আজ পুরো বিশ্ব পাশ্চাত্য সভ্যতার প্রেমে মত্ত। প্রতিটি মানুষ পাশ্চাত্যের পোশাক, অবয়ব, সভ্যতা-সংস্কৃতির অনুকরণকে নিজের আভিজাত্যের পরিচায়ক হিসেবে মনে করছে এবং ইসলামী সভ্যতা-সংস্কৃতিকে তুচ্ছ জ্ঞান করছে। অধিকাংশ মুসলমান সাজ-সজ্জা, পোশাক-পরিচ্ছেদে পাশ্চাত্যের অনুকরণকে নিজের জন্য অহংকার ও গর্বের বিষয় মনে করছে এবং রাসূল (সা:) ও সাহাবায়ে কেরামের অনুসরণে লজ্জা এবং দারিদ্রতা অনুভব করছে।
কোনো এক কবি বলেছিলেন : ওযা’ মে তো হো নাসারা তু তামাদ্দুন মে ইয়াহুদ। ইয়ে মুসলমা.. হে জিনহে..দেখ কর শরমায়ে.. হুনূদ। (ফন্ট জটিলতায় বাংলা উচ্চারণ লিখে দিলাম)
ধর্মহীন এই সমাজে মুসলমানদের জন্য সর্বাপেক্ষা বড় জিহাদ হচ্ছে অন্যের অনুকরণ ত্যাগ করে ইসলামী সভ্যতা-সংস্কৃতি, পোশাক-পরিচ্ছদ, চাল-চলন, কথা-বার্তাসহ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে রাসুল (সা:) –এর সুন্নাত ও আদর্শের অনুকরণ এবং অন্যের অনুকরণ থেকে বেঁচে থাকার সর্বোচ্চ চেষ্টা সাধন। অন্যথায় মুসলমান হিসেবে প্রাপ্ত সম্মান ধূলিসাৎ হয়ে যাবে এবং আল্লাহ তায়ালার সাহায্য থেকে বঞ্চিত হতে হবে।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা:) রাসুল (সা:) হতে বর্ণনা করেন যে, যে ব্যক্তি কোনো জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করলো সে ঐ জাতির অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ যে কাফির, ফাজির আর ফাসিকের অনুসরণ করবে সে ফাসিক, ফাজিরের অন্তর্ভুক্ত। আর যে আল্লাহ ওয়ালাদের অনুকরণ করবে সে আল্লাহ ওয়ালাদের অন্তর্ভুক্ত।
উক্ত হাদিসে ঐসব লোকদের জন্য অনেক বড় সুসংবাদ রয়েছে, যারা পোশাক-পরিচ্ছদ, সভ্যতা-সংস্কৃতি, চাল-চলন, কথা-বার্তাসহ জীবন পরিচালনায় নেক লোকদের অনুকরণ করে থাকেন। আর যারা কাফির, ফাজির, ফাসিকের অনুকরণ করে তাদের জন্য রয়েছে কঠোর ধমকি।
এমনভাবে যেসব পুরুষ মহিলাদের সাদৃশ্য গ্রহণ করে এবং যেসব মহিলা পুরুষের সাদৃশ্য গ্রহণ করে তাদের জন্যও হাদিসে কঠোর ধমকি এসেছে।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) নবী কারীম (সা:) হতে বর্ণনা করেন যে, “আল্লাহ তায়ালার অভিসম্পাত ঐসব পুরুষের উপর যারা মহিলার সাদৃশ্য গ্রহণ করে এবং ঐসব মহিলার উপর, যারা পুরুষের সাদৃশ্য গ্রহণ করে”।
এমনভাবে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেন : “আল্লাহ তায়ালা অভিসম্পাত করেছেন ঐসব পুরুষের উপর যারা মহিলার সাজ-সজ্জা গ্রহণ করে এবং ঐসব মহিলার উপর, যারা পুরুষের সাজ-সজ্জা গ্রহণ করে। আর তিনিও এও বলেছেন যে, তাদেরকে তোমাদের ঘর থেকে বের করে দাও”।
উক্ত হাদীস দ্বারা জানা যায় যে, যারা অন্যের অনুকরণ করে কিংবা যে পুরুষ মহিলার এবং যে মহিলা পুরুষের সাদৃশ্য অবলম্বন করবে তারা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের দৃষ্টিতে অভিশপ্ত। আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহ হতে বঞ্চিত।
কিন্তু যে সৌভাগ্যবান এই ধর্মহীন পরিবেশে সামাজিক লাজলজ্জা উপেক্ষা করে রাসূল (সা:) –এর সুন্নাতের উপর জীবন অতিবাহিত করবে সে একশত শহীদের সওয়াব অর্জন করবে এবং জান্নাতে রাসূল (সা:) –এর সঙ্গী হবে।
হযরত আবু হুরায়রা (রা:) রাসূল (সা:) হতে বর্ণনা করেন যে, “যে আমার সুন্নাতকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরেছে, আমার উম্মতের বিপর্যয়ের সময় তাঁর জন্য শত শহীদের সওয়াব রয়েছে”।
এমনভাবে হযরত আনাস (রা:) বর্ণনা করেন যে, রাসূল (সা:) বলেন : “যে আমার সুন্নাতকে ভালোবাসে সে আমাকে ভালবাসে। আর যে আমাকে ভালবাসে সে জান্নাতে আমার সঙ্গী হবে”।
সবগুলো হাদীস গভীর মনোযোগ সহকারে পড়ে একটু ভাবুন; বর্তমান সময়ে ইসলামী সভ্যতা-সংস্কৃতিকে গ্রহণ করার মাঝে কতো বেশি পুণ্য অর্জনের সুযোগ এবং পাশ্চাত্য সভ্যতার অনুসরণে কতো ধমকি রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদের পাশ্চাত্য সভ্যতার প্রবাহ থেকে রক্ষা করুন এবং ইসলামী সংস্কৃতিকে আঁকড়ে ধরার তৌফিক দান করুক। আমীন!
***২/৩ দিন পূর্বে Mustofa AL Karim ভাইয়ের সাথে অনেকদিন পর ফোনে কথা হলো। কথা প্রসঙ্গে আমাদের আচার-আচরণ, পোশাক-পরিচ্ছদ সম্পর্কে তাঁর অভিব্যক্তি শুনে মনে হলো আরে! আমিও তো এমনটি ভাবছি। কিছুটা আক্ষেপও হলো। গতকাল রাতে হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ ইউনুস পালনপুরী (দাঃ বাঃ) –এর এই লেখাটি চোখে পড়লো। পড়ে উপকারী মনে হওয়াতে অনুবাদ করলাম। ফেসবুকে প্রকাশিত