এমনিতেই মন-মেজাজ চরম খারাপ। ব্যস্ততার কারণে কম্পিউটারে বসা হয় না। মোবাইল দিয়ে কখনো কখনো ফেসবুকে লগইন করে দেখি কে কি লিখলো; মন্তব্য করার সুযোগ হয় না। এরমধ্যে উল্টাপাল্টা স্ট্যাটাস দেখলে কেমন লাগবে ভেবে দেখুন তো!
ব্লগার শাফিউর রহমান ফারাবীকে নিয়ে অনেকেই লেখছে ‘এক ফারাবী বন্দি জেলে,হাজার ফারাবী ঘরে ঘরে’! ফেসবুকে এসব লিখে কি করবেন! তার কাজের দিকে তাকিয়ে বলুন তো শুধু ফেসবুকের প্রতিবাদই কি তাঁর প্রাপ্য!
ফারাবীকে যারা ভালোভাবে চেনেন তাঁরা বলতে পারবেন ফারাবী বাংলাদেশে হাজার নয় একজনই। বাঙলা ব্লগগুলোতে নাস্তিকদের সাথে যারাই সামান্য কিছু লড়াই করেছে ফারাবী তাঁদের অন্যতম। নাস্তিক বিরোধী ব্লগারদের মধ্যে তাঁকে শ্রেষ্ঠ বললে খুব একটা ভুল হবে না। অন্যরা যেখানে নিজেকে বাঁচিয়ে কথা বলেছে সেখানে ফারাবী নিজের কথা না ভেবে ইসলামের পক্ষে কথা বলে গেছে। এতো গালিগালাজ সহ্য করে অন্য কোনো ব্লগার সম্ভবত কাজ করতে পারতো না। সরলতার মাত্রা বেশি ছিলো বলেই সে পেরেছে।
তবে ছেলেটার মধ্যে কিছু সমস্যাও ছিলো। সেসবের পিছনে অবশ্য তাঁর যুক্তি আছে। সবার কাছেই সে টাকা চেয়ে টেক্সট দিতো। এজন্য আমাদের মধ্যেই অনেকে তাঁকে পাগল বলতেন। শর্মি আমীন এবং দূর্বা জাহান নামের দুই নাস্তিককে প্রেমের অফার দিয়েও সে সমালোচিত হয়েছিলো। গালী না দিয়ে কেউ কখনো কি জানতে চেয়েছেন যে,ভাই আপনি এসব কাজ করছেন কেন? আমি যতোটুকু জেনেছি ফারাবী শুধুমাত্র নিজের কথাগুলো সবার কাছে পৌঁছে দিতেই এসব কাজ করেছে। সহজ ভাষায় আলোচনায় আসার জন্য নিজেকে বিতর্কিত করেছে। নাস্তিকদের সাথে আপনি কথা বলতে গেলে দেখবেন তারা আপনাকে পাত্তা দিচ্ছে না। আপনি কিছু বললে উত্তরের বদলে আপনার উপর মেঘের মতো গালিগালাজ বর্ষিত হবে। তাদের মনে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতেই ফারাবী এসব করতো। যদি কথাগুলো আপনার বিশ্বাস হয় তবে একবার ভেবে দেখুন একজন মানুষ দ্বীনের জন্য নিজেকে কতোটুকু বিলীন করেছে।
ভার্সিটিতে পড়া-লেখা করতো। ফলে দ্বীন সম্বন্ধে জানার জন্য বাঙলা ধর্মীয় বই ছিলো তাঁর একমাত্র সম্বল। বিভিন্ন বই থেকে খুঁজে খুঁজে নাস্তিকদের অপপ্রচারের জবাব দিতো। মহানবী (সা:) এর বহুবিবাহ নিয়ে নাস্তিকদের বিভিন্ন অভিযোগের উত্তর ফারাবী লিখেছিল। মুক্তিযুদ্ধে আলেমদের অংশগ্রহণ,তাবলীগ জামাত নিয়ে অপপ্রচার,ইসলামে হিল্লা বিয়ে সহ নাস্তিকদের ফালতু প্রশ্নগুলোর উত্তর ফারাবীই লিখেছিল। আপনি তাঁর পোষ্টগুলো পড়লে দেখবেন যেসব বিষয়ে নাস্তিকেরা কথা বলেছে সে তাঁর উত্তর দেয়ার চেষ্টা করেছে। তাঁর লেখার সবচেয়ে সুন্দর দিক হচ্ছে উলামায়ে দেওবন্দের বই থেকে যথাযথ রেফারেন্স সহ তাঁর লেখায় উল্লেখ করতো।
মাদরাসায় পড়েনি,পরিবারে কেউ আলেম না,অথচ একটা ছেলে দ্বীনের জন্য এতো কিছু করেছে,অথচ আমরা তাঁকে আপন ভাবতে পারছি না। পত্রিকায় কেউ বিবৃতি দিয়ে বলতে পারছি না, আবেগের বশবর্তী হয়ে ফারাবী যদি নাস্তিক রাজীবের জানাযার ইমামকে হত্যার হুমকি দেয়ার কারণে গ্রেফতার হতে পারে, তবে আসিফ মহিউদ্দিনের মতো কুলাঙ্গার নাস্তিক এবং তার সাঙ্গপাঙ্গরা মহানবী (সা:) কে গালি দেয়ার অপরাধে কেন গ্রেফতার হবে না? কেন ফারাবীকে মুক্তি দেয়া হবে না?
আমার তো মনে হয় আমাদের উলামাগণ পত্রিকা পড়ে শুধু এতোটুকুই জেনেছেন যে,ভার্সিটি পড়ুয়া একটা ছেলে জানাযার ইমামকে হত্যার হুমকি দেয়ার অপরাধে গ্রেফতার হয়েছে। কিন্তু জানতে পারেননি ভার্সিটিতে পড়েও ছেলেটি আঁকাবিরে দেওবন্দের অনুসরণ করতো। মাদরাসায় শিক্ষক-ছাত্রদের উপর যে দায়িত্ব ছিলো সেই দায়িত্ব স্বেচ্ছায় পালন করতো। যদি জানতেন তবে হয়তো নীরব থাকতেন না। February 27, 2013