সাবেক জমিদার করীম সাহেব বাংলাবাজারের একমাত্র প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। তাঁর আচার আচরণে এলাকার মানুষেরা মুগ্ধ। সবার সুখ দুঃখে করীম সাহেব এগিয়ে আসেন। আগের সেই শান শওকত না থাকলেও জমিদারী রীতি নীতিতে মোটেও ভাটা পড়েনি। এখনো সবার কাছে করীম সাহেব জমিদার সাহেব হিসেবে পরিচিত।
করীম সাহেব চেয়ারম্যান হিসেবে বহুদিন ধরে দায়িত্ব পালন করছেন। তবে তিনি নির্বাচিত চেয়ারম্যান নন। প্রাচীন কাল থেকেই বাংলাবাজারে জমিদার পরিবারের কেউ না কেউ সরকারের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত হিসেবে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে আসছেন; এটিই বাংলাবাজারের নীতি। কখনো কেউ এই নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি। সত্যি বলতে আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার মিশ্রণের ফলে কেউ কখনো চেয়ারম্যান সাহেবের কর্মে অনীহা প্রকাশের সুযোগই পায়নি।
করীম সাহেবের দুই ছেলে মুজিব ও সজিব। বড় ছেলে মুজিব বাবার ব্যবসা আর ছোট ছেলে প্রশাসনিক কাজকর্ম দেখাশুনা করে।
আগের মতো সেই জমিদারি জৌলুস না থাকলেও করীম সাহেবের হাবেলিতে চাকর/চাকরানির অভাব নেই। সবসময় ফরমায়েশ শুনার জন্য কেউ না কেউ প্রস্তুত। এমনি এক ব্যক্তি ইনু মিয়া।
অনেক পূর্বে করীম সাহেব ইনুকে হাবেলিতে জায়গা দিয়েছিলেন। সবাই বলে ইনুর জন্মের ঠিক-ঠিকানা নেই। তার বাপ/মা সম্পর্কে কেউ জানে না। মানুষের মল থেকে শুরু করে গোমূত্র; সবকিছু পরিষ্কারের দায়িত্ব ইনু মিয়া বহুদিন যাবত পালন করে আসছে। বিনিময়ে হাবেলিতে থাকা এবং ভালো/মন্দ খাবার মিলছে, এতেই সে খুশি।
একসময় করীম সাহেব মৃত্যবরণ করলেন। সম্পদ বন্ঠন নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে শুরুতেই বিভেদ সৃষ্টি হলো। সবচেয়ে বেশি সমস্যা বাঁধলো চেয়ারম্যান পদ নিয়ে। মুজিবের চাইতে সজিব প্রশাসনিক দায়িত্বে বেশি সক্রিয় ছিলো বলে এলাকার মানুষের চাহিদা ছিলো সজীব যেন চেয়ারম্যান হয়। কিন্তু কতিপয় দুষ্কৃতিকারীর চক্রান্তে মুজিব চেয়ারম্যান পদ দাবী করলো। প্রশাসন পড়লো বিপাকে। কার কথা রাখবে। দুজনই যে জমিদার পুত্র!!!
অবশেষে সরকারের পক্ষ থেকে অচিরেই সমাধান আসবে জানিয়ে অস্থায়ী ভিত্তিতে যেকোনো একজনকে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করার নির্দেশনা আসলো। সজিব কোনো ধরণের ঝামেলায় না গিয়ে এলাকাবাসীকে অনুরোধ করলো, অস্থায়ী চেয়ারম্যান হিসেবে তারা যেন মুজিবকে মেনে নেয়। সজিবের কথা রাখতে গিয়ে সবাই মুজিবকে চেয়ারম্যান হিসেবে মেনে নিলো।
সজিব চলমান সমস্যার সমাধান নিয়ে সরকারের উপর মহলে আলোচনা করতে কেন্দ্রে পৌছুলো। তার উদ্দেশ্য ছিলো, কেন্দ্র থেকে সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য একটি সমাধান নিয়ে ফেরা।
সজিবের অনুপস্থিতির এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মুজিব চক্রান্ত করতে লাগলো। বিভিন্ন দিক ভেবে সে দেখলো; সোজা পথে সজিবকে আটকানো যাবে না। বিকল্প কি করা যায় ভাবতে ভাবতে সে একটি উপায় বের করলো।
কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রিসভাবে বিভিন্ন উপঢৌকন দিয়ে হাত করে সে জমিদার পরিবারের মধ্যে চেয়ারম্যান পদ সীমাবদ্ধ রাখা বাতিল করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করলো। এর পাশাপাশি (“আমি পাবো না যখন তবে সে পাবে কেন” কথাটা ভেবে) সংঘাত এড়ানোর নামে জমিদার পুত্রদের নির্বাচনে দাঁড়ানোর অধিকার বাতিল করলো। সজিব নিরীহ প্রকৃতির মানুষ। সে দেখলো; সরকারের বিরুদ্ধে গিয়ে আন্দোলন করে খুব একটা সুবিধা করা যাবে না। জনগণের অবস্থান দেখে ধীরে সুস্থে পদক্ষেপ নেয়ার পরিকল্পনা আঁটলো।
অন্যদিকে একটি পুতুল চেয়ারম্যান বানানোর উদ্দেশ্যে মুজিব জন্ম পরিচয় হীন ইনুকে চেয়ারম্যান পদে দাড় করিয়ে দিলো। কেননা সে ভাবছিলো; ইনুকে চেয়ারম্যান পদে দাড় করালে লজ্জায় কেউ নির্বাচনে যাবে না। সত্যি সত্যি ইনুর বিপক্ষে দাঁড়িয়ে নিজেকে অপদস্থ করতে কেউ রাজি হলো না। ফলে চেয়ারম্যান পদে আর কেউ দাঁড়ালো না। অবশেষে নির্বাচন ছাড়াই ইনু মিয়া বাংলাবাজারের প্রথম গণতান্ত্রিক চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলো!
চেয়ারম্যানের বড় পুত্র হিসেবে মুজিব ঘোষণা করলো; জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সুতরাং আমাদের এই নির্বাচন মেনে নেয়া উচিত। এভাবেই বাংলাবাজারের প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো………………
উপসংহার> আমি যদি মুজিবের মাঝে প্রধানমন্ত্রী, সজিবের মাঝে জনগণ (কিংবা বিরোধী দলীয় নেত্রী) আর ইনুর মাঝে নবনির্বাচিত এমপিদের ছায়া খুঁজে পাই তবে নিশ্চয় কেউ রাগ করবেন না।
***গল্পের দ্বিতীয় পর্ব লেখার অপেক্ষায় রইলাম। আমার বিশ্বাস দিন বদলাবে। কিছু অপেক্ষা সুখকর কিছু নিয়ে আসে। আমরাও অপেক্ষমাণ। ফেসবুকে প্রকাশিত