছে।
এছাড়া আমরা যখন খোঁজ করছিলাম, তখন একটি ছেলে এসে বললো যে, ভাই; এখানে আমার বন্ধু সাতার শিখতে ভর্তি হয়েছিলো। কিন্তু তার মোবাইলও চুড়ি হয়েছে। এরপর সে সাতার শেখা বাদ দিয়ে দিছে।
তাদের এক কর্মচারী বললো; চলতি সপ্তাহে ৬ টি মোবাইল এখান থেকে চুরি হয়েছে। সবমিলিয়ে কর্তৃপক্ষের যোগসাজেশে চুরি হয়েছে এমন সন্দেহ করাটা খুব অস্বাভাবিক কিছু নয়।
সর্বশেষ আমি তাদের ফোন নাম্বার নিয়ে এসেছি। তারা আরো খোঁজাখুঁজি করবে। একটু পরে ফোন করবো। আমি ভাবছি যা হওয়ার হয়েছে। হয়তো ছোট এই দুর্ঘটনা বড় কোনো বিপদকে দূরীভূত করেছে। কিন্তু মন যে বড্ড অশান্ত।
এক ভাই বললেন; এভাবে বিষয়টি অবহেলা করে ছেড়ে দেয়া উচিৎ হবে না। কারণ; “গার্ডেন ক্লাব” এর কোনো কর্মচারী যদি নিয়ে থাকে, তবে চাপ প্রয়োগ করলে বেড়িয়ে আসতে পারে।
আমি অবশ্য তাদের বলে এসেছি যে, ভালোমতো সন্ধান করুন। আপনাদের কেউই নিয়েছে সন্দেহ নেই। টাকা রেখে বাঁকি সবকিছু দিয়ে দিলেই আমি এখন খুশী খুশী চলে যাবো। বাইরে গিয়ে আপনাদের কথা কাউকে বলবো না। কিন্তু তারা বিষয়টি গুরুত্ব দেবে বলে মনে হয়নি। শর্ষের ভেতর ভূত থাকলে যা হয় আর কি…
এখন ফেসবুক বন্ধুদের কাছে পরামর্শ চাই> আমার আসলে এই মুহূর্তে কী করা উচিৎ? নীরবতা নাকি অন্য কিছু? ভোটার আইডি কার্ড কিভাবে নতুন করে পেতে পারি? বেশ কিছু পরামর্শ থেকে হয়তো স্বস্তি-দায়ক কোনো সমাধান বেড়িয়ে আসতে পারে। দোয়া চাই। ফেসবুকে প্রকাশিত