মাদ্রাসার ছাত্ররা ছোটবেলা থেকেই যেহেতু ইংরেজির দিকে তেমন মনযোগী হয় না কিংবা মনোযোগ দেয়ার সুযোগ পায় না। আর বাস্তবতা চিন্তা করলে বেশ ভালোভাবেই অনুধাবন করা যায় যে,আরবী ভাষার মত ইংরেজি ভাষায় মনোযোগ দেয়া তাদের পক্ষে সম্ভবও নয়।
সারফ/নাহু শিখতেই তাদের জীবন থেকে হারিয়ে যায় মূল্যবান পাঁচ পাঁচটি বছর। মুতাওয়াসসিতাহ ১ম বর্ষ থেকে শুরু করে আলিয়া ১ম বর্ষ পর্যন্ত একই ধারাবাহিকতায় চলতে থাকে তাদের জীবন।
কজন সঠিকভাবে শিখতে পারে সে প্রশ্নে আমি যাচ্ছি না। তবে সারফ/নাহু শিখার পাশাপাশি ইংরেজি ভাষার গ্রামার শিখে ভাষা শিখাটা ৯৫%৯৫ ছাত্রের পক্ষেই অসম্ভব। যেখানে টানা দশ বছর পড়া-লেখা করে স্কুলের বেশিরভাগ ছাত্রই ইংরেজি শিখতে ব্যর্থ হচ্ছে,সেখানে মাদ্রাসার ছাত্ররা প্রচলিত নিয়মে কতোটুকু সফল হবে সেটাও ভাবনার বিষয়। তবে আমি আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি যে,মাদ্রাসার ছাত্রদের পক্ষে ইংরেজি শিখা খুব ভালোভাবেই সম্ভব।
বর্তমানে বাংলাদেশের প্রচলিত ইংরেজি শিক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে। ক্লাস 10 পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে ইংরেজি পড়ে,এমনকি কলেজ/ভার্সিটি শেষ করেও বেশিরভাগ ছাত্র ইংরেজি বলতে পারে না।
সব ছাত্রই যে অমনোযোগী এমনটি না। তবে গ্রামারের বেড়াজালে পড়ে ছাত্ররা চাইলেও ভালোভাবে ইংরেজি শিখতে পারে না। এমন অনেক ছাত্র-ছাত্রী আছে,যারা হয়তো মেট্রিক/ইন্টারে A+ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। কিন্তু ভালো করে ইংরেজি বলতে পারে না।
FM মেথডে আমি প্রায় চার মাস ছিলাম। শুনতে অবাক লাগলেও বাস্তবতা হল,বেসিক ইংরেজি শিখতে আমার সাথে অনেক ভার্সিটি পড়ুয়া ছিল। কলেজের ছাত্রতো অগণিত ছিলই। S@ifur’s-এ ও কয়েকটি ক্লাস করেছিলাম। উভয় মেথডই প্রায় সমান।
কাজেই মাদ্রাসার নিজস্ব উদ্যোগে হোক কিংবা বোর্ডের পক্ষ থেকে যদি ছাত্রদের ভবিষ্যতের দিকে লক্ষ করে এখন থেকেই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়,তবে ভবিষ্যতে এর সুফল অবশ্যই পাওয়া যাবে ইনশাল্লাহ।
FM মেথড কিংবা S@ifur’s-এর মত প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান বর্তমানে আমাদের দেশে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। নিঃসন্দেহে বলা যায় যে,শুধু প্রচার প্রচারণার মাধ্যমেই নয়,বরং অনেক মানুষের ভালোভাবে ইংরেজি শিখার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে,আমাদের জন্য গ্রামার বিহীন ভাষা শিখাই হচ্ছে সফলতার একমাত্র পথ।
দীর্ঘদিন গবেষণার মাধ্যমে তাঁরা এমনভাবে তাদের মেথডকে এমনভাবে বিন্যস্ত করেছে যে,কেউ একবার গেলেই বুঝতে পারবেন ইংরেজি শেখা কত সহজ।
