মানুষ স্বীয় স্রষ্টা ও মালিককে দেখেনি। কিন্তু মানুষের স্বভাবের মধ্যে স্বীয় স্রষ্টার বিশ্বাস জন্মলগ্ন থেকে সংরক্ষিত। মানুষের জীবনে যখনি কোন আনন্দের মুহূর্ত আসে, তখনি তার চেহারায় খোদার প্রতি কৃতজ্ঞতার ঝিলিক দেখা যায়। আবার যখনি কোন বিপদে পতিত হয়, তাঁর হাত এই অদৃশ্য সত্ত্বার দিকেই সাহায্যের জন্য উত্তোলিত হয়। খোদার প্রতি ভালবাসা,ভয় এবং বিপদাপদে খোদার কাছে সাহায্য চাওয়া মানব জীবনের এমন স্বভাবজাত বিষয় যে, খোদাবিশ্বাসী মানুষের মধ্যে থেকে পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কাউকে খুজে পাওয়া যাবে না, যে উক্ত স্বভাব থেকে মুক্ত।
তবে মানুষের স্বভাবের মধ্যে যৌবনের উচ্ছলতা এবং মাযহাব প্রীতির কারনে ভ্রান্ত বিশ্বাস সৃষ্টি হয়ে থাকে। ইহুদীরা যেমন এক খোদাকে দুই খোদা বানিয়েছিল,খৃস্টানরা তিন খোদা বানিয়েছিল,আর হিন্দুস্তান পৌঁছেতো খোদার সংখ্যা প্রায় তিন কোটি পর্যন্ত হয়ে গেছে। আগুন,পানি থেকে শুরু করে মানুষের সৃষ্ট একেবারে সাধারন বস্তুও খোদার তালিকায় রয়েছে। খোদার এই বিশাল তালিকা নিঃসন্দেহে যুক্তির বিরোধী। তবে উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথা অবশ্যই বুঝা যায় যে, খোদাকে পাওয়া এবং তাকে সন্তুষ্ট রাখার আগ্রহ মানুষের জন্মগত স্বভাবজাত বিষয়। অবাস্তব নয় যে মানুষের এই স্বভাবের প্রতি লক্ষ্য করেই আল্লাহ তায়ালা কোরআনে কারীমে বলেছেন “মানুষ যখন রুহের জগতে ছিল, আল্লাহ তায়ালা সমস্ত আত্মাকে লক্ষ্য করে বললেনঃ আমি কি তোমাদের প্রভু নই? উত্তরে সবাই বললঃহ্যা,আপনিই আমাদের প্রভু। (সূরা আরাফঃ১৭১)।
তবে কিছু মানুষ মিথ্যা যুক্তির পিছনে ছুটতে গিয়ে খোদাকে অবিশ্বাস করে বসেছে। কিন্তু এদের সংখ্যা এত অল্প যে একেবারে নেয় বললেই চলে। পৃথিবীতে মানুষ কিভাবে আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলবে, কিভাবে নিজের জীবনকে সুন্দর ও সফল করবে, এসব বিষয়াদি নিয়মতান্ত্রিকভাবে পরিচালনার জন্য একদিকে আল্লাহ স্বীয় রাসুলদের এবং তাদের মাধ্যমে আসমানী গ্রন্থ সমূহ প্রেরণ করেছিলেন, অপরদিকে সৃষ্টি জগতকে এত সুশৃঙ্খল ভাবে পরিচালিত করছেন, যাতে মানুষ আল্লাহর একত্ববাদ সম্বন্ধে অবিশ্বাসী না হয়। কারণ স্রষ্টা একাদিক হলেই তাদের মধ্যে ঝগড়া বাধতই। কিন্তু পৃথিবীর বাহ্যিক ঘূর্ণন দেখে কেউ একথা বলতে পারবে না যে পৃথিবী ভুল পথে পরিচালিত হচ্ছে।
ইসলাম ধর্ম একত্ববাদ শিক্ষা দেয়। কল্যান,শান্তি এবং প্রকৃত সুখ একমাত্র ইসলামের মধ্যেই নিহিত। ধর্ম বিশ্বাসীদের মধ্যে থেকে যারা একত্ববাদে বিশ্বাসী নয়, তারা বলে ইসলামের খোদা শুধু ভয় প্রদর্শনকারী এবং অত্যাচারী। যিনি সব সময় শুধু জাহান্নামের ভয় দেখান। বাস্তবেই কী তাই? এর বিপরীতে ইহুদী,খ্রিস্টানরা যে খোদায় বিশ্বাসী,তিনি শুধু মানুষকে ভালবাসেন, তাদের বিপদাপদ থেকে রক্ষা করেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এর বিপরীত। মুসলমানরা স্বীয় খোদাকে রহমান এবং রহীম হিসেবে জানে এবং বিশ্বাস করে। একটু চিন্তা করুন! কোরআনে কারীমের প্রথম সূরা “সূরায়ে ফাতেহা”। যার প্রথম আয়াতের মধ্যেই “আল্লাহ তাআলা বলেছেন : ‘‘সমস্ত প্রশংসা এক আল্লাহর জন্য,যিনি সৃষ্টি জগতের প্রতিপাল’’। কোরআনে কারীমের মধ্যে “প্রতিপালক” শব্দটি আরবী ভাষায় “রব” হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। সন্তানের জন্য মায়ের ভালবাসার চাইতেও বেশী “রব” শব্দের মধ্যে ভালবাসা ও দয়া রয়েছে। এছাড়াও কোরআন এবং হাদিসের মধ্যে আল্লাহ তায়ালার যেসব পবিত্র নামসমূহের বর্ণনা এসেছে, সেগুলো দেখলেই বোঝা যায় আল্লাহর ভয় প্রদর্শনকারী নাম এত অল্প যে সেগুলো হাতে গুনা সম্ভব। কিন্তু এর বিপরীতে আল্লাহর মানুষের প্রতি ভালবাসা,ক্ষমা করা,দয়া করা ইত্যাদি গুনবাচক নাম অনেক বেশী। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) থেকে বর্ণিত : মানুষের প্রতি আল্লাহর ভালবাসা সন্তানের প্রতি সত্তরজন মায়ের ভালবাসার চাইতে অধিক। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) থেকে আরও বর্ণিত আছে,আল্লাহ বলেন : বান্দা যখন আমার দিকে এক আঙ্গুল পরিমান অগ্রসর হয়,আমি তার দিকে এক হাত পরিমান অগ্রসর হই, বান্দা যখন আমার দিকে হেটে অগ্রসর হয়,আমি তার দিকে দৌড়ে যাই। (সহীহ মুসলিম শরীফ)
হুজুর (সাঃ)আরও বলেন, আল্লাহ নিজে বলেছেন : আমার রহমত আমার আযাব থেকে অগ্রগামী।(সহীহ মুসলিম শরীফ)
সর্বোপরি জগতের সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনাই সাক্ষী দেয় যে আল্লাহ তায়ালা মানুষের উপর দয়ালু।