প্রযুক্তির এই বিপ্লবী যুগে দেশের অগণিত কওমী মাদরাসার ছাত্রাবাসসমূহে মোবাইল, কম্পিউটার ব্যবহার নিষিদ্ধ। আমার পরিচিত অনেকেই এই বিষয়টি নিয়ে সন্তুষ্ট নয়। তারা ভাবে, এভাবে নিষিদ্ধকরণ কোনোক্রমেই যুক্তিযুক্ত হতে পারে না।
কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়, নিষিদ্ধকরণটা যথার্থ। অনস্বীকার্য যে, প্রযুক্তির ব্যবহারে উপকারের পাশাপাশি অপকারও রয়েছে। আর ভালোমতো ভাবলে এও স্বীকার্য যে, অপকারের দিকটিই প্রবল। অতএব অবাধ সুযোগ দেয়ার মাধ্যমে নিজেদের ইতিহাস ঐতিহ্যকে বিলীন করে কলেজ,ইউনিভার্সিটির পরিবেশ তৈরির সুযোগ প্রদান সত্যিকারর্থেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
বরং অনুসন্ধান করলে দেখা যায়, এসব নিত্যনতুন বিষয়াদি সম্পর্কে কওমী মাদরাসার পরিচালকগণ যথেষ্ট বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্তই গ্রহণ করেছেন। যেমন; আমাদের মাদরাসা(জামেয়া দরগাহ সিলেট) এবং সিলেটের উল্লেখযোগ্য আরো কয়েকটি মাদরাসায় তাখাসসুস, দাওরায়ে হাদীস, ফযীলতের ছাত্রদের একপ্রকার বাধ্যতামূলক কম্পিউটার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানে মোবাইল, ব্যক্তিগত কম্পিউটার নিষিদ্ধ। রাজধানী ঢাকা, চিটাগাঙেও সম্ভবত কিছু মাদরাসা এমন পাওয়া যাবে, যেখানে ছাত্রদের কম্পিউটার শেখার সুযোগ রয়েছে।
অবাধ সুযোগ করে দিলে অপরিণত ছাত্রদের বিপথে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল ছিলো। সুতরাং মাদরাসায় মোবাইল, কম্পিউটার নিষিদ্ধ করার যৌক্তিকতা নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলেন, তারা অন্তত আমার মতো একটু ভেবে দেখুন। আমার আশা, আপনাদের ভুল ধারণা বদলে যাবে।
বলতে দ্বিধা নেই, কিছু প্রতিষ্ঠান আবার প্রযুক্তির জগত থেকে পুরোপুরি নিজেদের সরিয়ে রাখছেন। ইসলাম ধর্মের অবস্থান কঠোরতা এবং শিথিলতার মধ্যবর্তী। আমাদের মাদরাসায় পড়ার মৌলিক উদ্দেশ্য কখনোই এমন ছিলো না যে, পড়া শেষ করে আবার পড়ানোতে লেগে যাবো এবং চক্রাকারে ঘুরতে ঘুরতে একসময় ইতিহাস হয়ে যাবো।
সত্য তো এই যে, নিজেরা এমন পরিবেশকে গ্রহণ করেছি বলেই আজ সাধারণ সমাজের সাথে আমার বিশাল দূরত্ব। অথচ ধর্মের আলোকে পুরো সমাজকে আলোকিত করার মহান দায়িত্ব আমাদের উপর অর্পিত। আর বলা বাহুল্য, দায়িত্ব কাজ ভেদে পরিবর্তিত হয়ে থাকে।
আমরা সবকিছু জানি, ভালোমতো বুঝি; কিন্তু ভাবনাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখি। অথচ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে ভাবনাকে কাজে লাগানোর রীতিটা মানুষের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য। হয়তো এই নীরবতার পেছনে যৌক্তিক কারণ রয়েছে। তবে যৌক্তিকতার উপরেও যৌক্তিকতা থাকে। আর বর্তমান সময়কে নিয়ে ভাবা অধিক যৌক্তিক। সমাজ আমাদের শত্রু নয়, সমাজের সাথে আমাদের বিরোধ নেই। এই সমাজ আমাদের। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ইসলামের প্রকৃত আলো পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব আমাদের।
সুতরাং অবাধ ব্যবহার নয়, আবার নিজেদের ঘুটিয়ে রাখা নয়; সময়ের দাবিকে গুরুত্ব দেয়াই সর্বাধিক যৌক্তিক। আল্লাহ্ তায়ালা আমাদের নিঃস্বার্থভাবে কাজ করার তৌফীক দান করুন। ফেসবুকে প্রকাশিত