দেশের মোটামোটি বিখ্যাত একটা মাদ্রাসার এক মুহাদ্দিস সাহেব আক্ষেপ করে একবার আমায় বলেছিলেন যে,আমাদের মাদ্রাসায় ছাত্রদের জন্য ভালো ইংরেজি শিক্ষক প্রয়োজন। কিন্তু উচ্চশিক্ষিত কেউই মাদ্রাসায় যেতে চায় না। আমি বললাম : ক্লাস 7/8 এর শিশুদের জন্য উচ্চশিক্ষিতের কি প্রয়োজন? তিনি বলেছিলেন : আমাদের মুহতামিম সাহেবের ইচ্ছা মাদ্রাসার ছাত্ররা ভালোভাবে ইংরেজি ভাষা শিখবে। মুহাদ্দিস সাহেবের কথা শুনে কিছুটা হেসেছিলাম,কারণ,মুতাওয়াসসিতাহ ৩য় বর্ষের পর যেখানে ইংরেজি কোন বই মাদ্রাসার সিলেবাসে নেই,সেখানে ছাত্রদের ইংরেজি শিখানোর আশা করাটা কি বোকামি হয়ে যাচ্ছে না।
মুহাদ্দিস সাহেবের সাথে আমার সম্পর্ক ভালো ছিল। কাজেই সাহস করে বললাম : আপনাদের মুহতামিম সাহেবের যেহেতু ইচ্ছা আছে। আপনি সাহস করে একটা প্রস্তাব দিয়ে দেখতে পারেন।
FM মেথড কিংবা S@ifur’s-এর সাথে চুক্তি করে তাদের সিলেবাস এবং শিক্ষক নিয়ে যান। প্রাথমিক অবস্থায় একজন শিক্ষক এবং বাছাই করা কিছু ছাত্রদের নিয়ে আপনারা চালু করতে পারেন। এই মেথডগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে,লম্বা সময় নিয়ে পড়তে হয় না। প্রতিদিন ঘণ্টা কিংবা দেড় ঘণ্টা পড়লেই একজন মানুষের পক্ষে মাত্র ছয় মাসে বেশ ভালোভাবেই ইংরেজি শেখা সম্ভব।
তিনি আমার কাছে জানতে চাইলেন যে,শিক্ষকের মাসিক বেতন কেমন আসবে। আমি বললাম : কম করে হলেও ২৫০০০ হাজার। তিনি বললেন : আমাদের শায়খুল হাদিস সাহেবের বেতনই যেখানে ১২০০০ হাজার টাকা,সেখানে ২৫০০০ হাজার টাকা বেতন দিয়ে ইংরেজি শিক্ষক নেয়াটা কি সম্ভব! এরপর আর আমি কিছু বলিনি। আসলে আমার কাছে বলার মত কিছু ছিল না! এখন মনে হয়,কিছু পেতে হলে কিছু দিতে হয়,একথাটা বলা উচিত ছিল।
জানি না কেউ বিশ্বাস করবে কি না,তবে আমার নিজস্ব বিশ্বাস হল,পঞ্চাশ বছরের অশিক্ষিত কিন্তু মনযোগী মানুষের পক্ষেও এসব মেথডের মাধ্যমে ইংরেজি শেখা সম্ভব। সপ্তাহে মাত্র তিন দিন ০১:৩০-মিনিট ক্লাস করেই অনেক মানুষ এখন অনর্গল ইংলিশে কথা বলছে।
সবচেয়ে আনন্দের যে বিষয়টি,মাদ্রাসা ছাত্রদের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল,এরা ছোট বেলা থেকেই পরিশ্রমী হয়। কারণ এমন কোন মাদ্রাসা মনে হয় খুঁজে পাওয়া যাবে না,যেখানে প্রতিদিন আট ঘণ্টার চেয়ে কম ক্লাস হয়। এরপর নিজস্ব পড়া-লেখা মিলিয়ে একজন মাদ্রাসা ছাত্র যেকোনো ভাবেই দশ-থেকে এগারো ঘণ্টা পরিশ্রম করতে পারে। কাজেই মুল পড়ার ফাকে ইংরেজি শেখা তাঁর জন্য অসম্ভব নয়। আমার কাছে মনে হয়,শুধু আসরের পর পড়েই ইংরেজি শেখা সম্ভব।
যদি বোর্ডের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করা হয়,তবে আমার মনে হয় আলোচনা সাপেক্ষে তাঁরা মাদ্রাসায় তাদের মেথড চালু করতে পূর্ণ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে। ফলে ছাত্রদের দাখিল-প্রীতি অনেকটা কমে আসবে। পড়া-লেখার মান অনেকগুন বৃদ্ধি পাবে।দুর্মুখদের সমালোচনা বন্ধ হবে। সর্বোপরি দ্বীনের প্রচারে অনেক বেশি অবদান রাখতে পারবে। চলবে………