অনলাইনকে আস্ত একটা পৃথিবী বললে ভুল হবে না। মানুষ এখন ঘরে বসে অনলাইনের বদৌলতে ডিগ্রী অর্জন করছে; বাজার করছে; অফিস করছে। প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয় সব কাজই এখন অনলাইনের মাধ্যমে সহজে সম্পন্ন করা সম্ভব।
মতবাদ প্রচার প্রসারেও অনলাইন পিছিয়ে নেই। সুস্পষ্ট মনগড়া মতবাদও আজকাল অনলাইনের মাধ্যমে সাধারণের মনে প্রভাব ফেলছে। অথচ সত্যের বানী পোঁছে দেয়ার জন্য মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। এরচেয়েও আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, এই বিষয়ে আক্ষেপ করার মানুষেরও অভাব।
লম্বা ভূমিকা ছেড়ে সহজ ভাষায় বলি। অনলাইনে জ্ঞান অর্জন এবং বিতরণের গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম হচ্ছে ব্লগ। ব্লগ কাকে বলে? কতো ধরনের ব্লগ রয়েছে? এসব পুরনো বিষয়। নতুন বিষয় হচ্ছে, ফেসবুকের বদলে পরিকল্পিতভাবে ব্লগে আমাদের অধিক সময় দেয়া উচিত। প্রশ্ন আসবে কেন?
ফেসবুক, টুইটার, মাইস্পেসসহ সবগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাথে ব্লগের রয়েছে বিস্তর পার্থক্য। তবে পার্থক্য জানার পূর্বে একটি মূলনীতি জানা প্রয়োজন।
সহজ কথন> যুদ্ধ জয়ের জন্য সাহসী যোদ্ধাদের পরাজিত করাই যথেষ্ট। ভীতুরা এমনিতেই পালিয়ে যাবে। কোনো গোষ্ঠীর উপর প্রভাব বিস্তার করতে শিক্ষিত শ্রেণিকে কবজা করলেই চলবে। এই কথাগুলো ভাবনায় রেখে আসুন ভেবে দেখি ফেসবুকের সাথে ব্লগের পার্থক্য কোথায়। যে কয়টা উপস্থিত মনে আসছে সেসব বলছি।
(১)ফেসবুকসহ সবগুলো সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী মানুষেরা স্বাধীন। অশিক্ষিত কিংবা অর্ধ শিক্ষিত, যে কেউ ফেসবুক, টুইটার ব্যবহার করতে পারে। ফলে এমনটি অস্বাভাবিক নয় যে, অনেক কষ্টে কেউ সুন্দর করে সাজিয়ে কিছু লিখলো; কিন্তু তাঁর বন্ধুদের অধিকাংশ বন্ধুই সেই লেখা বুঝলো না। ফলে তাঁর লেখাটা উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ হয়ে গেলো। কিন্তু ব্লগের পাঠকের ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিয়ে বলা যায়; শিক্ষিত শ্রেণীর সংখ্যাই সেখানে বেশি।
(২)ফেসবুক, টুইটারে “হাই! কেমন আছো?” “আমি ভাত খাচ্ছি” “মাত্র ঘুম থেকে উঠলাম” টাইপের অনর্থক লেখার মুখোমুখি হতে হয়। কেননা এসব মাধ্যম একপ্রকার নিয়ন্ত্রনহীন। কিন্তু ব্লগে মোডারেটর(পরিচালক কিংবা সম্পাদক বলতে পারেন) থাকার কারণে যা ইচ্ছে তা লিখা সম্ভব নয়। ফলে তরুণদের জন্য লেখক হয়ে উঠার একটা অন্যতম মাধ্যম ব্লগ।
(৩)ফেসবুক অনেকটা সীমাবদ্ধ। একটা লেখা হয়তো অনলি মি দেয়া থাকলে কেউ পড়বে না। বন্ধুদের জন্য লিখলে শুধু বন্ধুরাই দেখবে। পাবলিকের জন্য উন্মুক্ত করে দিলে ফ্রেন্ড,ফলোয়ারের বাইরে আরো কয়েকজন দেখবে। ব্যাস।
কিন্তু ব্লগের লেখা সবার জন্য উন্মুক্ত। ফলে যে কেউ যখনি ব্লগে যাচ্ছে তাঁর কাছে সদ্য প্রকাশিত লেখা চলে আসছে। ফলে ভিন্ন মতাদর্শের মানুষেরাও ইচ্ছে করে হোক কিংবা অনিচ্ছায় লেখাগুলো পড়ছে। এই জায়গাটায় ফেসবুকের সাথে ব্লগের বিস্তর পার্থক্য।
এভাবে আরও অনেকগুলো পার্থক্য বের করা সম্ভব। এখন প্রশ্ন আসতে পারে; ব্লগে লেখা দেয়ার পর যদি কেউ না পড়ে? হয়তো প্রথম প্রথম খুব বেশি মানুষ পড়বে না। কিংবা পড়লেও নিজের উপস্থিতি জানান দিবে না। কিন্তু পরিকল্পিত কাজ করলে একটা সময় চোখে পড়তে বাধ্য। সুতরাং শুরুর সময়টাতে ব্লগকে ব্যক্তিগত ডায়রি (যেটি কখনো কেউ দেখে না) ভাবতে হবে। অতঃপর লোভ এবং নিষ্ঠা থাকলে ইনশাল্লাহ সুন্দর ফলাফল একদিন বেরিয়ে আসবে। তবে অবশ্যই অবশ্যই জনপ্রিয় লেখক হবার ভাবনা থাকলে আমার ভাবনার সাথে একমত হবার প্রয়োজন নেই।
আমরা তো জানিই, সত্যকে জোর করে গেলানোর প্রয়োজন নেই। যথার্থ পন্থায় সামনে রাখলে প্রভাব পড়তে বাধ্য।
অন্য ভাষার তুলনায় বাংলা ব্লগের সংখ্যা খুবই কম। তবুও একটু ঘুরাঘুরি করলেই বুঝতে পারবেন; স্বল্প সংখ্যক ব্লগের মাঝেই অনেকগুলো ব্লগ বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছে। আর সেই কাজে তাদের সফলতাকেও অস্বীকার করার উপায় নেই। সুতরাং সময় ক্ষেপণ না করে যাঁদের পক্ষে সম্ভব পরিকল্পিতভাবে কাজ শুরু করে দেয়া উচিত।
আর এই কাজে আমাদের প্ল্যাটফর্ম হতে পারে মূলধারা ব্লগ (মুলধারা ব্লগ)। নতুন এই ব্লগটি এখন পরিক্ষামুলক সচল। অচিরেই পূর্ণ আঙ্গিকে সামনে আসবে। ব্লগারদের কলতানে মুখরিত হয়ে উঠবে। এই সুযোগটাকে হাতছাড়া করা আমার মনে হয় কোনোক্রমেই উচিত হবে না। আসুন না! অনলাইনে যখন সময় দিচ্ছি তবে একটু ভেবে চিনতে দেই। হয়তো আমার এই কাজটা পরকালে অনেকদূর এগিয়ে দিবে। আল্লাহ্ তায়ালা সবচেয়ে বেশি জানেন।
*এলোমেলো ভাবনা এলোমেলো হয়েই প্রকাশিত হলো। নিজ দায়িত্বে বুঝার চেষ্টা করলেই এলেমেলো ভাব দুর হয়ে যাবে। ফেসবুকে প্রকাশিত