কুরবানী কোরআন এবং হাদীস দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত। সুরা কাওসারের ২-নং আয়াত,সুরা আনয়ামের ১৬২-নং আয়াত,সুরা হজ্বের ৩৪-নং আয়াত এবং সুরা বাকারার ১৯৬-নং আয়াতে সুস্পষ্টভাবে কোরবানির বর্ণনা এসেছে।
বুখারি,মুসলিম,তিরমিযি,মুয়াত্তা মালিক সহ সবগুলো হাদিসের কিতাবের অগণিত হাদিসের মধ্যে কোরবানির বিবরণ এসেছে।
মানব ইতিহাসের সর্বপ্রথম কুরবানী হযরত আদম (আ:)-এর দুই পুত্র হাবিল ও কাবিলের কুরবানী। তবে প্রচলিত কুরবানী হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর সেই মহান ত্যাগ এবং ভালবাসার স্মরণেই হয়ে থাকে। আল্লাহর নির্দেশ পালনার্থে স্বীয় সন্তান ইসমাইল (আঃ)-এর গলায় ছুরি চালিয়েছিলেন। আল্লাহ তা’আলার ইচ্ছা ছিল স্বীয় নবী ইব্রাহিমকে পরীক্ষা করা। ইব্রাহীম (আঃ) সেই পরীক্ষায় পরিপূর্ণরূপে সফল হন।
কুরবানীকে আরবী ভাষায় ‘উযহিয়্যা’ বলা হয়। ‘উযহিয়্যা’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হল,ঐ পশু যা কুরবানীর দিন যবেহ করা হয়। শরী’আতের পরিভাষায়,আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট পশু যবেহ করাকে কুরবানী বলা হয়।
>কুরবানীর গুরুত্ব ও ফযীলত।
নেক আমলসমূহের মধ্যে কুরবানী একটি বিশেষ আমল। আল্লাহর রাসূল (সাঃ) সব সময় কুরবানী করেছেন এবং সামর্থ্য থাকা স্বত্বেও কুরবানী বর্জনকারী ব্যাক্তির প্রতি সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন।
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে আছে : রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,যে ব্যাক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানী করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।
হযরত যায়েদ ইবনে আরকাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত : তিনি বলেন,রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন এ কুরবানী কী? তিনি বললেন : ইহা তোমাদের পিতা ইব্রাহীম (আঃ) এর সুন্নত। তারা (আবার) বললেন : এতে আমাদের কি কল্যাণ নিহিত আছে? তিনি বললেন : এর প্রত্যেকটি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকি রয়েছে। তারা পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন : বকরীর পশমেও কি তাই? জবাবে তিনি বললেন : বকরীর প্রতিটি পশমের বিনিময়েও একটি করে নেকি রয়েছে।
কেবল গোশত ও রক্তের নাম কুরবানী নয়। বরং আল্লাহর রাহে নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে দেয়ার এক শপথের নাম কুরবানী।
>যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব।
প্রাপ্তবয়স্ক,বুদ্ধিমান,নিজ গৃহে অবস্থানকারী(মুসাফির নয় এমন) ব্যাক্তি যদি ১০ই যিলহজ্জ ফজর হতে ১২ই যিলহজ্জ সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয় তবে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব।
মুসাফির ব্যাক্তির উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়।
