‘সাওম’ শব্দটি আরবী। সাওম শব্দের আভিধানিক অর্থ বিরত থাকা। শরীয়তের পরিভাষায় সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নিয়্যত সহকারে পাপাচার,পানাহার,কামাচার থেকে বিরত থাকাকে ‘সাওম’ বা রোযা বলা হয়।
রহমত,মাগফিরাত ও নাজাতের সওগাত নিয়ে প্রতি বছর মুসলিম বিশ্বের দ্বারে ফিরে আসে মহিমান্বিত রমযান মাস। এ মাসটি বিশেষভাবে আল্লাহর কাছে নিজেকে সোপর্দ করার মাস।
রোযার ফযীলত ও উপকারিতা।
রোযার অগণিত ফযীলত ও উপকারিতা আছে। হাদীসে এ সম্বন্ধে বিস্তারিত বিররণ রয়েছে।
হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত বুখারী শরীফে এক হাদীসে আছেঃ রাসুলুল্লাহ (সা) বলেন, রোযা ঢাল স্বরূপ। সুতরাং রোযা অবস্থায় যেন অশ্লীলতা থেকে বিরত থাকে এবং মূর্খের মত কাজ না করে। কেউ যদি তাঁর সাথে ঝগড়া-ফ্যাসাদ করতে চায় অথবা গালি দেয়, তবে সে যেন দুইবার বলে আমি রোযাদার। ঐ সত্তার শপথ যার নিয়ন্ত্রনে আমার প্রাণ, অবশ্যই রোযাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর নিকট মিশকের ঘ্রাণের চেয়েও অধিক উৎকৃষ্ট। সে আমারই জন্য পানাহার এবং কামাচার পরিত্যাগ করে। রোযা আমারই জন্য, তাই এর পুরস্কার আমি নিজেই দান করব। আর প্রত্যেক নেক কাজের বিনিময় দশগুণ।
হযরত সাহল (রা) থেকে বর্ণিত অপর এক হাদীসে আছেঃ নবী করীম (সা) বলেন, জান্নাতের মধ্যে রাইয়্যান নামক একটি দরজা আছে। এ দরজা দিয়ে কিয়ামতের দিন কেবলমাত্র রোযাদার লোকেরাই প্রবেশ করবে। তাদের ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। ঘোষণা দেয়া হবে রোযাদার লোকেরা কোথায়? তখন তাঁরা দাঁড়াবে। তাদের ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। তাদের প্রবেশের পরই দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। যাতে এ দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ না করে।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সা) বলেন, রোযা এবং কোরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোযা বলবে, হে আমার রব! আমি তাঁকে দিনের বেলা পানাহার ও কামাচার থেকে বিরত রেখেছি। তাঁর সম্পর্কে আমার সুপারিশ কবুল করুন। কুরআন বলবে, আমি তাঁকে রাতে নিদ্রা থেকে বিরত রেখেছি। তাঁর সম্পর্কে আমার সুপারিশ কবুল করুন। তখন এদের সুপারিশ কবুল করা হবে।
রোযার মধ্যে অনেক উপকার নিহিত রয়েছে।
১/ রোযার দ্বারা প্রবৃত্তির উপর মনুষ্যত্বের পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠিত হয়। কেননা ক্ষুধা ও পিপাসার কারনে মানুষের জৈবিক ও পাশবিক চাহিদা হ্রাস পায়। এতে বিবেক জাগ্রত হয় এবং অন্তর আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রতি কৃতজ্ঞতায় বিগলিত হয়।
২/ রোযার দ্বারা অন্তরে আল্লাহর ভয়-ভীতি ও তাকওয়ার গুন সৃষ্টি হয়।
৩/ রোযার দ্বারা মানুষের স্বভাবে নম্রতা ও বিনয় সৃষ্টি হয়।
৪/ মানুষের দূরদর্শিতা আরো প্রখর হয়।
৫/ রোযার বরকতে মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও মমত্ববোধ এবং পরস্পরের প্রতি ভালবাসার সৃষ্টি হয়।
৬/ রোযার দ্বারা মানুষের শারীরিক সুস্থতা অর্জিত হয়।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে রোযা রাখার তৌফিক দান করুন।