(১)
দিনটি ছিলো ৬ এপ্রিল ২০১৩> ঢাকার শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের লংমার্চে একুশে টেলিভিশনের রিপোর্টার নাদিয়া শারমিনের উপর হামলা করে হেফাজতের কতিপয় উগ্র সমর্থক।
২৯ ডিসেম্বর রোববার ঢাকা সুপ্রিমকোর্ট প্রাঙ্গণে আওয়ামীলীগ কর্তৃক হামলার শিকার হন বিএনপি সমর্থক আইনজীবী সিমকী ইমাম খান।
(২)
হেফাজতের লংমার্চে নাদিয়া শারমিনের উপর কারা হামলা করেছিলো? কেন করেছিলো? কোনোকিছুই স্পষ্টভাবে সামনে আসেনি। সেদিনের যেসব ছবি পাওয়া গেছে, তাঁতে নাদিয়া শারমিনকে চড়, ঘুষি, লাথি দিতে দেখা যাচ্ছে না কাউকে। কেবল একটি অস্পষ্ট ভিডিওতে দেখা যায়; নাদিয়া শারমিনকে কতিপয় যুবক তাড়া করছে এবং কয়েকজন তাকে রক্ষা করতে চেষ্টা করছে। ভিডিওতে হেফাজতে ইসলামের নিজস্ব লোকজনকেও (মাদরাসা ছাত্র,শিক্ষক) কাছাকাছি দেখা যাচ্ছে না। ধারনা করে নেয়া যায়, হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের মাথায় টুপি ছিল সেদিন, এমনকি অনেক ধর্মপ্রাণ মানুষ যারা শার্ট প্যান্ট পরেন, তারাও সেদিন টুপি পরিধান করেছেন। নাদিয়া শারমিনকে ঘিরে প্রথম বলয়টি দেখা যাচ্ছে টুপি-হীন মানুষের।
হামলার কারণ সম্পর্কেও সুস্পষ্ট করে কেউ কিছু বলতে পারেনি। প্রত্যক্ষদর্শী অনেকের দাবী ছিলো, নাদিয়া শারমিন লক্ষাধিক মানুষের সমাবেশকে কয়েক হাজার বলায় উপস্থিত কয়েকজন তাকে তাড়া করে সরিয়ে দেন। অবশ্য নাদিয়া দাবী করেছিলেন, হেফাজতের সমাবেশে নারী সংবাদকর্মী কেন? এই অজুহাতে তার উপর হামলা হয়েছিলো।
শেষ পর্যন্ত যাই হোক; নাদিয়া শারমিনের উপর হামলার জন্য হেফাজতে ইসলামকে দায়ী করার সুযোগ তখনো ছিলো না, এখনো নেই। কেননা হেফাজত কওমী মাদরাসা কেন্দ্রিক একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। যাতে দেশের ধর্মপ্রাণ জনতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সক্রিয় হয়েছিলেন। হেফাজতের সমাবেশে কারা কি উদ্দেশ্যে আসছেন যাচাই করার সুযোগ ছিলো না। ফলে হেফাজতকে কলঙ্কিত করতে কোনো উগ্রপন্থী মহল কর্তৃক বন্ধু সেজে পরিকল্পিত হামলার ঘটনা সাজানো হয়েছিলো কিনা বলা কঠিন। এরপরেও হেফাজত নেতৃবৃন্দ উক্ত ঘটনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে সরকারকে তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি প্রদানের দাবী জানিয়েছিলেন।
আর বাস্তবতার দাবীও এটাই যে, নাদিয়া শারমিনকে যদি হেফাজতের নেতৃবৃন্দের নির্দেশে হামলা করা হতো, তবে নিঃসন্দেহে তিনি বেশ আহত হতেন। কিন্তু হেফাজত নেতৃবৃন্দের অবস্থান সবসময় নারীদের সম্মানের পক্ষে। অতএব নির্দ্বিধায় বলা চলে, সেদিনের হামলার দায় হেফাজতের উপর বর্তায় না।
আর হেফাজতের সমাবেশে নারী কেন? এই অজুহাতটাও বেশ ঠুনকো। সমাবেশে যারা গিয়েছেন সাংবাদিক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ, তাদের বর্ণনায় সমাবেশে স্বেচ্ছাসেবক ছিল। হেফাজতের কর্মীরাই স্বেচ্ছাসেবক দল করে দিয়েছিলেন বিশৃঙ্খলা এড়াতে। প্রত্যক্ষদর্শী অনেকেই জানিয়েছেন; এমনও হয়েছে, বিদেশী নারী সমাবেশে এসেছিলেন সমাবেশ দেখতে। আর হেফাজত নারী বিদ্বেষী নয় বলেই তো আল্লামা আহমদ শফী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে একাধিকবার বৈঠকে বসেছিলেন। অতএব হেফাজতে ইসলামকে একটি সহিংস, নারী বিদ্বেষী গোষ্ঠী প্রমাণ করতে বাড়িয়ে, ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বলার কোনো প্রয়োজন ছিলো না।
