“হেফাজতের ১৩ দফার সাথে বিএনপি একমত নয়” বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল কদিন আগে এমন দাবী করেছিলেন। খবরটা শুনে আমি ব্যক্তিগতভাবে বেশ খুশি হয়েছি। কেননা বিএনপি যে ইসলামকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে বিষয়টা আরেকটু স্পষ্ট হলো। কিন্তু বিএনপির এই দাবীর প্রেক্ষিতে দেশবরন্য শায়খুল হাদিস নূর হুসাইন ক্বাসিমির (যার খুলুসিয়্যাত আল লিল্লাহিয়্যাত আলেম সমাজে স্বীকৃত) মতো মানুষকে দালাল বলে ইসলামী আন্দোলনের কিছু ভাই ফেসবুকে যে প্রচারণা চালাচ্ছেন, সত্যিই বিষয়টা আমাদের মতো রাজনীতি বিমুখ মানুষদের জন্য বেশ পীড়াদায়ক।
২০০১ নির্বাচন পূর্ব বিএনপির সাথে আলেম সমাজের ঐক্যের মূলে কখনোই আলেম সমাজের ক্ষমতায় যাওয়ার স্বার্থ ছিলো না। আওয়ামী শাসনের শেষলগ্নে যখন অশীতিপর বৃদ্ধ শায়খুল হাদীস ও মুফতি ফজলুল হক আমিনী (রহঃ) কে ফতোয়া বিরোধী আন্দোলনের কারণে কারাগারে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়, তখন একটু স্বাচ্ছন্দ্যে ধর্ম পালনের স্বার্থেই মন্দের ভালো বিএনপির সাথে জোট করেছিলো ইসলামী দলগুলো। জোটবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজন কতটুকু ছিলো সেটা ভালোমতোই অনুভব করেছিলেন শায়খুল হাদীস রহঃ, মুফতি আমিনী রহঃ, মুহিউদ্দীন খান দাঃ বাঃ, নূর হোসাইন ক্বাসেমি দাঃ বাঃ, মাওলানা ইসহাক দাঃ বাঃ………
এই প্রয়োজনটুকু এখনো যে পুরোপুরি ফুরিয়ে যায়নি তার বাস্তবতা তো বর্তমান সরকারের কওমি মাদরাসা বিরোধী কর্মসূচিই প্রমাণ করে।
আর যাই হোক, বিএনপি শাসনে তো আলেম সমাজকে কারাগারে থাকতে হয় না। কওমি মাদরাসাগুলো জঙ্গিদের খোঁয়াড় বলে কেউ মন্তব্য করে না। সংবিধান থেকে আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস তুলে দেয়ার সাহস করে না।
বিএনপি কখনোই দেশকে ইসলামের রঙে রাঙিয়ে তুলবে না এটি চিরন্তন সত্য। তবে মন্দের ভালো হিসেবে বিএনপিকে সমর্থন করাটা যে চূড়ান্ত পর্যায়ের খারাপ কাজ:- এমন দাবীর স্বপক্ষে প্রমাণাদি কেউ দেখাতে পারবেন বলে মনে হয় না। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, জোটবদ্ধ ইসলামী দলগুলোর নেতৃবৃন্দের কেউ কিন্তু বিএনপির সব কাজই ভালো এমন মন্তব্য করেননি। সব কাজেই বিএনপিকে সমর্থন করতে হবে এমন ফতোয়াও দেননি। বিএনপিকে কেবল বিপদের মুহূর্তের সঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। আর এই ইজতিহাদে কে সঠিক আর কে বেঠিক নির্ধারণ করার দায়িত্ব আমাদের মতো ফেসবুক ব্যবহারকারীর উপর কেউ ন্যস্ত করেনি। পীর সাহেব চরমোনাই দাঃ বাঃ এককভাবে রাজনীতি করে আলেম সমাজের অবস্থানকে পাকাপোক্ত করছেন তাতে পীর সাহেবকে সমর্থন দেয়াটাই হয়তো যুক্তিসঙ্গত। কিন্তু সমর্থন করতে গিয়ে দেশ সেরা আলেমদের প্রতি কুৎসিত মন্তব্য ছুড়ে দেয়া কি ভাবে যৌক্তিক এই প্রশ্নটি আমি তথাকথিত ফেসবুকারদের প্রতি করতে চাই? আপনার সমর্থন না থাকুক, কুৎসা রটানো জায়েয কি এটি কখনো ভেবে দেখেছেন? জায়েয নাজায়েজ ফতোয়া দেয়া বৈধ হচ্ছে কি কখনো ভেবেছেন?
কেউ যদি আমার মন্তব্যের বিপরীত মত পোষণ করেন তবে আপনি আপনার যুক্তি উপস্থাপন করতে পারেন। মনে রাখবেন, সত্যের মাপকাঠি নির্ধারণের গুরুদায়িত্ব আপনার উপর কেউ অর্পণ করেনি। তাই হয় নীরব থাকুন নয়তো যুক্তি দিয়ে আপনার মতামতকে প্রমাণিত করুন। আল্লাহ্ তায়ালা আমাদের সঠিকভাবে বুঝার তৌফিক দান করুন। ফেসবুকে প্রকাশিত