ভুমিকাঃ নারী নেতৃত্ব নিয়ে উলামাদের দ্বন্দ্ব বেশ পুরনো। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম,বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস,ইসলামি মোর্চা,নেযামে ইসলাম পার্টি সহ কয়েকটি দল ইসলামী ঐক্যজোটের নামে নারী নেতৃত্ব মেনে বিএনপির সাথে জোটবদ্ধ হয়েছিলো। এদের মধ্য থেকে কিছু দল জোট ত্যাগ করলেও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম,খেলাফত মজলিস সহ আরো কিছু দল এখনো বিএনপির সাথে জোটবদ্ধ।
অপরদিকে চরমোনাই পীর সাহেবের দল ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন নারী নেতৃত্ব মানতে পারেনি। সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদের জাতীয় পার্টির সাথে তারা একসময় জোটবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে একাই রাজনীতির মাঠে আছে।
যখন বিএনপির সাথে আলেম সমাজ জোটবদ্ধ হন,তখন ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান ছিলেন শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক (রহঃ) এবং মহাসচিব ছিলেন মুফতি আমিনী (রহঃ)। নারী নেতৃত্ব হারাম কথা সত্য। কিন্তু যে মুহূর্তে ইসলামী ঐক্যজোট বিএনপির সাথে জোটবদ্ধ হয়েছিলো তার পূর্বমুহূর্ত স্মরণ করে অনেক সমালোচক নিজেকে ইসলামী দলগুলোর সমালোচনা থেকে নিবৃত রেখেছিলেন। আওয়ামী সরকার তাদের বিগত শাসনামলের শেষমুহুর্তে অতশীপর বৃদ্ধ শায়খুল হাদিস রহঃ এবং মুফতি আমিনি রহঃ কে কারাগারে বন্দী করে নির্যাতন করেছিলো। ফতোয়া নিষিদ্ধ করার অপপ্রয়াস চালিয়েছিলো।
ইসলামের উপর মুহুর্মুহু আক্রমণ প্রতিরোধের ক্ষমতা উলামায়ে কেরামের ছিলো না। ফলে বাধ্য হয়ে নারী নেতৃত্ব মেনে বিএনপির সাথে জোট করতে হয়েছিলো। বিষয়টি উলামায়ে কেরামের ইজতিহাদি সিদ্ধান্ত। অপরদিকে শরীয়তে সুস্পষ্টভাবে নারী নেতৃত্ব হারাম ঘোষিত হয়েছে। ফলে যারা নারী নেতৃত্বকে হারাম বলছেন তাদের অবস্থানও যথার্থ। নারী নেতৃত্বের পক্ষে বিপক্ষে যারা আছেন,তাদের প্রত্যেকের যোগ্যতা ঈর্ষনীয়। আল্লাহ তায়ালা ভালো বলতে পারবেন কারা হক্বের উপর অবিচল।
উলামায়ে কেরামের এই মতবিরোধকে ঘিরে বর্তমান সময়ে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সমালোচনার একটা হিংস্র প্রবণতা গড়ে উঠেছে। প্রত্যেকেই নিজ দলের বড়ত্ব বুঝাতে অপর দলের শ্রদ্ধাভাজন আলেমদের সম্পর্কে অবমাননাকর শব্দ ব্যবহার করছে। অথচ হারাম হালালের এই বিষয়টি রাজনীতির সাথে নয় শরিয়তের সাথে সম্পর্কিত। যারা হালাল বলছেন,সেটা তাদের ইজতিহাদ প্রসূত। অন্যদিকে যারা হারাম বলছেন তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আছে। এখন যদি কেউ বিষয়টিকে রাজনৈতিক রূপ দিয়ে দেখতে চান,(আল্লাহ ক্ষমা করুন) তবে নিশ্চিত তাকে আমাদের শ্রদ্ধেয় আকাবিরদের সম্পর্কে কুৎসিত মন্তব্য করতে হবে। তাঁদের ক্ষমতালোভি বলতে হবে। অথচ আমরা কোনোক্রমেই যোগ্যতা রাখি না,এমন মানুষদের সম্পর্কে কটূক্তি করার।
সবচেয়ে সহজ উপায় যেটা আমার কাছে মনে হয়; আমি যদি মনে করি ইসলামের স্বার্থে বিএনপির সাথে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করা প্রয়োজন। তবে আমি জোটের অন্তর্ভুক্ত কোনো দলকে সমর্থন করবো। যদি আমার বিবেক আমায় নারী নেতৃত্ব মানতে নিষেধ করে,তবে পীর সাহেব চরমোনাই’র দল সমর্থন করবো। এই সমর্থনে অপরের জন্য থাকবে শ্রদ্ধা,ভালোবাসা। মাযহাবের ইমামগণ যেরূপ বিরোধিতা করেও একে অপরের জন্য শ্রদ্ধা ভালোবাসার এক অনুপম দৃষ্টান্ত পৃথিবীর বুকে স্থাপন করে গেছেন।
আমাদের নীতি এমন হবে যে,কেউ যদি মুফতি আমীনি (রহঃ) কে গালি দেয় তবে আমি তা সহ্য করবো না। মাওলানা ফজলুল করীম পীর সাহেব চরমোনাই (রহঃ) কে গালি দিলেও আমার তা সহ্য হবে না।
বিবেক আল্লাহ প্রদত্ত মানুষের জন্য এক অনুপম নিয়ামত। তবুও আমরা বিবেককে অন্ধকার গৃহে বন্দি করে অন্ধের মতো চলতে পছন্দ করি। ইসলামী রাজনীতির নামে নিজেকে অন্ধ অনুসারী বানিয়ে নিয়েছি। ইসলাম আলো ছড়াতে এসেছে। কেউ যদি অন্ধ থাকতে চায়,যতোই দাবী করুক সে প্রকৃত ইসলামের অনুসারী হতে পারবে না। ১৫ এপ্রিল ২০১৩