(১)
গতরাতে শাপলা চত্বরে অবস্থানরত কয়েকজন ভাইয়ের সাথে কথা বলে এবং একাধিক ভিডিও দেখে বুঝা যাচ্ছে, বিএনপি জামায়াত সহায়তার ঘোষণা দিয়ে প্রতারণা করেছে। সামান্যতম প্রতিরোধ ছাড়াই শাপলা চত্বরে আক্রমন করে আমার ভাইদের শহীদ করেছে আওয়ামী পুলিশ,র্যাব,বিজিবি।
এখন বিশ্লেষণ করার মতো কেউ হয়তো স্বাভাবিক নই। তবে একটু স্বাভাবিক হলে ভেবে দেখবেন, আমরা এমন কোনো বৈদেশিক শক্তির স্বার্থের বলি হইনি তো, আওয়ামী,বিএনপি,জামায়াত সবাই যাদের বন্ধু।
(২)
হাটহাজারী সর্বশেষ পরিস্থিতি এবং পূর্ন আপডেট:-
সকাল থেকে সড়ক অবরোধ এবং মুহুর্মূহু শ্লোগানে মুখরীত ছিল হাটহাজারী রাঙ্গামাটি, হাটহাজারী খাগড়াছড়ি সড়ক,
দুপুর ১.৩০ এ মাদ্রাসায় ঢুকলাম, অনেকটা জোর করেই দু মুঠো ভাত খেলাম, এর পর মাথায় প্রচন্ড ব্যাথার কারনে একটু ঘুমানোর চেষ্টা করলাম, তাও ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে! কিন্তু চোখে বারবার ভেসে উঠলো কাল রাতের শাপলা চত্বরের ভিডিও ফুটেজের দৃশ্য……
:::-
আনুমানিক ৩ টার দিকে প্রচন্ড শব্দে বিছানা ছেড়ে উঠলাম, পরিস্হিতি বুঝতে বেশি সময় লাগল না, সাথে সাথেই চোখের জ্বালাপোড়ায় বুঝতে পারলাম ঘটনা কি, চোখে মুখে পেষ্ট লাগিয়ে লাঠিটা নিয়ে গেটের সামনে গেলাম, কিন্তু হায় গেট বন্ধ, পরে পেছন থেকে দেয়াল টপকে বের হলাম, একটু এগোতেই কাচাড়ী সড়কের সামনেই পুলিশ দেখে অনেকটা হতভম্ব হয়ে গেলাম, লাঠিটা নিয়ে গেল পুলিশ, দুই তিনটা বাড়ি দিয়ে বিদায় দিয়ে দিল, এর পরেই ধিরে ধিরে পরিস্হিতি চরম অবনতিতে গেল, শুরু হল রাবার বুলেট আর টিয়ারশেলের নগ্ন আক্রমন, চোখের সামনেই হাটহাজারী মন্দিরের সামনে একটা ছেলের মাথায় রাবার বুলেটের আক্রমন কেড়ে নিল তার তাজা প্রান, উল্যেখ্য ছেলেটা দাওড়ায়ে হাদীসের ছাত্র, সিলেট বাড়ি, এর পর জনতা চরম উত্তেজনায় পাল্টা প্রতিরোধে আসে, তবে কোন লাভ হয়নি,
শেষ ফলে যা হবার তাই হলো!
৩ জন শহিদ, ২০/২৫ জন আহত, নিজেকে আর ধরে রাখতে পারছিলাম না, মাথা ঘুরে পরে যেতে লাগলাম, পরে এক ভাই ধরে মাদ্রাসার ভেতরে নিয়ে আসলো, অনেকক্ষন শুয়ে থেকে একটু স্বাভাবিক হয়ে স্টাটাসটা লিখলাম, এখন পর্যন্ত পরিস্হিতি উত্তপ্ত একটু পর পর ফাঁকা গুলি এবং টিয়ারশেলের আঘাতে মানবতার আর্তচিত্কার কানে ভেসে আসছে…..
