পরিচিত এক জ্ঞানী ব্যক্তি,(যাকে মন থেকে সম্মান করি) নাম প্রকাশ করতে মন চাইছে না। কিছুদিন পূর্বে একটা নোটে বিভিন্ন বিষয়ের সাথে তাবলীগ জামাত সম্পর্কে নিম্নোক্ত কথাগুলো বললেন। ইতিপূর্বে লেখার কিছু অংশ পড়ে মন খারাপ হয়েছিলো,সেদিনও হলো। যদিও লেখতে জানি না,তবুও মনে হলো সাধ্যানুযায়ী কিছু লিখা উচিত। সময় সুযোগ করে আরো লেখবো ইনশাল্লাহ।
———————————————
১) “বলা যায় মুসলিম জাতি হলো একটি তাবলীগী জাতি। অতএব মুসলিম জাতির মধ্যে বিশেষ এক জামায়াত গঠন করে একে ‘তাবলীগ জামায়াত’ বলে অভিহিত করা, অতঃপর এ জামায়াতের জন্যে নতুন করে নির্দিষ্ট সংখ্যক উসুল ও নতুন কর্মকৌশল তৈরি করা এবং এ জামায়াতের সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট নন তাঁদেরকে তাবলীগ-বহির্ভূত ভাবা এসব নিতান্তই হাস্যকর ও প্রশ্নবিদ্ধ ব্যাপার।”
১) আপনার কথাগুলো রীতিমতো হাস্যকর! কর্মকৌশল হিসেবে নতুন উসুল তৈরি করা কি শরীয়ত বিরোধী? আর নির্দিষ্ট সংখ্যক উসুল তৈরির মাধ্যমে ইসলামের পাঁচ স্তম্ভকে অস্বীকার করা হয়েছে কি?
যারা কাজ করবে তারা ঠিক করবে কাজ কিভাবে করবে। নাম উপযুক্ত মনে হয়েছে বলেই তাবলীগী জামাত রাখা হয়েছে।
শরীয়ত বিরোধী কাজ হলে সেটা হয়তো বাইরে থেকে সংশোধনের উদ্দেশ্যে বলা যেতে পারে। অন্যতায় শুধু নিজের চিন্তা ভাবনা প্রচারের উদ্দেশ্যে মন্দ আলোচনা বৈধ হওয়ার কোন কারণ আমার জানা নেই।
———————————————
২) এদের কর্মপদ্ধতি রাসূল সা. ও সাহাবা কিরামের কর্মপদ্ধতি থেকে অনেকাংশেই ভিন্ন। বৌদ্ধ ভিক্ষু ও সন্ন্যাসীদের মতো এরা গৃহত্যাগী ও কৃচ্ছ্রসাধন।
২) কর্মপদ্ধতি ভিন্ন বলেই শেষ! রাসূল (সা.) থেকে প্রমাণিত এমন কোনো কর্মকে কি এরা অস্বীকার করে! প্রমাণ করতে পারবেন?
আমি কয়েকবার তাবলীগে গেছি। এরা নামাজ পড়ার কথা বলে! রোযা রাখার কথা বলে! ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনের কথা বলে! এগুলো কি রাসূল সা. ও সাহাবা কিরামের কর্মপদ্ধতি থেকে অনেকাংশেই ভিন্ন।
দ্বীনের কাজ যে বা যারা করছেন,ব্যক্তি বাঁ দল রাসূলের সব কাজ করছেন এমনটি বিশ্ব চষে বেড়ালেও খুঁজে পাবেন না। যারা জিহাদ করছেন তাঁদের পক্ষে ইলম অর্জন সম্ভব হচ্ছে না। যারা রাজনীতি করছেন তাঁদের পক্ষে দাওয়াতের কাজ সম্ভব হচ্ছে না। সুতরাং অনেকাংশে ভিন্ন বলে কেবল সন্দেহ বৃদ্ধি করাই সম্ভব। প্রমাণ করার মতো কিছুই খুঁজে পাবেন না।
এদের কাজই হচ্ছে মানুষকে দাওয়াত দেয়া। ঘরে বসে দাওয়াত দেয়া সম্ভব নয় বলেই তারা বাইরে যায়। এজন্য কি তাদের বিধর্মীদের সাথে তুলনা করতে হবে! এদের প্রায় ১০০% মনুষ্য সমাজে বাস করে। এদের সংসারও আছে। এরপরও এদের গৃহত্যাগী কিভাবে বলা যায় বুঝতে পারলাম না! প্রতিমাসে ৩ দিনের জন্য এরা বাইরে যায়। এজন্য বৌদ্ধ আর সন্ন্যাসীর সাথে তুলনা করাটা বিবেক সমর্থিত নয়।
