একুরিয়ামের ভেতর ঘুরে বেড়ানো গোল্ড ফিস দেখে মুগ্ধ হয়নি,এমন মানুষ খুব একটা খুঁজে পাওয়া যাবে না। শিশু থেকে বৃদ্ধ,প্রত্যেক সুস্থ রুচির মানুষই একুরিয়াম দেখলে মুগ্ধ হয়। লাল/সোনালি রঙের ছোট মাছগুলোকে অবাক চোখে দেখে। একুরিয়ামে বসবাসকারী সেই রঙিন মাছ গোল্ড ফিস নামে পরিচিত। পৃথিবীতে গোল্ড ফিসের চাইতে দুর্বল স্মৃতিশক্তি আর কারো নেই। খুব সম্ভবত ২/৩ সেকেন্ডের বেশি সে কিছু মনে রাখতে পারে না। অনেকদিন পূর্বে একটা বইয়ে এমনটি পড়েছিলাম।
কৈশোরের কিছু স্মৃতি হঠাৎ মনের পাতায় উঁকি দেয়ায় গোল্ড ফিসের কথা মনে পড়ে গেলো। ভাবতে গিয়ে নিজের সাথে অনেক মিল খুঁজে পেলাম। সেলিব্রেটিদের সাক্ষাতকারে একটা কমন প্রশ্ন হচ্ছে আপনি কোন ৩ টি বস্তু সবসময় সাথে রাখেন? উত্তরে মোবাইল,আইপড,ওয়ালেটসহ নানারকম জিনিসের বর্ণনা আসে। আমাকে কেউ জিজ্ঞেস করবে না,তবুও বলে দেই আমি ওয়ারড্রবের চাবি,কলম,টিস্যু ছাড়া একেবারেই থাকতে পারি না।
তখন বয়স খুব বেশি হলে ১১/১২ হবে। শীতের রাতে সদ্য ব্রিটেন থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া সুয়েটার পরেছিলাম। ভেতরে একটা পকেট দেখে চাবি সেখানে রেখে দিলাম। হাত না দিলে বুঝার উপায় নেই যে,সেখানে কিছু রাখা আছে। পরদিন আর সুয়েটারটা পরা হয়নি। চাবি যে ভেতরে রেখেছি সেটাও মনে নেই। অস্থির হয়ে চাবির সন্ধান করলাম। ঘরের সবাই মিলে নানা জায়গায় খুজলো। কিন্তু লাভ হলো না। আমার মনেও একটি বার উদয় হলো না যে,গতরাতে পরা নতুন সুয়েটারের ভেতরের পকেটে চাবিটা সযত্নে বিশ্রাম নিচ্ছে। আম্মুর ড্রয়ারে বিকল্প একসেট চাবি ছিলো। বের করে আনলাম। তবুও মন খারাপ ভাব দূর হলো না। ব্রিফকেসের চাবি একটা ছিলো যে। কদিন পর আবার সুয়েটারটা পরলাম। কিন্তু কিছু ঠের পাইনি। বড় ভাইয়া হঠাৎ কাছে ডাকতেই গেলাম। তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে আছি। তিনি কি জানি খুঁজছেন। আমি আনমনা হয়ে একবার বাইরের পকেটে হাত দিচ্ছি আবার বের করছি। হঠাৎ ভেতরের পকেটে হাত দিলাম। কিছু একটা অনুভূত হলো। বের করতেই চমকে উঠলাম।
এখনো যে এমন হয় না এমন ভাবার কারন নেই। হাতে চাবি রেখে খোঁজ করি। পাঁশে কেউ থাকলে অস্থিরতা দেখে যখন জিজ্ঞেস করে,তখন বুঝতে পারি,হাতে রেখেই এতক্ষণ খুঁজছিলাম। মানিব্যাগ নিয়েও এমন হয়। তবে খুব যে বেশি এমন নয়। স্মৃতিগুলো দুঃখের হলেও খারাপ লাগছে না। আইনস্টাইনের ট্রেনের টিকেট বাড়িতে ফেলে যাওয়া কিংবা নিজের বাড়ির পথ হারিয়ে ফেলার গল্প পড়লে মনে হয় আমি আর এমন কি! February 22, 2013