মিসরের বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে অনেকেই ব্রাদারহুডের শেষ দেখে ফেলেছেন। আসলেই কি একটি অভ্যুত্থান মুসলিম ব্রাদারহুডের মতো জনপ্রিয় দলকে শেষ করে দিতে সক্ষম? কিছু বিষয় ভাবনায় রাখলে মনে হবে হিসেব এতো সহজ নয়।
মোবারকের শাসনামলে মিসরের জনগণ ধর্ম থেকে যথেষ্ট দূরে ছিলো। হঠাৎ করে ধর্মীয় অনুশাসন তাদের জন্য হিমালয়সম চাপ নিয়ে এসেছে। ফলে মুরসিবিরোধী আন্দোলনে মিসরের বিপুল সংখ্যক জনতা অংশ নিয়েছিল। বিপথগামী এসব জনতাকে আমেরিকা,ইসরাইল পরিপূর্ণ মদদও দিচ্ছিলো।
আসুন সেনাবাহিনী প্রসঙ্গ দেখি। মোবারকের শাসনামলে সেনাপ্রধান ছিলেন মোবারকের ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত হুসেইন তানতাউয়ি। গত আগস্টে মুরসি হুসেইন তানতাউয়ির চেয়ে ২০ বছরের ছোট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসিকে সেনাপ্রধান নিয়োগ করেন। সিসি সম্পর্কে বাজারে জোর গুজব ছিলো যে, সে ব্রাদারহুডের সমর্থক। মুরসি এই দিকটা বিবেচনা করেই সিসিকে সেনাপ্রধান করেছিলেন।
ইসরাইল,আমেরিকার সাহায্যপ্রাপ্ত বিপুল সংখ্যক জনতাকে রাজপথে দমন করা ব্রাদারহুডের পক্ষে সম্ভব ছিলো না। এক্ষেত্রে সেনাবাহিনী সরাসরি সরকারের পক্ষাবলম্বন করলে বৈদেশিক আক্রমণের শঙ্কাও ছিলো। সুতরাং সুন্দর আগামির স্বার্থে বর্তমান প্রেক্ষাপটে মুরসির সরে যাওয়ার বিকল্প ছিলো না। এখন মুরসি সরাসরি পদত্যাগ করলে একদিকে ব্রাদারহুডের রাজনৈতিক দৈণ্যতা প্রকাশিত হতো। অপরদিকে সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ না করলে ব্রাদারহুডের প্রতি তাদের দুর্বলতা স্পষ্ট হয়ে উঠতো। ফলে এমনটি খুব একটা অস্বাভাবিক নয় যে, সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখল ব্রাদারহুডের পরিকল্পনার একটা অংশমাত্র।
আশাবাদী হতে তো দোষ নেই। ব্রাদারহুড আমাদের দেশের ধর্মীয় দলগুলোর মতো নিশ্চয় অল্প বুদ্ধি লালন করে না। অবশ্য মুরসি সরকারের দায়িত্বশীলদের সাথে সেনাবাহিনীর আচরণ থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠবে ব্রাদারহুডের ভবিষ্যৎ কি!
২ টা ক্লু দিয়ে লেখাটা শেষ করছি। ১) সেনাবাহিনীর হুমকি সত্ত্বেও মুরসির অনড় অবস্থান ভাবতে বাধ্য করে নিশ্চয় ভেতরে অন্য কাহিনী আছে। ২) বিরোধী পক্ষের সমর্থন সত্ত্বেও সেনাবাহিনী ক্ষমতা নিজেদের হাতে না নিয়ে বিচারপতির নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘটন করায় এটাও প্রমাণিত যে, সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের কোনো উদ্দেশ্য নেই। তারা জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন করেছে। ফলে বিরোধীপক্ষের কাছে সেনাবাহিনীর স্বচ্ছতা প্রমাণিত।
২ টা ক্লু সম্পর্কে কিঞ্চিৎ ভাবনা।
১) মুরসি নিশ্চয় অসুস্থ নন যে, সেনাবাহিনীর মোকাবেলা করা সম্ভব নয় জেনেও অনড় অবস্থান গ্রহণ করবেন। তবে তাঁর উদ্দেশ্য কি ছিলো? ২) সেনাবাহিনী প্রথম থেকেই ব্রাদারহুডের নীতি সম্বন্ধে জানতো। পুরোপুরি ইসলাম বিদ্বেষী হলে তারা প্রথমেই ব্রাদারহুডকে ক্ষমতা না দিয়ে দখল করে নিতো। সিসির নিয়োগদাতা যেখানে মুরসি, সেখানে সেনাবাহিনী বিরোধীপক্ষের স্বার্থে কাজ করবে কেন! পর্যবেক্ষণ সহকারে ভাবতে থাকুন। সাথেও দোয়াও চালিয়ে যান। প্রথম প্রকাশ