(১)
মুহিবুল নামের সেই গরীব ছেলেটি। যাকে ছোট থেকেই দেখতাম,কিন্তু কখনো কথা হয়নি। কেন হয়নি? হয়তো ছেলেটি গরীব বলে কথা বলিনি!আজ আর নেই। নেই মানে? বয়স আর কতো হবে? একুশ কিংবা বাইশ। বড়বাপের কুলাঙ্গার ছেলেরা মেরে ফেলেছে!
যখন আমি ছোট ছিলাম তখন থেকেই দেখতাম ভীম কালো দুইটা ছেলে ঘরে ঘরে তরকারী নিয়ে এসে বিক্রি করতো। তাদের পিতা পাথর ভাঙ্গার কাজ করতো আর বড় বোন ঘরে হালকা সাইজের কম্বল বানিয়ে বাড়ী বাড়ী এসে বিক্রি করতো। আমাদের বাড়ীতেও আসতো।
মুহিবুলের ছোট ভাইয়ের নাম শহিদুল। মুহিবুল তরকারী বিক্রি করেই পরিবারের খরচ চালাতো। পরিবারে বাবা,মা,ছোট ভাই,বোন ছিল। ভোরে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতো আর রাত ১২-টার পর ফিরে আসতো। অভাবের সংসারে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করতে হতো। বেচে থাকার যুদ্ধ।
(২)
গতরাতে শহিদুলের সাথে তার বাল্যকালের বন্ধুদের ঝগড়া হয়। রাগের মাথায় ক আর তার অন্যান্য বন্ধুরা মিলে শহিদুলকে ধারালো ছুরি দিয়ে মাথায় আর হাতে কোপ মারে। লোকজন শহিদুলকে মেডিকেল নিয়ে যায়। প্রাথমিক চিকিৎসায় শহিদুলের জ্ঞান ফিরে আসে। মুহিবুল খবর পেয়ে শহিদুলকে দেখতে মেডিকেল যায়। সেখান থেকে বাসায় এসে ভাত খেয়ে বড় ভাই সুলভ দায়িত্ব পালনের নিমিত্তে ক এর কাছে ছুটে যায়। সে ক কে জিজ্ঞেস করে আমার ভাই তোমাদের সাথে চলাফেরা করতো। তাঁকে এভাবে না কুপিয়ে আমার কাছে বিচার দিলেই পারতে। এভাবে আমার ভাইকে মারলে কেন?প্রতিউত্তরে ক বলে আমার কাছে কৈফিয়ত চাস! তোর ভাইকে প্রাণে মারিনি। কিন্তু তুই প্রাণ নিয়ে যেতে পারবি না। একথা বলেই ক আর তার আপন বড় ভাই ম মিলে মুহিবুলকে বটি দিয়ে কোপায়। সাথে সাথেই মুহিবুল মারা যায়। লোকজন যদিও মেডিক্যাল নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তখন সব শেষ।
আজ আসরের নামাজে গেলাম। নামাজ শেষে জানাযা হলো। লাশ দেখলাম। আর দেখলাম লাশের সামনে দাঁড়িয়ে এক গরীব পিতা আর হাত ও মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়ে অসহায় এক ছোট ভাইয়ের আর্ত-চিৎকার। লক্ষ্য করলাম একটা ছেলে খুন হয়ে গেল। কিন্তু জানাযায় কমিশনার সহ এলাকার একজন মোড়লও নেই। গরীবের জানাযায় এরা আসবেই বা কেন! ধমক দিলেই তো এদের ভোট পাওয়া যায়। এদের কথা বলার অধিকার নেই। এরা যে গোলাম জাত! হায়,গরীবের রক্ত মারা গেলেও মূল্যহীন।
(৩)
গরীবের রক্তের নাকি মূল্য থাকে না। এরা চিরজীবন গরীব। মরলেও এদের নিয়ে কেউ পত্রিকায় শোক বার্তা পাঠায় না। আফসোস করে চোখের দু’ফুটো পানি ঝরায় না। সহমর্মিতা প্রকাশ করে পরিবারের পাশে গিয়ে দাঁড়ায় না।
হয়তো কোনো পত্রিকা মুহিবুলের মৃত্যুর সংবাদ কাভার করবে না। হয়তো পুলিশ লোক দেখানোর জন্য কয়েকবার এলাকায় টহল দিয়ে যাবে। কিন্তু …………..
খুনি কে এলাকার সবাই জানে। মুহিবুলের মৃত্যুর চব্বিশ ঘণ্টাও পার হয়নি। লোকজন বলাবলি শুরু করছে অবৈধ টাকায় ভেসে যাবে মুহিবুলের রক্ত। খুনির নাকি কিছুই হবে না। ছিঃ! এ কেমন সমাজ। থুথু ফেলতেও ঘৃণা করছে।