বিগত ০৬ এপ্রিল হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে দেশব্যাপী শানে রিসালত সম্মেলনের ঘোষণা দেয়া হয়। ঘোষিত কর্মসূচীর ধারাবাহিকতায় আজ বগুড়ায় অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো শানে রিসালত সম্মেলন।
কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশব্যাপী সম্মেলন আয়োজনের দায়িত্ব বিভাগীয় কমিটির উপর ছেড়ে দেয়া হয়। আয়োজকদের চাহিদার প্রেক্ষিতে ইতিপূর্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনগুলোতে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হয়েছিলেন। হেফাজতে ইসলামের আমীর শায়খুল ইসলাম আল্লামা আহমদ শফী চিটাগাঙের সমাবেশ ছাড়া কোথাও যাননি। লংজার্নিতে শারীরিক অসুস্থতা বৃদ্ধির আশঙ্কার পাশাপাশি নিরাপত্তার প্রশ্ন থাকায় বিভাগ/জেলার আয়োজক কমিটি আহমদ শফিকে উপস্থিত হওয়ার ব্যাপারে জোরালো আবদার করেননি।
আজকে বগুড়ায় সর্বশেষ সমাবেশের আয়োজক ছিলেন, বসুন্ধরা রিসার্চ সেন্টারের মহাপরিচালক, উত্তরাঞ্চল ভিত্তিক কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড তানজিমুল মাদারিসের চেয়ারম্যান মুফতি আব্দুর রহমান। আহমদ শফির সাথে আব্দুর রহমান সাহেবের বয়সের ব্যবধান সামান্য। হেফাজতে ইসলামে আল্লামা আহমদ শফির পর মুফতি আব্দুর রহমানের অবস্থানই সর্বাধিক দৃঢ়। মুফতি আব্দুর রহমান হেফাজতের আমীরকে বগুড়ায় নিয়ে আসতে হেলিকপ্টার ভাড়া করেন। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বিশাল জায়গা নিয়ে যিনি একটি ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছেন, তাঁর জন্য হেলিকপ্টার ভাড়া করা অসম্ভবের কিছু নয়। কিন্তু না জেনেই ফেসবুকে কিছু আবাল শফি সাহেবের টাকার উৎস নিয়ে প্রশ্ন করে পরিবেশকে দুর্গন্ধময় করে তুলেছে।
তিক্ত হলেও সত্য তো এই যে, আমাদের সমাজের অধিকাংশ সাধারণ মানুষের কওমি মাদরাসা সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। দেশে কওমি মাদরাসার সংখ্যা কতো? লোকজন কেমন? আয়ের উৎস কি? ইত্যাদি প্রশ্নে গাঁজাখুরি উত্তর দিয়ে অনেকেই পার পেতে চায়। দেশের ৬৪ হাজার গ্রামে ছোট বড় মিলিয়ে অন্তত ৪০ হাজার মাদরাসা রয়েছে। শুধু কওমি মাদরাসার ছাত্র সংখ্যাই ৩০ লক্ষাধিক। অথচ ব্লগ এবং ফেসবুকের জ্ঞানী সমাজের বক্তব্য পড়লে মনে হয় কওমি মাদরাসা সমাজচ্যুত একটি প্রতিষ্ঠান। নিজেদের দুর্বলতা ঢাকতে অন্যকে ছোট করে উপস্থাপনের প্রবণতা এদেশে নতুন নয়। সরকার আজ পর্যন্ত কওমি মাদরাসার সরাসরি বিরুদ্ধাচরণ করতে পারেনি, এটুকুই কওমি মাদরাসার ক্ষমতা বুঝানর জন্য যথেষ্ট। আল্লামা আহমদ শফি কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান। চিটাগাঙের হাটহাজারিতে যে মাদরাসার পরিচালক হিসেবে তিনি আছেন। সেখানকার ছাত্র সংখ্যাই ১০ হাজারের অধিক।
আহমদ শফি সাহেব হেলিকপ্টারে যাওয়ার টাকা কোথায় পেলেন এমন উদ্ভট প্রশ্ন সুস্থ মস্তিষ্কের কারো মাথায় যে আসবে না এটা বলা বাহুল্য।
হাস্যকর হলেও সত্য এদের জ্ঞানের অপ্রতুলতা দেখে লজ্জা হয়। আহমদ শফি আজকে প্রথমবারের মতো হেলিকপ্টারে ভ্রমণ করেননি। ইতিপূর্বে একাধিক প্রোগ্রামে তিনি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হেলিকপ্টারে গেছেন। এমনকি হেলিকপ্টার থাকা সত্ত্বেও সিলেট, ঢাকার একাধিক প্রোগ্রাম তিনি বাতিল করেছিলেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানতে পেরেছি।
একটা হেলিকপ্টারের ভাড়া সারাদিনে সর্বোচ্চ তিনলক্ষ টাকা। দেশের প্রতিটি অঞ্চলে কওমি মাদরাসায় পড়ুয়া একাধিক কোটিপতি ব্যবসায়ীর সন্ধান মিলবে। দেশের মানুষের আধ্যাত্মিক অভিভাবকের একদিনের নয়, পুরো মাসের হেলিকপ্টারের ভাড়া দেয়ার মানুষের অভাব নেই। অবাক হলেও সত্য,এই সামান্য জ্ঞানটুকু তথাকথিত আধুনিক শিক্ষিতদের নেই।
অতি জ্ঞান দেখাতে গিয়ে কেউ কেউ বলে বসেছে, হেলিকপ্টার বিধর্মীদের তৈরি। শফি সাহেবের তাওবা করা উচিত। ভাবতে অবাক লাগে, এমন নির্বোধ মানুষেরাও আমাদের সমাজে বাস করে।
আজকের প্রোগ্রামের দায়িত্বশীল মুফতি আব্দুর রহমান। ঢাকার বাসিন্দারা কষ্ট করে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় তাঁর সুবিশাল প্রতিষ্ঠান ভ্রমণ করলেই বুঝতে পারবেন টাকা তাঁর কাছে হাতের ময়লা। এখানে আহমদ শফি সাহেবের টাকার উৎস নিয়ে প্রশ্ন করাটা আবালীয় প্রলাপ।
জ্ঞানীগুণীরা বলেন, মূর্খদের প্রশ্ন করতে নেই। তবে ফ্রি উপদেশ দিতে তো আর দোষ নেই।
জীবনে হেলিকপ্টারে চড়েনি, এখন হিংসায় পিত্তি জ্বলে উঠেছে এমন ফকিরনীর বাচ্চাদের প্রতি আমার ফ্রি এডভাইস > একটু সময় ব্যয় করে কওমি মাদরাসার ইতিহাস, বর্তমান অবস্থান, কওমি পড়ুয়াদের ক্ষমতা, জনবল, সাধারণ মানুষের কাছে আহমদ শফির অবস্থান ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করো। মনে রেখো, ল্যাদানোর চাইতে খাবার গ্রহণ অতি উত্তম। যারা খাবার গ্রহণ না করে ল্যাদাতে আসে, তাদের শেষ পর্যন্ত চিকিৎসকের দ্বারস্থ হতে হয়। অতএব সময় থাকতে বিদ্যা অর্জন করো।
***এই বিষয়ে লেখার প্রয়োজন ছিলো। কেউ একজন লিখেছে। যদিও লেখাটি আক্রমণাত্মক। আজ ইস্টিশন ব্লগ থেকে লেখাটি অনুমতি ছাড়াই হুবহু কপি করে দিলাম। মূল লেখাটা এখানে দেখুন ফেসবুকে প্রকাশিত লেখাটা এখানে দেখুন