(১)
হাফিজ ফায়যুর রহমান> লিডিং ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের ছাত্র, মুক্তস্বরের সম্পাদক, একজন হাফিজে কুরআন, ক্বওমী মাদরাসার সাবেক ছাত্র; বিভিন্ন পরিচয়ে অনেকের কাছে তিনি পরিচিত। আমি তাঁকে শুধু ফায়যুর ভাই হিসেবে চিনি।
প্রায় ৭/৮ বছর পূর্বে মুক্তস্বর সাংস্কৃতিক ফোরাম কর্তৃক আয়োজিত ইসলামিক কনসার্টে প্রথম দেখা। এরপর কখনো কখনো রাস্তা-ঘাটে সাক্ষাত হতো। সালাম আদান প্রদান আর কেমন আছেন টাইপের কথাবার্তার বেশি খুব একটা আলাপ হয়নি।
২/৩ মাস পূর্বে মাদরাসা ছুটির পর সহপাঠী তোফায়েল আহমদ ও আমি দরগাহ থেকে আম্বরখানার পথে হাঁটছিলাম। আচমকা ফায়যুর ভাই’র সাথে দেখা হয়ে গেলো। আমার ধারণা, সেদিন রাস্তায় দাঁড়িয়ে তাঁর সাথে সবচেয়ে দীর্ঘক্ষণ আলাপ হয়েছিলো। আমার মোবাইল নাম্বার তিনি নিয়েছিলেন। আমি তাঁর ০১৭৭… নাম্বার “ফায়জুর রহমান, মুক্তস্বর সম্পাদক” নামে আমার ফোনে লিখে রেখেছিলাম।
(২)
২০১৩ সালের ১৫ জুন অর্থমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীকে হুমকি দেয়ার অপরাধে প্রথমবার ফায়যুর রাহমানকে গোয়েন্দা পুলিশ আটক করেছিলো। প্রায় ৬ মাস জেলে থাকার পর সেবার তিনি মুক্তি পেয়েছিলেন। বিগত ০৬ জুন ২০১৪ আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে হত্যার হুমকির অভিযোগে পুনরায় ফায়যুর রহমানকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
ফায়জুর রহমানকে যারা দেখেছেন, তারা জানেন, তিনি নির্বোধ প্রকৃতির মানুষ নন যে, প্রকাশ্যে অর্থমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীকে হত্যার হুমকি প্রদান করবেন। ফায়যুর রহমান যে ষড়যন্ত্রের শিকার, এই কথাটি প্রমাণ করতে তাঁর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগই যথেষ্ট। সিম ক্লোনিং তো আমাদের দেশে একেবারে বিরল কিছু নয়! এছাড়া www.grameenphone.com/ এ রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে ওয়েবসাইট ব্যবহার করে নিজ নাম্বার থেকে যে কাউকে টেক্সট দেয়ার ব্যবস্থাও আছে। সুতরাং পরিচিত কেউ তাঁর নাম্বার দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে তাঁকে ফাঁসাতে পারে।
(৩)
আলিয়া ৩য় বর্ষে “আল-হাদিয়্যাতুল মারযিয়্যাহ” কিতাবে পড়েছিলাম; “সত্য বলো! যদিও তিক্ত হয় না কেন”। নিরীহ নিপীড়িত ফায়যুর রহমানকে নিয়ে অনলাইনে আমাদের আলাপনের ভঙ্গি দেখে বেশ অবাক হয়েছি। অনলাইনে “আমরা আমরাইতো” বলে একটি বাক্য বেশ ব্যবহৃত হয়। সবকিছু দেখে আমার ধারণা, “আমরা আমরাইতো” কথাটা আমাদের অঙ্গনের জন্য কোনোভাবেই মানানসই নয়।
অভিযোগ উঠেছে আবদুল হক ভাই ফায়যুর ভাইকে ফাঁসিয়েছেন। এই প্রসঙ্গে অপহরণসহ আরও কিছু তথ্য পত্রিকায় চলে এসেছে, যা আবদুল হক ও ফায়যুর রহমান কারো জন্য শোভনীয় নয়। মানবজমিন পড়তে গিয়ে আমার কাছে মনে হয়েছে, এই বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া উচিৎ ছিলো।
আবদুল হকের সাথে ফায়যুর রহমানের শত্রুতা থাকতেই পারে। কিন্তু এতে নিশ্চিতভাবে প্রমাণ হয় না আবদুল হকই ফায়যুর রহমানকে জেলে পাঠিয়েছেন।
সুষ্ঠু তদন্তের পর বেরিয়ে আসবে প্রকৃত সত্য। তখন হয়তো জানা যাবে (১) আবদুল হক সত্যিই ফায়যুর রহমানকে ফাঁসিয়েছেন। (২) আবদুল হকের কোনো শত্রু ফায়যুর রহমানকে জেলে পাঠিয়ে আবদুল হককে বিপদে ফেলতে চাইছে। (৩) হয়তো এমন কেউ ফায়যুর রহমানকে ফাঁসিয়েছে, যার সম্পর্কে কেউ ধারণা করছে না।
খুঁজলে আরো বিভিন্ন দিক বেরিয়ে আসবে। খুঁজতে গেলে সময় লাগবে। এছাড়া প্রমাণ ছাড়া কাউকে দায়ী করাটা অনৈতিকও। সুতরাং এসব খোঁজাখুঁজি বাদ দিয়ে আপাতত সবাই মিলে ফায়যুর রহমানকে মুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া কি যায় না! ফায়যুর রহমান তো আমাদেরই ভাই।
(৪)
যতোটুকু জানি পারিবারিকভাবে ফায়যুর রহমান খুব একটা সচ্ছল নন। আর পরিবারের সামর্থ্য থাকুক কিংবা না থাকুক, একজন প্রতিভাবান নিরীহ তরুণকে রক্ষার দায়িত্ব তাঁর পরিচিতজনদের উপরই বর্তায়।
নোমান বিন আরমান ভাইয়ের একটি স্ট্যাটাস এবং তাতে সংগঠিত বিতর্ক অনেক কিছু স্পষ্ট করে দিয়েছে। সব বিভেদ ভুলে গিয়ে মুক্তস্বর পরিবার, সম্মিলিত লেখক ফোরাম, ফায়যুর রহমানের হিতাকাঙ্ক্ষী সবাই মিলে কি ফায়যুর রহমানের মুক্তির উদ্যোগ নেয়া যায় না? আজ ফায়যুর রহমান ষড়যন্ত্রের শিকার। আগামীকাল আরেকজন হবেন না কে বলতে পারে!!!
ফায়যুর রহমানের সাথে কার সম্পর্ক কতো গভীর, কে তাঁর প্রকৃত হিতাকাঙ্ক্ষী ইত্যাদি বিষয় নিয়ে ফেসবুকে যতোই আলোচনা সমালোচনা করা হোক, নিরীহ ফায়যুর রহমানের তাতে কোনো উপকার হবে না। একজন নিরীহ মানুষের মুক্তির স্বার্থে সব বিরোধ বিতর্ক ফেলে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ সময়ের দাবী। ফায়যুর রহমানের মুক্তির পথে আমার দ্বারা যদি কোনো কাজ সম্ভবপর হয় আমি তা করতে তৈরি। আপনি তৈরি তো???
>লেখাটি আমার নিজস্ব ভাবনাপ্রসূত। কেউ কষ্ট পেলে ক্ষমা করবেন। ফেসবুকে প্রকাশিত