ভূমিকা> ফারিয়া নামের মেয়েটির যে চিত্র বর্ণনা করলাম, আমাদের সমাজে এমন অনেক ফারিয়া আর তার পরিবার আছে, যারা একই সাথে ধার্মিক আবার অধার্মিক। নিজেকে মুসলমান তো পরিচয় দেয়। কিন্তু ধর্মীয় বিধি বিধান পালন করা থেকে যোজন যোজন দূরত্বে অবস্থান করে। হক-পন্থী উলামায়ে কেরামের সাথে তাদের সম্পর্ক হয় না। ধর্ম তাদের কাছে সমাজের বিভিন্ন উৎসবের মতো পালিত হয়।
এদের নিয়ে আমাদের কোনো ভাবনা নেই। তাদের কাছে আমাদেরও কোনো অবস্থান নেই। সবাই দায়িত্বহীন। অথচ অনস্বীকার্য যে, ধর্মের অধিক ক্ষতি এদের দ্বারা হচ্ছে।
============================================
ডাক্তার বাবা আর শিক্ষিকা মায়ের একমাত্র কন্যা ফারিয়া। একমাত্র কন্যা হিসেবে বাবা-মা আদর সোহাগের কমতি করেন না। মেয়েও মা-বাবা বলতে পাগল। দেশের নামকরা ইউনিভার্সিটির ছাত্রী ফারিয়া বেশ আধুনিক হলেও মা-বাবা কিছুটা হলেও ধর্ম মেনে চলতে চেষ্টা করেন। ইতিমধ্যে স্বামী স্ত্রী হজ্জও করে এসেছেন। ধর্মের অনুসরণ করতে গিয়ে তারা বিভিন্ন বইয়ের আশ্রয় নেন। নিজেদের মতো করে বিধি বিধান আদায় করেন।
ফারিয়া যখন মফঃস্বল এলাকা থেকে প্রথম ঢাকায় পড়তে আসে, মা-বাবা খুশী মনেই মেয়েকে সব ব্যবস্থা করে দেন। মেয়ে ঢাকায় এসে মহিলা হোস্টেলে থাকতে শুরু করে। পড়াশুনার পাশাপাশি ভার্সিটির বন্ধুদের সাথে হই হুল্লোড় আড্ডায় সময়ের কাঁটা ঘুরতে থাকে।
ফারিয়া জন্মগত মুসলমান হলেও মা-বাবা কখনো তাকে নামাজের প্রতি উৎসাহিত করেননি। পর্দার গুরুত্ব প্রদান করেননি। ফলে তার মনোজগতে ধর্মের অবস্থান শুধুমাত্র বিশ্বাসের মাঝে সীমাবদ্ধ। ধর্মের প্রতি তার আলাদা আগ্রহ নেই। ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে নেই গর্ববোধ।
আধুনিক ফারিয়া ভার্সিটির পরিবেশে আরও আধুনিক হয়ে উঠে। কিছু ধর্ম বিদ্বেষীর সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি হয়। তাদের প্রভাবে নিজেকে মুসলমান পরিচয় দিলেও বলতে শুরু করে, “ধর্ম যার যার; রাষ্ট্র সবার।” “রাষ্ট্রের আবার ধর্ম কিসের।” ব্লগ/ফেসবুকের প্রোফাইলে লিখে রাখে “অতি ধার্মিকরা দূরত্ব বজায় রাখুন।” নারী অধিকার নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আলেম উলামাদের গালি দেয়।
একসময় এক নাস্তিক সহপাঠীর সাথে প্রেমের সম্পর্কও গড়ে ওঠে। মা-বাবার সাথে সেই ছেলেকে পরিচয় করিয়ে দেয়। মা-বাবা সেই ছেলেকে খুশী মনে গ্রহণ করেন। তাদের ভাবনাও এমন, ছেলে নাস্তিক হোক আর যাই হোক, মানুষ তো। আর “সবার উপরে মানুষ সত্য তার উপরে নাই।” আমাদের বিশ্বাস তো আমাদের কাছে। ছেলে নাস্তিক হলে আমাদের তো ক্ষতি নেই।
সেই মা বাবা আজও নামাজ পড়েন। রোজা রাখেন। মেয়ের নাস্তিক প্রেমিককে দাওয়াত দিয়ে বাসায় আপ্যায়ন করেন। মেয়ের বেপরোয়া চলাফেরাকে নিঃশব্দে মেনে নেন। ধর্মের এক নতুন রূপ তারা নিজেদের জন্য বানিয়ে নিয়েছেন। কে তাদের ধর্মের সঠিক রূপ দেখাবে???
>আংশিক বাস্তবতার আলোকে লেখাটি রচিত হয়েছে। ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ফেসবুকে প্রকাশিত