৮ অক্টোবর ২০১৪ বুধবার জরুরী একটি কাজে আমরা ৯ জন চট্টগ্রামে ছিলাম। দুপুরের দিকে কাজ সম্পন্ন হয়ে গেলো। যেহেতু রাতে আমাদের সিলেটের গাড়ী। হাতে বেশ কিছু সময় পাওয়া গেলো।
জোহরের নামাজ পড়ে খাওয়া দাওয়া শেষে ফয়েজ লেক দেখতে গেলাম। বেশ কিছুক্ষণ ফয়েজ লেকে ঘুরে আসরের নামাজের উদ্দেশ্যে মোগল ঐতিহ্যের অন্যতম নিদর্শন আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের পথে যাত্রা করলাম।
আমরা যখন আন্দরকিল্লায় পৌঁছুলাম ততোক্ষণে নামাজ শেষ। সবাই বিচ্ছিন্নভাবে নামাজ আদায় করে বিশাল বারান্দায় বসে রইলাম। মাগরিবের সময় হলে নামাজ আদায় করলাম। ইমাম সাহেবের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করলাম। এরপর আবার এসে বারান্দায় বসলাম।
একজন লোক আমাদের সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করলো। যেমন লম্বা তেমন স্বাস্থ্য। রঙও ধবধবে সাদা। গলায় সবুজ রুমাল জড়ানো। আমাদের এক সাথী বললেন; লোকটি মনে হয় পাঠান! আরেকজন মজা করে বললেন> আ ফাত্তানুন আনতা আম বাকিস্তানি? লোকটিকে একাকী হাঁটছিল।
কিছুক্ষণ পর সঙ্গীরা চা পানের উদ্দেশ্যে বাইরে গেলো। একজন সঙ্গী অত্যধিক ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। আমি ইচ্ছে করেই তার পাঁশে বসে রইলাম। সবাই চলে গেলে সেই লোকটি এসে আমার কাছে বসলো আর সালাম করলো। আমি উত্তর দিলাম। জানতে চাইলো বাড়ী কোথায়? বললাম; সিলেট। আমিও লোকটির পরিচয় জানতে চাইলাম। বললো; আন্দরকিল্লা থেকে দশ টাকা বাস ভাড়া দূরত্বে বাড়ী।
এরপর বললো; কিছু কথা বলতে পারি? আমি একা বসে ছিলাম। কথা বলার কাউকে পেয়ে ভালো লাগছিলো। বললাম; অবশ্যই। লোকটি যা বললো তার সারসংক্ষেপ হচ্ছে; সবসময় পাগড়ী পড়বেন। লম্বা পাঞ্জাবী পড়বেন। কিছু দোয়া উল্লেখ করে নিয়মিত পড়ার কথা বললো। সুরা জিন সবচেয়ে বেশি তিলাওয়াত করতে বললো। এতো সুরা থাকতে সুরা জিন সবচেয়ে বেশি কেন জানতে চাইলে বললো; এতে করে জিন আমার অধীনস্থ হয়ে যাবে। সেই সাথে রাসূল (সা:) –এর সাথেও নাকি সাক্ষাত হবে! মাজার জিয়ারত করতে বললো। আবার মাজারে গিয়ে সেজদা না করতে নিষেধ করলো। আমি বললাম; সিলেট শাহজালাল মাজারের কাছে আমাদের বাসা। তখন মাজারের মোতাওয়াল্লির নাম্বার আছে কি না জানতে চাইলো। না করলাম।
কথাবার্তা শুনে আলেম মনে হলেও আরবি উচ্চারণ শুনে মনে হচ্ছিলো আলেম নয়। সবচেয়ে অবাক হলাম যখন জানতে চাইলাম; আপনি কি কোনো সংগঠনের সাথে জড়িত? বললো; মসজিদে দুনিয়াবি কথা বললে আল্লাহ তায়ালা লা’নত দেন। সুতরাং আমরা শুধু দ্বীনী কথাবার্তা বলি। আরও বললো ; আপনার সাথে কথা বলে ভালো লাগছে। যাক, কথাবার্তা চলাকালীন আমাদের এক সাথী চলে আসলেন। তিনি মোসাফাহার জন্য হাত বাড়িয়ে দিতেই লোকটি বললো; কিছু মনে করবেন না। আমি আপনার সাথে মোসাফাহা করতে পারবো না। কারণ আপনার সাথে জিনের প্রভাব আছে। এভাবে আরও কয়েক মিনিট কথা বলার পর অন্যান্য সাথীরা চলে আসলে লোকটি উঠে চলে গেলো।
জানি না লোকটি কে? কি করে? কিছু কথা তো ভালো বলেছে। কিন্তু নিজের সম্পর্কে বলতে চাইলো না কেন! কিছু মানুষ সত্যিই বেশ অদ্ভুত হয়। ফেসবুকে প্রকাশিত