Des Wa -এর মিথ্যাচার দেখতে এখানে ক্লিক করুন
জবাব> দারুল উলুম দেওবন্দ গোষ্ঠী সর্বদাই অখণ্ড ভারতে বিশ্বাসী। তারা মন থেকে মেনে নেয়নি মুসলিম ভূমি পাকিস্তানের সৃষ্টি। হুসাইন আহমদ মাদানি দেশভাগের সময় ঘুরে ঘুরে বাসায় বাসায় গিয়ে হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে মিথ্যা একাত্বতার কথা বলেছিল। এই দারুল উলুমের প্রচেষ্টার কারণে ভারত নামক হিন্দু রাষ্ট্রের মধ্যে একটি বিশাল মুসলিম জনগোষ্ঠী আটকা পড়ে যায়। সোভিয়েত ইউনিয়ন যেমনি ভাগ হয়ে ৬টি আলাদা মুসলিম রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছিল, ঠিক তেমনি ভারত বিভক্তের সময় বেশি কয়েকটি মুসলিম রাষ্ট্রের (যেমন কাশ্মীর, আসাম, হায়দ্রাবাদ) জন্ম হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এ গোষ্ঠীটির বিরোধিতা এবং ইসলামের নামে ফতওয়ার কারণে তা হতে পারেনি। যার ফল এখন ভোগ করছে ভারতের মুসলমানরা। তাদের প্রতিদিন প্রতিনিয়ত কষ্ট পেতে হচ্ছে হিন্দুদের কাছ থেকে।>
জবাব> যে লেখার সূচনাই হয়েছ মিথ্যার উপর, সে সম্পর্কে কিছু লেখা সময় নষ্ট বৈ কিছু নয়। তবুও দায়বদ্ধতা থেকে লিখছি। সময় সুযোগে সবগুলো পয়েন্টের বিশ্লেষণ করবো ইনশাল্লাহ।
ব্রিটিশ শাসনের শেষদিকে দারুল উলুম দেওবন্দে ২ টি দল ছিলো। একদল মুসলমানদের স্বাধীন রাষ্ট্রের পক্ষে(যাতে দেওবন্দের অধিকাংশ আলেম ছিলেন) আরেকদল অখণ্ড ভারতের পক্ষে(যে দলে হুসাইন আহমদ মাদানি ও তাঁর অনুসারী এবং স্বাধীন ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী মাওলানা আবুল কালাম আযাদ ছিলেন)। সুতরাং “দারুল উলুম দেওবন্দ গোষ্ঠী সর্বদাই অখণ্ড ভারতে বিশ্বাসী। তারা মন থেকে মেনে নেয়নি মুসলিম ভূমি পাকিস্তানের সৃষ্টি।” কথাটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। বিস্তারিত জানতে স্বাধীন পাকিস্তানের ইতিহাস খুঁজে দেখুন।
প্রথম দলের যুক্তি ছিলো> মুসলমানরা স্বাধীনভাবে একটি দেশে থাকলে সেখানে ইসলামী বিঁধান প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে। পাকিস্তানের জনক মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঠিক এই টোপটাই মুসলমানদের সামনে দিয়েছিলেন।
দ্বিতীয় দলের যুক্তি ছিলো> অখণ্ড ভারতে হিন্দু মুসলমানদের সমান অধিকার থাকবে। আর মুসলমানরা নিজেদের আচার আচরণের দ্বারা হিন্দুদের আকৃষ্ট করে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করবে। এভাবে একসময় পুরো হিন্দুস্তান মুসলমানদের কব্জায় চলে আসবে। আরেকটি যুক্তি ছিলো; ধর্মের ভিত্তিতে দেশ ভাগ হলে ব্রিটিশরা সমতা বজায় রাখবে না। ফলে মুসলমানরা খুব ছোট একটি অংশের মালিক হবে। এর ফলে উপমহাদেশে মুসলমানরা দুর্বল হয়ে পড়বে।
শেষ পর্যন্ত উগ্র হিন্দু নেতৃবৃন্দ এবং মুসলিমলীগ ধর্মের ভিত্তিতে দেশ ভাগের উপর কঠোর অবস্থান নিলেও মহাত্মা গান্ধির মতো নেতারা মাওলানা মাদানির অখণ্ড ভারত ফর্মুলার পক্ষে সায় দেন।
এই বিরোধের ফলস্বরূপ দারুল উলূমের অধিকাংশ শিক্ষক পাকিস্তান চলে যান। এমনকি স্বাধীন পাকিস্তানের প্রথম পতাকা উত্তোলন করেছিলেন যিনি> সেই মহান ব্যক্তি মাওলানা শাব্বির আহমদ উসমানী দারুল উলুম দেওবন্দের শিক্ষক ছিলেন। দেওবন্দি উলামাদের ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার লোভ দেখিয়ে জিন্নাহ ধর্মের ভিত্তিতে দেশ করে নিলেও পরবর্তীতে আর পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা হয়নি। সুতরাং দেওবন্দিরা পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা মেনে নেয়নি কথাটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। বরং ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়; দেওবন্দিদের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতাকে জিন্নাহ নিজ স্বার্থে ব্যবহার করেছিলেন।
>মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানী এবং তাঁর উপর আস্থাশীল মুসলমানরা ভারতে থেকে যান। তাঁদের এই ত্যাগের ফলস্বরূপ ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগ হলেও ভারত রাষ্ট্র ধর্ম নিরপেক্ষতার উপর প্রতিষ্ঠিত হয়। মাওলানা আবুল কালাম আযাদ ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী হন।
বর্তমান ২০১৩ সালে যদি কেউ বিশ্লেষণ করে তবে দেখতে পাবে> অখণ্ড ভারতের দাবী যারা করেছিলেন, তাঁদের রাজনৈতিক দূরদর্শিতা বাস্তবিক প্রমাণিত হয়েছিলো। কেননা, পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা হয়েছিলো মিথ্যার উপর। ফলে পাকিস্তান কখনোই ইসলামী শাসনের মুখ দেখেনি। পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের জনগণ যে আতঙ্কের মধ্যে বাস করে আসছে, সেই তুলনায় ভারতের মুসলমানগণ অনেক সুখে আছে। হিন্দুদের আধিক্যতা থাকার কারণে কখনো কখনো হিন্দু মুসলিম বিরোধ সৃষ্টি হয় সত্য। কিন্তু রাষ্ট্র কখনো ধর্মের ভিত্তিতে কারো অধিকার হরণ করেছে বলে প্রমাণিত হয়নি। সবমিলিয়ে হিন্দু রাষ্ট্রে বাস করেও মুসলমানরা সুখে আছে যেখানে পাকিস্তান ভারতের মুসলমানদের রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন সুস্পষ্ট। ফেসবুকে প্রকাশিত