৬) কওমী অঙ্গনের সর্ববৃহৎ ফেসবুক পেইজের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, মালিবাগ জামিয়ার তাকমীল ফিল হাদিসের ছাত্র কামরুল হাসান ভাইয়ের সাথে কয়েকমাস পূর্বে সংক্ষিপ্ত এক সাক্ষাত হয়েছিলো। সেই অসম্পূর্ণ সাক্ষাত পূর্ণতা পেতেই কি না ইজতেমায় আবার দেখা হয়ে গেলো।
ফোনে যোগাযোগ করে অনেক জায়গা ঘুরে অবশেষে আমার এক সহপাঠীকে নিয়ে তাঁর কাছে পৌঁছুলাম। তবে স্বীকার্য যে, আমাদের খুঁজতে কামরুল ভাই যে কষ্ট করেছেন, আমরা তার সিকিভাগও করিনি। তিনি আমাদের মালিবাগ জামিয়ার নির্ধারিত স্ট্যান্ডে যাওয়ার কথা বলাতে বিনা দ্বিধায় রাজি হয়ে গেলাম। যাওয়ার পথে কামরুল ভাইয়ের সাথে হাটতে গিয়ে বুঝতে পারলাম, মানুষের গ্রহণ ক্ষমতা কতো গভীর হতে পারে!
>ইজতেমার ময়দানের শেষ প্রান্তে মুবাল্লিগরা রান্নাবান্না করে নিজেদের খিমায় খাবার নিয়ে যান। যাওয়ার পথে ভিড় এড়াতে কালি,কালি, লাকড়ি,লাকড়ি কিংবা গরম,গরম বলে আওয়াজ দেন। একব্যক্তি রান্না করা খাবার নিয়ে যাচ্ছিলো। রাস্তায় লোকজনের আধিক্যতা দেখে (হয়তো মজা করে) বলে উঠলো, কালি, মা কালি! মা কালি! কথাটা শুনে পাঁশে থাকা এক বাচ্চা বলে উঠলো; ব্যাটা কি পাগল হয়ে গেছে নাকি! এসব কি কয়!।
আমি বুঝতে পারিনি, কামরুল ভাই যখন বললেন, ততোক্ষণে মানুষের ভিড়ে সেই বাচ্চাকে পিছনে ফেলে এসেছি। তবে সেই ছেলেকে না দেখলেও অনেক্ষণ কথাটা ভেবে হাসলাম।
>একব্যক্তি রান্নার জন্য লাকড়ি নিয়ে যাচ্ছিলো। ভিড় দেখে বারবার বলছিল; লারকি, লারকি। কামরুল ভাই আমাকে বললেন, খেয়াল করে দেখুন তো; লোকটা লাকড়ি বলছে অথচ শুনা যাচ্ছে কিলার ( খেয়াল করে শুনলাম, সত্যিই। লাকড়ি, লাকড়ি একসাথে বলাতে কিলার, কিলার শব্দের মতো লাগছে।
৭) প্রযুক্তি থেকে একসময় আমরা যোজন যোজন দূরে বাস করছিলাম। সময় আমাদের সেই দূরত্বকে ঘুচিয়ে দিয়েছে। সন্দেহ নেই, ফলে অনেক সহজ হয়ে উঠেছে আমাদের জীবন। ইজতেমা উপলক্ষে ২ বছর ধরে কামরুল ভাইসহ মালিবাগ জামিয়ার কয়েকজন মিলে “দৈনিক আমার ইজতেমা” নামে চার রঙা চমৎকার একটি বুলেটিন বের করেন। যাতে প্রতিদিনের বয়ানের পাশাপাশি বিভিন্ন তথ্য সন্নিবেশিত থাকে।
আমরা মালিবাগের স্ট্যান্ডে পৌঁছার পর নাম না জানা এক ভাই সেদিনের বয়ানের আলোচিত অংশগুলো লিখে কামরুল ভাইয়ের হাতে দিলেন। কামরুল ভাই সেই লেখাটা মোবাইলের ক্যামেরা দিয়ে ফটো তুলে নির্ধারিত জায়গায় পাঠিয়ে দিলেন। এই পন্থা অবলম্বন করার ফলে ইজতেমার ময়দানে বসেই পত্রিকার কাজ হয়ে গেলো। নইলে টঙ্গীর বিশাল জ্যাম এড়িয়ে অনেক টাকা খরচ করে নির্ধারিত জায়গায় বয়ানের কপি পৌঁছে দিতে না জানি কতো ত্যাগ করতে হতো। আল্লাহ্ তায়ালা তাদের খিদমাতকে ক্ববুল করুন।
৮) ২৫ জানুয়ারি শনিবার দুপুরে আমাদের এলাকার জামাতে খাবার জন্য দাওয়াত ছিলো। সময়মতো একজন এসে আমায় নিয়ে গেলেন। এলাকার জামাতে আমীর সাহেব ও একজন মাদরাসা ছাত্র ছাড়া সবাই আমজনতা। যাঁদের মাঝে কোটিপতি থেকে চা বিক্রেতা পর্যন্ত আছেন। সেখানে গিয়ে খাবারের অবস্থা দেখে আমি অবাক। ইজতেমা নাকি পিকনিকে খেতে বসছি বুঝতে পারছিলাম না।
সাধারণত ইজতেমা কিংবা তাবলীগের সফরে স্বল্প এবং সাধারণ খাবারের জন্য উৎসাহিত করা হয়। আমাদের এলাকার জামাতে গরুর গোশত, ডাইল, সবজি, সালাদ……। খাবার নিয়ে বসার পর খিদমাতের সাথী কর্তৃক হাত ধোয়ানো। খাবার শেষে আবার হাত ধোয়ানো। অতঃপর চা পান!
আমি খাওয়া দাওয়ার পর আমীর সাহেবকে আস্তে করে জিজ্ঞেস করলাম, এতো খাবারের ব্যবস্থা কেন বুঝলাম না! যতো বেশি খাওয়া হবে টয়লেটে যাওয়ার প্রয়োজনও ততো বাড়বে। এতে করে নিজেদের কষ্ট বাড়বে বৈ লাভ কিছু হবে না। আমীর সাহেব বললেন, আমি তো তাদের প্রথম থেকেই সাধারণ খাবারের জন্য উৎসাহিত করছি। কিন্তু বেশীরভাগই কথা শুনতে চায় না। তাই আর ………
অবশেষে বিদায় নিয়ে আসলাম আর ভাবলাম, ইজতেমার মাধ্যমে কিছু অর্জিত হোক কিংবা না হোক; অনেক দরিদ্র মানুষ স্বল্পমূল্যে ভালো খাবার দাবার খাচ্ছে।
*সাধারণত ভালো খাবার অধিক খাওয়া হয়ে থাকে। অধিক খাবারের ফলে টয়লেট গমন এবং ঘুম বৃদ্ধি পাওয়া নিশ্চিত। অথচ ২/৩ দিন খুব বেশি এবং ভালো কিছু না খেলেও চলে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে আমি এমনটি ভেবেছিলাম। সুতরাং কেউ ভিন্ন কিছু মনে না করলে খুশি হবো।
>ইজতেমার বিশেষ নোটবুক থেকে…… ফেসবুকে প্রকাশিত