মসজিদে বসে দ্বীনের পথে আহবান করাও আজকের সমাজে কৃচ্ছ্রসাধন হয়ে যায়! হায় আফসোস।
———————————————
৩) এরা নিজেদেরকে ছাড়া অন্য সব মুসলিমকে ‘বহুৎ ফায়দা’ থেকে বঞ্চিত ও ক্ষেত্র বিশেষে পাপী মনে করে। যেমন দলটির প্রতিষ্ঠাতার লেখা ‘মালফূযাতে ইলিয়াস’ কিতাবের ৪২ নং মালফূয হলো – ‘যারা তাবলীগ করে না এবং তাবলীগ করতে সাহায্য করে না তারা মুসলমান নয়।’ এখানে বিবৃতিকারী ‘তাবলীগ’ শব্দ দ্বারা নিজের দলের বদলে নবী-রাসূলদের আনীত ও প্রচারিত ইসলামী তাবলীগ উদ্দেশ্য করে থাকতে পারেন, তবু কথাটি দ্ব্যর্থবোধক ও যথেষ্ট বিভ্রান্তিকর।
৩) “অন্য সব মুসলিমকে ‘বহুৎ ফায়দা’ থেকে বঞ্চিত ও ক্ষেত্র বিশেষে পাপী মনে করে।”‘ কথাটা বাস্তব হয়ে থাকলে নিঃসন্দেহে মেনে নেয়া যায় না। তবে আপনি কোন প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেননি। অতএব এখনো পর্যন্ত আমি কথাগুলো মিথ্যা বলে মনে করি। আর সরাসরি তাদের কারো মুখ থেকেও শুনিনি যে অন্য সব মানুষ যারা কি না দ্বীনের কাজে লিপ্ত আছে, বহুত ফায়দা থেকে বঞ্চিত বলে দাবী করেছেন।
বিশ্ব ইজতেমা এবং মারকাজের সাপ্তাহিক বয়ানে উলামায়ে কেরামের সম্মান করা নিয়ে দীর্ঘ বয়ান করা হয়। মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহঃ),মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানী (রহঃ) প্রচলিত তাবলীগে সময় দিয়েছেন বলে জানা যায় না। তবে তাঁদের সমর্থন ছিলো এমন ভুরি ভুরি প্রমাণ আপনি খুঁজে পাবেন। তাবলীগ ওয়ালারা কখনোই তো তাঁদের অসম্মান করেননি।
ইলিয়াস (রহঃ) একাধিকবার তাঁর দলবল সহ হুসাইন আহমদ মাদানীর রাজনৈতিক সমাবেশে যোগ দিয়েছেন বলে বিভিন্ন বইয়ে পাওয়া যায়! যদি আপনার কথা মেনে নেই তবে কিভাবে তিনি মাদানী (রহঃ) এর সমাবেশে যোগদান করলেন?
হ্যাঁ,যারা নামেই শুধু মুসলমান,তাদের পাপী মনে করাটা কি ভুল? যদি নামধারী মুসলমানদের ব্যাপারে বলে থাকেন তবে একেবারে অবাস্তব বলেননি।
“যারা তাবলীগ করে না এবং তাবলীগ করতে সাহায্য করে না তারা মুসলমান নয়।’” কথাগুলো আপনার কাছে যথেষ্ট বিভ্রান্তিকর লাগতে পারে। আমি যতটুকু বাংলা পড়তে পারি, সে হিসেবে কথাগুলো সুস্পষ্ট বলেই মনে হয়েছে। তাবলীগ দ্বারা কেবল প্রচলিত তাবলীগ উদ্দেশ্য নয় এটা নিঃসন্দেহে বলে দেয়া যায়।
তাছাড়া ইলিয়াস (রহঃ) তাঁর সম-সাময়িক ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে নিরীহ ছিলেন। কিভাবে সন্দেহ বশত তাঁর উপর খারাপ ধারণা করতে পারি।
———————————————
*ক্ষেত্রবিশেষ কঠোর ভাষা ব্যবহার করায় আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। February 1, 2013