বাংলা ভাষা-ভাষী মানুষ পারস্য সাহিত্যের সৌন্দর্য সম্পর্কে অল্পস্বল্প অবগত। তবে ফিরদৌসী, ওমর খৈয়াম, হাফিয, সা’দী, রুমী, জামির মতো বিরল প্রতিভার যথার্থ মূল্যায়ন বাংলা ভাষায় হয়েছে এমনটি সম্ভবত কেউ দাবী করবে না।
পারস্য সাহিত্যের লালিত্য মঙ্গোলিয়ার বর্বর তাতারদের মুগ্ধ করেছিলো। মোগল সম্রাট বাবর ফারসী ভাষাকে রাজভাষা নির্ধারণ করেছিলেন। বর্বর তাতার জনগোষ্ঠীর দিগ্বিজয়ী বীর চেঙ্গিস খানের অধস্তন পুরুষ তৈমুর লঙ পর্যন্ত মহাকবি হাফিজকে মনি-মুক্তা দিয়ে পুরস্কৃত করেছিলেন।
সময়ের সাহসী কণ্ঠস্বর মুসা আল হাফিজ ভাই পারস্য সাহিত্যের বিরল প্রতিভা আব্দুর রহমান জামীকে নিয়ে গদ্য পদ্যের মিশেলে রচনা করেছেন অনন্য গ্রন্থ “মহাকাব্যের কোকিল”।
ছোট্ট এই জীবনে বিভিন্ন ধরণের বই পড়ার সুযোগ হয়েছে। সাধারণ পাঠক হিসেবে সবসময়ই গোঁজামিল দিয়ে চালিয়ে নিয়েছি। কিন্তু “মহাকাব্যের কোকিল” পড়তে গিয়ে থমকে গেলাম। মনে হচ্ছিলো সম্পূর্ণ নতুন কিছু পড়ছি। যেন কখনো এমন কিছু পড়িনি।
“দুয়ারে তোমার রূহানী জোয়ার” এই বাক্য দিয়ে বইয়ের সূচনা। পাঠককে এখান থেকেই পাঠের সাথে ভাবনার জগতকে সক্রিয় রেখে এগুতে হবে। পড়তে গিয়ে যখন আপনার মনে আসবে বইটির লেখক একজন কওমী মাদরাসার ছাত্র, একজন মুহাদ্দিস। নিশ্চিত আপনি অবাক হবেন। নতুন করে ভাবতে বসবেন এওকি সম্ভব!
এই রচনা আপনার হৃদয়ে তোলপাড় সৃষ্টি করবে। আপনার ভাবনাকে বদলে দেবে। আপনাকে গর্বিত করে তুলবে। আপনাকে ভাবতে শেখাবে, বাংলা সাহিত্যে আমরা কেবল পাঠক নই।
ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ> কয়েকবছর পূর্বে মুসা আল হাফিজ ভাইয়ের একটি বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে দাওয়াত পেয়ে ভেবেছিলাম, সম্ভবত সিলেটের বাইরের কেউ। এও জানতাম না যে, তিনি কওমী মাদরাসায় পড়ালেখা করেছেন। দাওয়াত প্রাপ্তির সময় জিজ্ঞেসও করিনি মুসা আল হাফিজ কে?
কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদে আয়োজিত সেই অনুষ্ঠানে গিয়ে সামনে বসা কয়েকজনকে দেখিয়ে সর্বপ্রথম পরিচিত এক ভাইকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, এখানে মুসা আল হাফিজ কে? তিনি যখন পাঞ্জাবী পরিহিত রূমাল দিয়ে মাথা ঢেকে বসে থাকা একজনের দিকে ইঙ্গিত করলেন, আমি অবাক হয়ে সেই ভাইয়ের দিকে তাকিয়েছিলাম!
এরও কিছুদিন পর সিলেট আলিয়া মাদরাসা মাঠে আয়োজিত আযাদ দ্বীনী এদারায়ে তালীম বাংলাদেশের দস্তারবন্দী মহা সম্মেলনে মুসা আল হাফিজ ভাইয়ের সাথে সর্বপ্রথম সাক্ষাত। এরপর হতে এখনও পর্যন্ত মাত্র ৩/৪ বার সরাসরি দেখা হয়েছে।
স্বল্প এই সাক্ষাতে তাঁর কথাবার্তা আমার মুগ্ধতার পরিমাণ কেবল বৃদ্ধি করেছে। নতুন কিছু বিষয় তাঁর কাছ থেকে জেনেছি। কারো উপকারে আসতে পারে ভেবে এখানে একটি বিষয় বলছি।
মনে করুন! আপনি মুসা আল হাফিজ ভাইয়ের সাথে আলাপ করছেন। আপনি তখন কতোটা মনযোগী মুসা ভাই সেটি খুব ভালোমতো খেয়াল করবেন। যেমন; আমি বললাম; মুসা ভাই! আমি আপনার বইটা পড়ছি। অনেকেই হয়তো এই মুহূর্তে তেমন কিছু বলবে না। মুসা ভাইয়ের প্রশ্ন! কোন বইটা পড়ছেন? কেউ যদি বই না পড়ে মিথ্যা বলে খুশি করতে যায়, সে তখন ধরা পড়বে। চাটুকার স্বভাব বিশিষ্ট মানুষের কাছ থেকে বেঁচে থাকতে এই পন্থাটি নিঃসন্দেহে উপকারী।
কথা বলার সময় শ্রোতা কতোটা মনযোগী এই বিষয়টিও তিনি গভীরভাবে লক্ষ্য করেন। যেমন আমি বললাম; আমাকে কিছু বইয়ের নাম দিন। যেগুলো আমি পড়তে পারি। তিনি নাম বলতে শুরু করলেন। আমি লিখে রাখতে লাগলাম। নাম বর্ণনা শেষ হলে মুসা ভাইয়ের প্রশ্ন, প্রথম কোন বইটার কথা বলেছিলাম? এমন প্রশ্ন শ্রোতার জন্যও আনন্দদায়ক। বক্তা আন্তরিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং গভীর মনে শ্রোতার উদ্দেশ্যে কিছু বললে নিঃসন্দেহে সেটি শ্রোতার জন্য বেশ বড় পাওয়া।
সাহিত্যে কওমী পড়ুয়াদের অনেকেই কাজ করছেন। কিন্তু মাদরাসার সাথে পরিপূর্ণ সম্পৃক্ততা রেখে কাজ করছেন অল্প কজন। যাঁদের উল্লেখযোগ্য একজন মুসা আল হাফিজ ভাই। নিরীহ ভাবমূর্তি, লম্বা পাঞ্জাবী আর রূমাল পরেও যে পূর্ণরূপে সাহিত্যচর্চা করা যায় মুসা আল হাফিজ ভাইকে দেখার পর আপনার কাছে সুস্পষ্ট হবে। আর সম্ভবত এই বিষয়টিই আপনাকে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করবে।
আল্লাহ তায়ালা তাঁকে দীর্ঘায়ু করুক। তাঁর মাধ্যমে আমাদের মতো তরুণদের উপকৃত হবার তৌফিক দান করুক। ফেসবুকে প্রকাশিত