জ্ঞানের জগতে হযরত থানভী (রহঃ) –এর মর্যাদা।
হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহঃ) দারুল উলূম দেওবন্দের সৌভাগ্যবান সন্তান ছিলেন। আল্লাহ তায়ালা তাঁকে জ্ঞানের জগতে এতো মর্যাদা দান করেছিলেন যে, তিনি একই সাথে মুফাসসির, ফক্বীহ এবং সূফী ছিলেন। দ্বীনের প্রতিটি স্তরে আল্লাহ তায়ালা তাঁকে সম্মানিত করেছেন।
ছাত্র থাকাবস্থায়ই তাঁর মাঝে ভবিষ্যতের হাকীমুল উম্মতের লক্ষণ স্পষ্ট হয় উঠে। পড়ালেখা সমাপ্তির পর দারুল উলূম কর্তৃপক্ষ ছাত্রদের মাঝে পাগড়ি প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়। তখন থানভী (রহঃ) কিছু সহপাঠীকে নিয়ে শায়খুল হিন্দ (রহঃ) –এর কাছে গিয়ে বলেন; হযরত! আমাদের একটি দাবী আছে। আপনি পূর্ণ করে দিন। শায়খুল হিন্দ বললেন; তোমরা কি চাও?
থানভী (রহঃ) বললেন; হযরত! আমরা তো পড়ালেখা শেষ করেছি। জানতে পারলাম যে, দারুল উলূম কর্তৃপক্ষ এজন্য দস্তারবন্দীর আয়োজন করেছে। আমরা আপনার কাছে বলতে এসেছি যে, আমরা দস্তার পাওয়ার উপযুক্ত নই। যদি আমাদের পাগড়ি প্রদান করা হয়, তবে দারুল উলূমের অসম্মান হবে। মানুষ বলবে; দারুল উলূম এই অযোগ্য ছেলেদের পাগড়ি প্রদান করেছে!
একথা শুনতেই শায়খুল হিন্দ তেজোদৃপ্ত হয়ে উঠলেন এবং বললেন; আশরাফ আলী! তুমি তোমার শিক্ষকদের কাছ থাকো বলে তোমার নিজের ব্যাপারে ধারণা নেই। যখন আমরা থাকবো না, তখন তুমিই তো হবে। আর বাস্তবিকই এমনটি হয়েছিলো।
এক ব্যক্তি হযরত থানভী (রহঃ) কে নিয়ে পিএইচডি করেন। তখন গবেষণার প্রয়োজনে অনুসন্ধান করে তিনি থানভী (রহঃ) –এর স্বহস্তে অথবা নির্দেশনায় লিখিত প্রায় ২৮০০ কিতাবের নাম লিপিবদ্ধ করেন।
হযরত কাশ্মীরী (রহঃ) –এর অতুলনীয় স্মরণশক্তি।
হযরত মাওলানা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী (রহঃ) কে আল্লাহ তায়ালা এতো অতুলনীয় স্মরণ ক্ষমতা দান করেছিলেন যে, এর উপমা বর্তমান সময়ে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না।
কাদিয়ানীদের বিপক্ষে ভাগলপুর আদালতে মামলা চলাকালীন কাদিয়ানীরা তাদের দাবীর সত্যতার পক্ষে একটি পুস্তক আদালতে পেশ করে, যা তাদের মতবাদকে প্রমাণিত করে। ব্রিটিশ জজ সবকিছু দেখে হযরত কাশ্মীরী (রহঃ) কে বলে, তারা তো তাদের দাবীর প্রমাণ উপস্থাপন করেছে।
তখন কাশ্মীরী (রহঃ) বললেন; বইটি আমাকে একটু দেখান। তিনি বইটি দেখলেন এবং বললেন; এরা তো প্রতারণা করছে। কিন্তু আমি প্রতারিত হবো না। আমি আজ থেকে ২৭ বছর পূর্বে বইটি দেখেছি এবং আজও আমার আলোচ্য অংশটুকু মনে আছে। এরা তো এক লাইন বিলুপ্ত করে প্রমাণ উপস্থাপন করেছে। সুতরাং এই পুস্তকের আরেকটি কপি সামনে আনা হোক।
অতঃপর দ্বিতীয় কপি আনা হলে তাতে কাশ্মীরী (রহঃ) –এর কথার সত্যতা পাওয়া গেলো। উক্ত পুস্তক মূলত মুসলমানদের পক্ষে ছিলো। ফলে কাদিয়ানীদের মুখোশ উন্মোচিত হয়ে গেলো। তখন মানুষ আশ্চর্য হয়ে গেলো এই ভেবে যে, ২৭ বছর পূর্বে দেখা কিতাবের নির্দিষ্ট অংশ হুবহু এতোদিন পরেও কিভাবে মনে রইলো।
হিন্দুদের ইসলাম গ্রহণ।
কিছু হিন্দু তাঁর হাতে ইসলাম গ্রহণ করলে মানুষ তাঁদের জিজ্ঞেস করলো; তোমরা মুসলমান হয়ে গেলে কেন? তাঁরা তখন হযরত কাশ্মীরী (রহঃ) –এর দিকে ইঙ্গিত করে বললো; এই চেহারা কোনো মিথ্যাবাদীর হতে পারে না। আমরা তাঁর চেহারা দেখে ইসলাম গ্রহণ করেছি।
*আকাবিরে দেওবন্দ> ১) >>>পীর যুলফিকার আহমদ নকশবন্দী হাফিজাহুল্লাহ’র বয়ান হতে অনূদিত। ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ফেসবুকে প্রকাশিত