মহিলা নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব।
কুরবানী ওয়াজিব নয় এমন কোন গরিব কুরবানী করলে তা আদায় হয়ে যাবে এবং বহু সওয়াবের মালিক হবে।
বিপুল পরিমাণ সম্পদের অধিকারী হলেও একাধিক নয়,বরং একটি মাত্র কুরবানী করাই ওয়াজিব।
ঋণ করে কুরবানী করা ভালো নয়। বরং তার জন্য স্বীয় ঋণ আদায় করা কুরবানী অপেক্ষা উত্তম।
মৃত ব্যাক্তির পক্ষ থেকে কুরবানি করা জায়িয।
>কি ধরনের পশু কুরবানী করবেন।
কুরবানীর পশু ছয় প্রকার : উট,গরু,ছাগল,দুম্বা,ভেড়া,মহিষ। এ সমস্ত পশু ব্যতীত অন্য পশু কুরবানী জায়িয নেই।
ছাগল,দুম্বা,ভেড়া পূর্ণ এক বছরের হলে সেগুলো কুরবানী করা যাবে। অবশ্য যদি ছয় মাস বয়সী হয়,কিন্তু দেখতে মোটাতাজা হলে সেগুলো দিয়ে কুরবানী করা যাবে।
গরু,মহিষ পূর্ণ দুই বছর বয়সী হতে হবে। এরচেয়ে কম হলে জায়িয হবে না।
উট পাঁচ বছর বয়সের হতে হবে। এর কম হলে কুরবানী হবে না।
>কুরবানীর হুকুম।
গরু,মহিষ,উট-এই তিন প্রকার পশুর মধ্যে একটিতে সাত ব্যাক্তি অংশীদার হতে পারবে। অবশ্য শর্ত হলো কারো অংশই এক সপ্তমাংশের কম হতে পারবে না।
ছাগল,দুম্বা-এর মধ্যে একজনের অংশ আছে।
>কুরবানীর দিন ও সময়।
কুরবানীর সময়কাল হলো যিলহজ্জের ১০তারিখ হতে ১০ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত। এই তিনদিনের যে কোন দিন কুরবানী করা জায়িয। তবে প্রথমদিন কুরবানী করা সবচেয়ে উত্তম। তারপর দ্বিতীয় দিন,তারপর তৃতীয় দিন।
যিলহজ্জের ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পর কুরবানী করা শুদ্ধ নয়।
>যবেহ করার পদ্ধতি।
নিজের কুরবানীর পশু নিজের হাতে জবাই করা মুস্তাহাব। যদি নিজে জবাই করতে না পারে তবে অন্যের দ্বারা জবাই করাবে। এমতাবস্থায় সামনে দাড়িয়ে থাকা উত্তম।
যবেহ করার সময় পশুকে কিবলামুখি করে শোয়াবে অতঃপর ”বিস্মিল্লাহি আল্লাহু আকবার” বলে যবেহ করবে।
কুরবানীর সময় মুখে নিয়্যাত জরুরি নয়। তবে মনে মনে নিয়্যাত করবে যে,আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কুরবানী করছি।
যবেহ করার সময় চারটি রগ কাটা জরুরি : ১/কন্ঠনালী ২/খাদ্যনালী ৩,৪/দুই পাশের মোটা দুটি রগ। এগুলোর যে কোন তিনটি যদি কাটা হয়,তবে কুরবানী শুদ্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু যদি দুটি কাটা হয়,তবে শুদ্ধ হবে না।
যবেহ করার পূর্বে ছুরি ভালোভাবে ধার দেয়া মুস্তাহাব।
>কুরাবানীর গোশতের বিধান।
গোশত বিতরণের মোস্তাহাব পদ্ধতি হল তিনভাগ করে একভাগ গোশত নিজে খাবে। পরিবারবর্গকে খাওয়াবে। একভাগ আত্নীয় স্বজনকে হাদিয়া দিবে। অপর একভাগ গরীব ও মিসকিনকে সদকা করবে।
>কুরবানীর চামড়ার বিধান।
কুরবানীর চামড়া দান করে দিবে কিংবা নিজের জন্য ব্যবহার করবে। বিক্রি করে দিলে সেই টাকা নিজে ব্যবহার বৈধ নয়। বরং সেই টাকা বিতরণ করে দিতে হবে।
কুরবানীর পশুর গোশত কাটার কারনে বিনিময় হিশেবে পশুর চামড়া কশাইকে দেয়া জায়িয নেই। >সংকলন>: ০৮-১১-২০১১ ফেসবুকে প্রকাশিত