যুগ বদলায়। যুগের সাথে সাথে মানুষও বদলায়। মানুষ বদলায় না বলে আসলে বলা উচিত বদলাতে বাধ্য হয়। সময় নিজেকে বদলে নিতে মানুষকে অনেকটা বাধ্য করে।
কওমী মাদ্রাসা মানুষ গড়ার কারখানা। বর্তমান সময়ে ইহুদী-খ্রিস্টান এবং মুসলিম নামধারী মুনাফিকদের দ্বারা প্রতারিত মুসলমানদের অস্তিত্ব রক্ষার একমাত্র মাধ্যম কওমী মাদ্রাসা।
উপমহাদেশে ব্রিটিশ বেনিয়াদের দ্বারা নির্যাতিত হয়ে মুসলমানদের অস্তিত্ব যখন পুরোপুরি হুমকির মুখে। লাখো উলামাদের শাহাদাতের কারণে ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা যখন প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এমতাবস্থায় হযরত কাসিম নানুতাভী এর মাধ্যমে দারুল উলূম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। একসময় উপমহাদেশ থেকে ব্রিটিশ বেনিয়ারা বিতাড়িত হয়। কিন্তু বিদায় বেলায়ও তারা তাদের ষড়যন্ত্র সফল করে যায়। ফলে দেশ ভাগ হয়। মুসলমানদের মধ্যে আভ্যন্তরীণ বিরোধ বাড়তে থাকে। কিন্তু আল্লাহর অশেষ অনুগ্রহে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা ততদিনে দারুল উলুমের আঙ্গিনা পেরিয়ে ব্যাপক প্রসার পেয়ে গিয়েছিল,ফলে দেশভাগের পরও মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় কোন কোন পরিবর্তন আসেনি,বরং মুসলমানদের উন্নত জীবনের আশা-ভরসার একমাত্র অবলম্বন হিসেবে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাই আজ পর্যন্ত স্বীয় অবস্থানে বহাল রয়েছে।
ব্রিটিশ শাসনের সময় উলামায়ে দেওবন্দের ফতোয়া ছিল যে,ইংরেজি ভাষা শিক্ষা হারাম। বিপন্ন ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা রক্ষা এবং ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলন সফল করতে উলামায়ে দেওবন্দের সেই ফতোয়া হাতে গুনা কিছু নামধারী মুসলমান ব্যতীত প্রায় সবাই মেনে নিয়েছিল।
ব্রিটিশ বেনিয়াদের বিদায়ের পর উলামায়ে দেওবন্দ বিশ্বের বুকে নিজেদের অবস্থান এতো ভালোভাবে ধরে রাখেন যে,শায়খুল ইসলাম আল্লামা তাকী উসমানী বলেন,পুরো বিশ্ব ভ্রমণের পর আমার একথা পূর্ণ বিশ্বাস হয়ে গেছে যে,উলামায়ে দেওবন্দের মত এতো গ্রহণযোগ্যতা সম্পন্ন জামাত বিশ্বের বুকে আর একটিও নেই। এখন পর্যন্ত ভারতবর্ষ মুসলিম বিশ্বের মধ্যে নিজেদের অবস্থান এমনভাবে সমুন্নত রেখেছে যে,সমগ্র বিশ্বের মুসলমানরা তাদের অবদান স্বীকার করছে।
তবে বিরুদ্ধবাদীরা ও নিশ্চুপ নেই। মুসলিম নামধারী মুনাফিক থেকে শুরু করে ইহুদী-খ্রিস্টানরা এখন প্রকাশ্যে এবং গোপনে তাদের কূটকৌশল বাস্তবায়ন করতে বহুমুখী পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে। বলতে বাঁধা নেই যে,তাদের মোকাবেলায় উলামায়ে কেরাম এখনো পর্যন্ত সফল। তবে দিন-দিন তাদের চক্রান্ত বেড়ে চলেছে।
সুতরাং যুগের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে কৌশল পরিবর্তনের সময় এসেছে। ইংরেজি ভাষা বর্তমানে বিশ্বের প্রধান ভাষা হিসেবে পরিচিত। দেশের গন্ডি পেরোলেই ইংরেজি ভাষার প্রয়োজন।
একটা সময় ছিল,যখন মানুষের সবধরনের কাজের নেতৃত্ব ছিল উলামাদের হাতে। কিন্তু এখন সাধারণ মানুষের সাথে বিরাট একটা দূরত্ব যে কোন ভাবেই হোক সৃষ্টি হয়ে গেছে। অনেক সাধারণ মুসলমান স্বীয় যোগ্যতাকে অতিক্রম করে অন্যায়ভাবে উলামাদের সমালোচনা করতে শুরু করেছে। ফলে সময় হয়েছে তাদের ইসলাম সম্পর্কে নতুনভাবে ধারনা দেয়ার।
মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা যোগ্যতা সম্পন্ন হওয়া স্বত্বেও স্কুল-কলেজে শিক্ষারত শিক্ষার্থীদের দ্বারা হাসির পাত্রে পরিণত হচ্ছে। ফলে তার মনে প্রতিশোধের স্পৃহায় জন্ম নিচ্ছে আধুনিকতা প্রীতি। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বহির্বিশ্বে ইসলামের আওয়াজ পৌঁছানোর রাস্তা সহজ হয়ে গেছে।
এছাড়াও বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে ভারত-পাকিস্তানের উলামায়ে কেরাম মাদ্রাসা সমূহে দরসে কোরআন ও হাদীস অপরিবর্তিত রেখেই ইংরেজি বিভাগ চালু করেছেন এবং এখন পর্যন্ত সেই দ্বারা অব্যাহত রয়েছে।
কওমী মাদ্রাসার মূল কেন্দ্র দারুল উলূম দেওবন্দে ফেদায়ে মিল্লাত সাইয়িদ আসয়াদ মাদানী এর পরামর্শে পৃথক ইংরেজি বিভাগ অনেকদিন পূর্বেই চালু হয়েছে। দারুল উলূম করাচীতে মুফতী তাকী উসমানী এর কল্যাণে এমনভাবে শিক্ষা বিভাগকে বিন্যস্ত করা হয়েছে যে,আরব বিশ্ব পর্যন্ত এর নাম ছড়িয়ে গেছে।
কিন্তু বাংলাদেশের মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা যুগ যুগ ধরে একই অবস্থার উপর থেমে আছে। ফলে বাংলাদেশের উলামাদের ধর্মীয় অবদান দেশের বাইরে এখনো পর্যন্ত তেমন একটা পৌছুতে পারেনি।
কাজেই সময় এসেছে পরিবর্তনের। আধুনিকতা নয় তবে ইসলামের সঠিক রূপ মানুষের কাছে পৌঁছানোর। চাইলেই তো সম্ভব। শুধু একটু আন্তরিক ইচ্ছেই যথেষ্ট।