গতরাতে একজন আওয়ামী নেতার বাসায় সংবাদ দেখছি এমতাবস্থায় তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, হেফাজতে ইসলাম এসব কি পাগলামো শুরু করেছে? নারী পুরুষ একত্রে পড়তে পারবে না/কাজ করতে পারবে না এটা কিভাবে সম্ভব? একটা অরাজনৈতিক সংগঠন,কিন্তু ১৩ দফা দাবী তো রাজনৈতিক হয়ে গেলো?
আমি তাঁকে শ্রদ্ধা করি,তিনি বেশ স্নেহ করেন। তৎক্ষণাৎ এক-গ্লাস পানি খেয়ে তাঁকে বললাম, আপনি কোরআন,হাদীসে বিশ্বাস করেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন বললাম,কোরআন শরীফে পর্দা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর কোরআন,হাদীসের নির্দেশ কোনোক্রমেই পরিবর্তনশীল নয়। একথা সত্য দেশীয় সংস্কৃতি এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে,যে চাইলেও এমন আইন সরকার করতে পারবে না। তবে অনেক কিছু করা সরকারের পক্ষে সম্ভব। পৃথক মহিলা কলেজ,ভার্সিটি করতে পারে। এভাবে অন্তত কিছুটা হলেও বেহায়াপনা বন্ধ করা সম্ভব। আর অপারগ অবস্থায় ইসলাম মহিলাকে চাকরি করার অনুমতি পর্যন্ত দিয়েছে। কিন্তু অবশ্যই পর্দা রক্ষা করতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি অনেক যুক্তি দিলাম।
অতঃপর বললাম, কওমি মাদরাসার আলেম উলামা চিরজীবন ইসলামের সেবা করেন। তাঁদের ধ্যান-ধারনা চিন্তা ভাবনা সবকিছু ধর্মকে ঘিরে। তারা যদি ইসলামের বিধানের ব্যাপারে দাবী না করেন তবে তো মুসলমানদের দেশ বলে আমাদের যে পরিচিতি,সেটি কাগুজে হয়ে যাবে। তাঁরা নবীর উত্তরসূরি, তাঁরা তো এমন দাবী করবেনই। আর আপনি তো জানেন,কোনো কিছু দাবী করতে গেলে অনেক কিছু করা উচিত। যেহেতু স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে সরকার কাজগুলো করছে না,সুতরাং সরকার সবসময়ই হ্রাস করতে চেষ্টা করবে।
১৩ দফা দাবী দেয়া সরকারকে দেয়া হয়েছে। কয়েকটা দাবী পূরণ করা সম্ভব একথা তো আপনিও মানবেন। যেমন সংবিধানে বিসমিল্লাহ্, আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন,হেফাজতের নেতাকর্মীদের মুক্তি। প্রথমে সরকার কয়েকটা পূরণ করে দেখাক। দেখবেন উলামায়ে কেরাম কখনোই সরকারকে রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করবেন না। (এই কথাটা বললাম,কারণ ব্যাচারা নির্বাচন নিয়ে চিন্তায় আছেন)।
তারপরে বললাম,১৩ দফার একটাও রাজনৈতিক দাবী নয়। ইসলামকে সামনে রেখেই এই দাবী করা হয়েছে। আপনি বলুন একেকটা করে বলুন; দেখি কোনগুলো রাজনৈতিক মনে হলো? কিছুক্ষণ পর বললেন,আমি আগামীকাল তোমাকে প্রশ্ন করবো। এখন তো মনে করতে পারছি না।
অতঃপর জানতে চাইলাম,আমার কথাগুলো আপনি যদি ভালোভাবে বুঝে থাকেন তবে বলুন তো আলেমগণ কি ঠিক কাজ করছেন না? বললেন,হ্যাঁ, যতোটুকু বুঝলাম তাঁরা ঠিকই আছেন। তবে বিএনপি,জামায়াত যাওয়ায় বিষয়টা রাজনৈতিক সমাবেশের মতো হয়ে গেলো। তখন বললাম, আওয়ামীলীগের কেউ গেলে তো আর এভাবে বলতে পারতেন না। তারা গেলো না কেন এটা তাদের সমস্যা। তাছাড়া হেফাজতের নেতৃবৃন্দ তো কাউকে বক্তব্য দেয়ারও সুযোগ দেননি। তখন বললেন,তা অবশ্য ঠিক।
তখন বললাম, এখন দেখুন তো আপনি কতো ভুল ধারণা নিয়ে আছেন। আপনি জানেন আমি ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি (মাদরাসা সম্বন্ধে তেমন ধারণা নেই, সানা: ৩য় বর্ষ বললে বুঝেন না। তাই আলীম শ্রেণীর দিকে লক্ষ্য করে সহজে বুঝার জন্য এভাবে বলে থাকি), আমি যদি আপনাকে উত্তর দিয়ে সন্তুষ্ট করতে পারি,তবে বড় আলেমগনের কাছে যদি আপনি এসব প্রশ্ন নিয়ে যান,তবে বুঝতে পারবেন তাঁরা কতোটুকু বুঝে শুনে এই আন্দোলনে নেমেছেন। এখন আপনার কলিগরা (সহকর্মী) যদি আপনার মতো ধারণা করেন,তবে তাঁদের বুঝানো কিন্তু আপনার দায়িত্ব।
বেশ হেসে বললেন,অবশ্যই। এটা তো অবশ্যই করবো। আমি তার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে খুশি খুশি বাসার পথ ধরলাম। April 7, 2013