কি বলবো কি করবো হিসাব মেলাতে পারছি না, একটু দোয়া করবেন, রাতটা হয়ত নির্ঘূম কাটবে কারন কিছু একটা ঘটতে পারে রাতে….. লিখেছেন> হাসিব আর রহমান
(৩)
চট্রগ্রাম থেকে আবু সাঈদ মোহাম্মাদ উমর এইমাত্র ফোনে বললেন, হাটহাজারিতে এখনো পর্যন্ত ৮ জন ভাই শাহাদত বরণ করেছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এদের মধ্যে সিলেটের জাহিদ নামের এক ভাই, যিনি এবার দাওরায়ে হাদিসে অধ্যয়নরত ছিলেন, শাহাদত বরন করেছেন। এখনো পর্যন্ত পরিস্থিতি উত্তপ্ত। এদিকে আবহাওয়া অনুকুলে না থাকায় আহমদ শফি হাফিজাহুল্লাহকে বহনকারী প্লেন এখনো পর্যন্ত চট্রগ্রামের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেনি।
(৪)
যতোটুকু জানতে পেরেছি, মাওলানা জুনাইদ আল হাবিব এবং মাওলানা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী (দাঃ বাঃ) সহ আরো কিছু নেতৃবৃন্দের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। বিভিন্ন পেইজে অনেকেই সঠিক সংবাদ জানতে চেয়েছেন। কেউ সম্ভব হলে সঠিক তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করুন।
(৫)
গতরাতের ঠিক এই সময়টাতে আমি শাপলা চত্বরের অস্থায়ী মঞ্চের সামনে ছিলাম। তখন একটু পরপরই ককটেল বিস্ফোরণের আওয়াজ শুনা যাচ্ছিল। তৌহিদি জনতার ঈমানী আবেগ উপচে পড়ছিলো। শাপলা চত্বরের এই ভূমি আজ হাজারো শহীদের রক্তে রঞ্জিত। অথচ আমার মতো অনেকেই এখন নিরাপদে ঘরে বসে আছে।
প্রায় ৬০ ঘণ্টা পর ভাত খেতে গিয়ে দেখলাম,গলা দিয়ে ভাত যাচ্ছে না। ক্ষমা করো আমার শহীদ ভাইয়েরা; হয়তো এরচেয়ে বেশি কিছু দেয়ার মতো সামর্থ্য আমাদের মতো মানুষদের নেই।
(৬)
চট্টগ্রামে পৌঁছার পর কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা আহমদ শফীকে হাটহাজারীতে দারুল উলুম মইনুল ইসলাম মাদ্রাসায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আল্লামা শফী ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ।
রাত ৮টায় তাকে বহনকারী একটি সাদা মাইক্রোবাস চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে হাটহাজারী মাদ্রাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। মাইক্রোবাসের আগে পেছনে ৠাব ও পুলিশের একাধিক গাড়ি আছে। শফীকে বহনকারী গাড়িতে চালকসহ মোট ৯ জন আছে।
হেফাজতের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার নেতা জালাল উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘হুজুরকে হাটহাজারী মাদ্রাসায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখানে পৌঁছানোর পর সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে।’
সোমবার সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে আহমদ শফীকে বহনকারী বেসরকারী রিজেন্ট এয়ারওয়েজের ফ্লাইট চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। এর আগে আবহাওয়ার কারণে কয়েক দফা যাত্রা বিঘ্নিত হওয়ার পর ফ্লাইটটি সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করে। বিকেল সাড়ে তিনটায় ফ্লাইটটি ছাড়ার কথা থাকলেও চট্টগ্রামের আবহাওয়া খারাপ থাকায় পাঁচ দফা তার ফ্লাইট পেছানো হয়। সুত্রঃ বাঙলা নিউজ
(৭)
Bukair Ahmed ভাই জানালেন, আল্লামা বাবুনগরীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল একটু পূর্বে তাঁকে গ্রেফতার করেছে।
(৮)
আমি অশ্রুসিক্ত! আমি বাকরুদ্ধ!!