(৩)
সিমকী ইমাম খান। পেশায় আইনজীবী এবং ব্যবসায়ী। বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত এই আইনজীবী ২৯ ডিসেম্বর রোববার “মার্চ ফর ডেমোক্রেসি” কর্মসূচিতে যোগদানের উদ্দেশ্যে সুপ্রিম কোর্টে যান। সেখান থেকে বিএনপি দলীয় আইনজীবীদের সাথে পল্টনে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেরোতে চাইলে পুলিশ আইনজীবীদের কোর্টে অবরুদ্ধ করে রাখে।
অতঃপর আওয়ামীলীগ কর্মীরা পুলিশের সামনে তালা ভেঙ্গে কোর্টের ভেতরে হামলা করে। সেই সময় কয়েকজন হামলাকারী (প্রায় তাদের মায়ের বয়সী)আইনজীবী সিমকী ইমামকে ধরে লাথি,চড়,কিল,ঘুষি মারতে থাকে। তার জামা ছিঁড়ে ফেলে। জাতীয় পতাকা লাগানো লাঠি দিয়েও প্রহার করে। এসময় তার গলায় থাকা স্বর্ণের চেইন এবং কানের দুলও ছিনিয়ে নিয়ে যায়। অতঃপর গণমাধ্যমকর্মীদের কয়েকজন প্রায় অর্ধ নগ্ন অবস্থায় তাকে উদ্ধার করেন। পরবর্তীতে দেখা যায়, সিমকী ইমামের পুরো শরীরই প্রায় থেঁতলে গেছে।
(৪)
নাদিয়া শারমিনের উপর হামলার পর হেফাজতে ইসলামকে দায়ী করে সুশীল সমাজ ধর্মীয় উগ্রবাদীদের পাশবিকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন। যদিও ঐ ঘটনার জন্য প্রকৃতপক্ষে হেফাজত দায়ী কিনা কেউ খুঁজতে জাননি।
সিমকী ইমামের উপর হামলার পর মানবাধিকার সংগঠন, সুশীল সমাজ অনেকটা নীরব। কারণ, হামলাকারীরা “মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তি”!
দলান্ধদের বক্তব্য, বিএনপি যেহেতু জামায়াতের সাথে জোটবদ্ধ। সুতরাং বিএনপি কর্মীদের উপর হামলা অনেকটা যুদ্ধে প্রাপ্ত গনিমতের মালের ইচ্ছেমতো ব্যবহারের মতো! নারী বলে আলাদা কিছু ভাবার কি দরকার!
সুশীল সমাজের বক্তব্য, যেহেতু বর্তমান অবস্থা অনেকটা যুদ্ধের মতো। আর যুদ্ধে কে পুরুষ কে নারী দেখা হয় না। সুতরাং সিমকী ইমামের উপর হামলা অতি স্বাভাবিক ঘটনা! সিমকী ইমামের আরো সতর্ক থাকা উচিত ছিলো ব্লা ব্লা ব্লা।
(৫)
সবকিছু দেখে সাধারণ মানুষ হিসেবে আমাদের ভাবনায়, সুশীল নামধারী মানবতার ঠিকাদারদের নর্দমার কীট ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে ইচ্ছে করে না। নাদিয়া শারমিনকে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের সৈনিক আর সিমকী ইমামকে গণিমতের মাল যারা ভাবতে পারে, তাদের কাছে মা,বোন আর স্ত্রীর মধ্যে পার্থক্যের ক্ষমতা আছে কিনা আমি সন্দিহান। স্বার্থের জন্য এই শ্রেণী যেকোনো কিছু করতে সক্ষম।
নর্দমার কীটকে পা দিয়ে পিষে ফেলতে কারো খারাপ লাগে না। কারণ তা মূল্যহীন ও ক্ষতিকর। সিমকী ইমামের উপর হামলায় তোমাদের স্বার্থপরতা, অন্ধের মতো আচরণ জানিয়ে দিলো, দেশপ্রেমের নামে সবকিছু তোমাদের ভাঁওতাবাজি। “মানুষ বাঁচলে দেশ” এই সত্যে তোমরা বিশ্বাসী নও। অতএব মনুষ্যত্বহীন তোমাদের নর্দমার কীটের চাইতে বেশি কিছু ভাবতে পারছি না। ওয়াক থুঃ……….. > লেখক : নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। ১ জানুয়ারি, ২০১৪ ফেসবুকে প্রকাশিত ইস্টিশন ব্লগে প্রকাশিত