শাইখের সাথে জড়িয়ে আছে অনেকগুলো স্মৃতি। ছোটবেলা থেকেই তো দেখে আসছি। দেখা হলেই কেমন আছি? জানতে চাইতেন। পরিচিত কাউকে পেলেও খোঁজখবর নিতেন।
সর্বশেষ ০৩ আগস্ট দরগাহ গেইটের পাশে অবস্থিত নুরজাহান হসপিটালে দেখতে গেলাম। বেশকদিন ধরে দেখতে যাবো যাবো করে যাওয়া হচ্ছিলো না। রুমে প্রবেশ করে মোসাফাহা করলাম।
সেদিন বেশ জ্বর এসেছিলো। চিনতে না পেরে জিজ্ঞেস করলেন; আপনি কোন মাদরাসা থেকে আসছেন? পরিচয় দিলাম। হাত ধরে রইলেন। হাত ধরা অবস্থায় ছেলেকে ডাক দিয়ে বললেন; মাসুমকে ২০০ টাকা দাও। আমি তো লজ্জায় শেষ। বারবার না করতে লাগলাম। আম্মুর কথা জিজ্ঞেস করলেন। পড়ালেখার খবর নিলেন। সর্বশেষ শিক্ষাবর্ষে দরগাহ মাদরাসায় বোর্ড কর্তৃক পরিদর্শনে এসেছিলেন সেসব কথা বললেন। আমি বললাম, মনে আছে।
কিছুক্ষণ পর হাত ছাড়লে আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম। আবার ছেলেকে বললেন; টাকা দিয়েছ? তখন একপ্রকার অপারগ হয়ে টাকাটা নিলাম। কি খাবেন না খাবেন ভেবে আমি কিছু নিয়ে যাইনি। আমারও হাদিয়া দেয়ার ইচ্ছা ছিলো। তাঁর হাতে দিলে গ্রহণ করবেন না ভেবে ছেলের হাতে ৫০০ টাকা হাদিয়া দিলাম। নাস্তা করতে বললেন। সময় স্বল্পতার অজুহাত দেখালে আস্ত এক-প্যাকেট কেক বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্য দিয়ে দিলেন। চলে আসলাম।
এরপর আর দেখা হয়নি। আজ দেখলাম। কয়েক সেকেন্ড মাত্র। এরচেয়ে বেশি দেখতে পারিনি। চোখ সাড়া দেয়নি। পুরনো স্মৃতিগুলো বারবার ভেসে উঠছিলো। বিভিন্ন প্রসঙ্গে অনেক অজানা তথ্য তাঁর কাছ থেকে জেনেছিলাম। দেখা হলেই কিছু না কিছু জানা হতো।
আল্লাহ ওয়ালার বাস্তব প্রতিচ্ছবি ছিলেন। টাকা পয়সার প্রতি আকর্ষণ ছিলো না। দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্ন মাদরাসায় শায়খুল হাদিসের দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহের মতো সম্পদও সঞ্চয় করেননি। সাদাসিধে পোশাক, স্নেহপূর্ণ কথাবার্তা সবকিছুই মনে রাখার মতো।
দীর্ঘদিন আযাদ দ্বীনী এদারায়ে তালীম বাংলাদেশের নির্বাহী সভাপতি, সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সর্বশেষ বোর্ডের উপদেষ্টা পদে ছিলেন। সুনামগঞ্জ জেলার পাগলা গ্রামে জন্ম নিলেও ইলম আমল ও আধ্যাত্মিক সাধনার বলে বৃহত্তর সিলেট তথা সারা দেশের আলেম উলামার মুরব্বীর কাতারে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছিলেন।
সত্যটা কতোটুকু জানি না। কয়েকমাস পূর্বে শাইখের ঘনিষ্ঠ একজন কথা প্রসঙ্গে আমায় জানিয়েছিলেন; পাগলা কলেজ মাঠ এলাকার সবচেয়ে বড় মাঠ হিসেবে পরিচিত। শাইখ (রহঃ) কয়েকজনকে ডেকে বলেছেন, “আমি মৃত্যুবরণ করলে কলেজ মাঠে তোমরা আমার জানাযা পড়ো না। আমার জানাযা মাদরাসা মাঠে যেন হয়”। উপস্থিত অনেকেই তখন বলেন, হুজুর! মাদরাসা মাঠ তো ছোট। কলেজ মাঠে পড়লে সমস্যা কি! তখন জানিয়েছিলেন, কলেজে ছেলে মেয়েরা বেপর্দা অবস্থায় একত্রে চলাফেরা করে। কলেজ মাঠে পড়া মাকরুহ। ছোট হোক, তবুও মাদরাসা মাঠে যেন জানাযা হয়।
আজ ১৫ সেপ্টেম্বর আপন শাইখের মতো সোমবার দুপুরে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। إِنَّا لِلّهِ وَإِنَّـا إِلَيْهِ رَاجِعونَ >আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল ১০ ঘটিকায় পাগলায় তাঁর জানাযা অনুষ্ঠিত হবে। যতোটুকু খবর নিয়েছি, মাদরাসা মাঠেই জানাযা হবে। সেই সাথে দীর্ঘ এক অধ্যায়ের সমাপ্তি হবে। আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাকে জান্নাতের সুউচ্চ আসনে সমাসীন করুন। ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ফেসবুকে প্রকাশিত