বেঁচে আসা প্রত্যক্ষদর্শির কাছ থেকে শুনুন গতরাত্রের নারকীয় তান্ডবের বর্ণনাঃ-
আমার পুরাতন সহপাঠি। তার নাম নাজমুল ইসলাম। এ বছর তিনি সিলেটের আঙ্গুরা মাদ্রাসার মিশকাত জামাতে পড়ছেন। মাগরিবের পূর্বে হঠাৎ তার সাথে দেখা। জানালেন এইমাত্র তিনি ঢাকা থেকে সিলেট এসে পৌঁছেছেন। গতরাত্রের আক্রমনের সময় তিনি শাপলা চত্বরের সমাবেশ স্থলে উপস্থিত ছিলেন। হঠাৎ মাইকিং শুনেন দশ মিনিটের মধ্যে অবস্থান স্থল ত্যাগ করার জন্য। কিন্ত্ত তারা অনড় ছিলেন। এ সময় স্টেজের মাইক হাতে নেন জুনাইদ আল হাবিব সাহেব। পরক্ষণেই একসাথে হামলা করে কয়েকহাজার বিজিবি, র্যাব, পুলিশ ও সরকারের পোষা গুন্ডা বাহিনী। প্রথমেই তারা জলকামান ও ব্রাশফায়ার করে স্টেজের দিকে। সাথে সাথে মাইক বন্ধ হয়ে যায়। শুরু হয় এলোপাথাড়ি গুলি। পিচঢালা পথে রক্ত এবং গরম পানিতে তার টাখনো পর্যন্ত ডুবে যায়। পালাতে গিয়ে স্টেজের দিকে দৌঁড় দেন এবং কয়েকজন মিলে সেখান থেকে পড়ে থাকা দশটি লাশ নিয়ে মতিঝিল জামিউল উলুম মাদ্রাসা-মসজিদের দ্বিতীয় তলায় আশ্রয় নেন।তখন দেখতে পান তন্মোধ্যে একটি লাশ হলো জুনাইদ আল হাবিব সাহেবের। আমার বিশ্বাস না হওয়ায় বারবার তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেনঃ ভাই! আমি নিজহাতে তাঁর চেহারা হাতিয়ে দিয়েছি। তাঁর লাশ দেখে সবাই কান্নায় ভেঙে পড়ছিলাম। তিনিসহ সহস্রাধিক মানুষ সেখানে অবরুদ্ধ ছিলেন। সকাল নয়টার দিকে তারা কয়েকজন গায়ের পাঞ্জাবি খোলে লুকিয়ে সেখান থেকে বের হয়ে দ্রুত পলায়ন করেন। তিনি কাঁপাকন্ঠে বারবার বলছিলেনঃ ভাই! আমি নিজ চোখে দেখেছি কয়েক হাজার মানুষ শাহাদাত বরণ করেছেন। লাশগুলো গুম করা হয়েছে। লিখেছেন> হামিদ বিন গনী
(৯)
এইমাত্র প্রাপ্ত সংবাদে জানতে পারলাম শায়খুল ইসলাম আল্লামা আহমদ শফি হাফিজাহুল্লাহ হাটহাজারি মাদরাসায় পৌঁছে গেছেন।
(১০)
স্ট্যাটাস দেয়া আপাতত বন্ধ। তবুও বিশেষ গুরুত্ব বিবেচনায় এই স্ট্যাটাসটা দিলাম।
একজন সাংবাদিক ভাই জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ নিখোঁজ বা নিহত হওয়ার সংবাদ সত্য নয়। তাদের প্রায় সবাই জীবিত আছেন। কেউ কেউ আহত অবস্থায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। আপাতত বিশেষ কারনে অবস্থানস্থল গোপন রাখা হয়েছে। সুতরাং কেউ বিভ্রান্তি ছড়াবেন না এবং বিভ্রান্ত হবেন না। আল্লাহ তায়ালা আমাদের হিফাজত করুন।