বিএনপি সরকার একসময় কওমী মাদরাসায় পড়ুয়াদের দাখিল/আলিমের সার্টিফিকেট ছাড়া ইসলামিক সাবজেক্টে সরাসরি অনার্স পড়ার সুযোগ দিয়ে বিশেষ গ্যাজেট প্রকাশ করেছিলো। সেই সময় দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছিলেন কওমী মাদরাসা থেকে দাওরায়ে হাদীস সম্পন্ন করা আমার পরিচিত দুই ভাই। মনে করি তাঁদের নাম তারেক ভাই ও হালিম ভাই। অনার্স পড়ার পাশাপাশি পরবর্তীতে অবশ্য তাঁরা দাখিল/আলিমও দিয়েছিলেন।
২ দিন পূর্বে অস্ট্রিয়ার “ইউনিভার্সিটি অফ ভিয়েনা” –য় মাস্টার্স সম্পন্ন করার উদ্দেশ্যে তাঁরা বাংলাদেশ ছেড়েছেন। রোববার সন্ধ্যায় তারেক ভাইয়ের সাথে কিছুক্ষণ ছিলাম। রেস্টুরেন্টে চা পানের সময় তাঁদের গল্পগুলো শুনে বেশ ভালো লাগছিলো। ভাগ্য মানুষের কতোটা সহায়ক হতে পারে, তাঁদের গল্প শুনে আবার জানা হলো।
গল্প শুনতে শুনতে ভাবছিলাম, এ তো ইতিহাস। যাত্রাপথে তাঁদের দাখিল/আলিমের সার্টিফিকেট কাজে লাগেনি। কাজে লেগেছে অনার্সের কাগজপত্র। আর কওমী মাদরাসায় দাওরা দিয়ে তাঁরা সরাসরি অনার্স পড়েছিলেন। এই হিসেবে কওমী মাদরাসায় পড়াকে কাজে লাগিয়ে “ইউনিভার্সিটি অফ ভিয়েনা” –য় পড়াটা এক নতুন ইতিহাস।
তারেক ভাই বেশ সুন্দর একটি উপমা দিলেন। সুঁইয়ের ছোট ছিদ্র দিয়ে প্রবেশ করার মতো কঠিন বাঁধা তাঁরা অতিক্রম করেছেন। অনেকেই হয়তো অসম্ভব ভেবে যা এড়িয়ে গেছে, সাহস করে সামনে এগিয়ে গেছেন বলে তাঁরা সেসব অসম্ভবকে অনায়াসে সম্ভব করতে পেরেছেন।
যেদিন শুনলাম তাঁরা অস্ট্রিয়ায় পড়তে যাচ্ছেন, বেশ খুশি হয়েছিলাম। তাঁরা নিরাপদে পোঁছে যাওয়ার পরও বেশ ভালো লাগছে।
কওমী মাদরাসার পাশাপাশি সুযোগ থাকলে দাখিল/আলিম পরীক্ষা দেয়াটা কখনোই আমার কাছে খারাপ মনে হয়নি। বরং সময়ের চাহিদা বিবেচনা করলে মনে হয়; কওমী মাদরাসায় পড়ার পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষা অর্জন করাও কিছু মানুষের উচিৎ। কিন্তু এমন কিছু ভাইকে চিনি, যারা দাখিল/আলিম দিয়ে কওমী মাদরাসার সমালোচনা এতো ব্যস্ত হন যে, মনেই হয় না তিনিও কওমির সন্তান। আমি বুঝতে পারি না, এভাবে পার্থক্য তৈরি হয় কেন! হবে কেন! মনে প্রানে প্রার্থনা, সবকিছু স্বাভাবিক থাকুক।
তারেক ভাই ও হালিম ভাইকে নিয়ে এই স্ট্যাটাস দেবার কারণ হচ্ছে; আমি আমার এই দুই ভাইয়ের উপর বেশ আশাবাদী। কেননা তাঁরা মনেপ্রাণে কওমী ভাবধারা লালন করেন। কওমী মাদরাসার সন্তান পরিচয় দিয়ে আত্মতৃপ্তি লাভ করেন।
বর্তমানে কওমী পড়ুয়াদের সাথে সাধারণ শিক্ষিত তরুণদের খুব একটা সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে না। স্বীকার করি আর নাই করি, সম্পর্কহীনতার কারণে এসব তরুনণদের সাথে নীরব দূরত্ব তৈরি হচ্ছে আর ভ্রান্ত মতবাদগুলো সহজে সমাজে জায়গা করে নিচ্ছে।
আমার বিশ্বাস, একদিন হয়তো তাঁরা পিএইচডি ডিগ্রী সম্পন্ন করে ড. তারেক ও ড. হালিম নাম নিয়ে দেশে ফিরে আসবেন; তখন তাঁদের হাত ধরে অনেক কিছু বদলে যাবে ইনশাল্লাহ। ফেসবুকে প্রকাশিত