সাবেক আবদুল লতিফ সিদ্দীকিকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবিতে আজ রোববার সারাদেশে হরতাল আহ্বান করেছিলো সম্মিলিত ইসলামী দল। যে দাবিকে কেন্দ্র করে আজকের হরতাল, নিঃসন্দেহে সেটি এদেশের লাখো কোটি জনতার প্রাণের দাবী। কিন্তু দাবী আদায়ের পন্থা হিসেবে হরতাল আহ্বান কতোটুকু যৌক্তিক, বিষয়টি আলোচনার দাবী রাখে।
ইসলামী দল বলতে আমরা উল্লেখযোগ্য যেসব দলকে চিনি, তার একটিও সম্মিলিত ইসলামী দলের অংশীদার নয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে ধর্মকে পুরোপুরি মেনে চলে, এমন কেউ ক্ষমতায় আসেনি। বর্তমান সরকারের ধর্ম বিদ্বেষী মনোভাব তো সুস্পষ্ট।
সবকিছু সামনে রেখে বাস্তবতার নিরিখে যদি বিশ্লেষণ করা হয়, তবে নিশ্চিত আপনি বলতে বাধ্য হবেন, সরকার আবদুল লতিফ সিদ্দীকির বিরুদ্ধে যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, নিকট অতীতের প্রাপ্তি বিবেচনায় আমদের জন্য এটি অনেক বড় পাওয়া। মন্ত্রীসভা থেকে বহিষ্কার, দলের সাধারণ সদস্যপদ খারিজ! ধর্ম বিদ্বেষী মন্তব্যের কারণে হোক আর প্রধানমন্ত্রী পুত্র সম্পর্কে কুৎসা রটনার কারণে, সরকার যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, উপস্থিত এরচেয়ে বেশি আর কীইবা প্রত্যাশা করতে পারি (যখন আমরা জানি যে, সরকার ইসলাম বান্ধব নয়)।
ইন্টারপোলের পরিপূর্ণ রূপ হচ্ছে> ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন। ইন্টারপোল হচ্ছে বিশ্বের ১৯০ টি দেশ নিয়ে গঠিত আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা। ইন্টারপোলের মাধ্যমে অপরাধীদের আন্তর্জাতিকভাবে নিয়ন্ত্রণ ও আটকের কাজটি সমন্বয় করা হয়। ১৯৮৮ খৃস্টাব্দ হতে বাংলাদেশ এ সংস্থাটির সদস্য।
সরকার চাইলেই যে কাউকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে আনতে পারে না। সরকারের বিবেচনায় যে অপরাধী, ইন্টারপোলের বিবেচনায় হয়তো সে অপরাধী নয়। যদি চাইলেই সরকার যে কাউকে দেশের বাইরে থেকে নিয়ে আসতে পারতো, তবে বঙ্গবন্ধুরা খুনিরা এতদিন দেশের বাইরে থাকতে পারতো না। তারেক রহমান লন্ডনে বসে বসে সরকার বিরোধী বক্তব্য রাখার সুযোগ পেতেন না। সুতরাং ইন্টারপোলের মাধ্যমে আবদুল লতিফ সিদ্দীকিকে গ্রেফতারের দাবী হয়তো করা যেতে পারে, হরতাল দেয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই।
এদেশে উলামায়ে কেরামের ডাকে যেসব হরতাল হয়েছে, বাংলাদেশের হরতালের ইতিহাস রচিত হলে সেগুলো উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হবে। হয়তো তাদের ইখলাসের কারণে আজও মানুষ সেই দিনগুলোকে স্মরণ করে। আজ যদি হেফাজতে ইসলামও এই দাবীতে হরতাল আহ্বান করতো, তবু বলতাম হরতালের যৌক্তিকতা নেই।
আজকের হরতাল আহবানে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উলামায়ে কেরামের ভাবমূর্তি।সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার আদালতে উপস্থিতির তারিখ ছিলো আজ। ফলে হরতাল সম্পর্কে সরকারের সবাই একবাক্যে দাবী করতে পেরেছে, বিএনপিকে সহায়তা করতেই আজকের হরতাল। আর এই দাবিকে অস্বীকারের কোনো সুযোগও নেই। জামায়াতে ইসলামী সবসময়ই সুযোগ সন্ধানী। নিজেদের নেতৃবৃন্দের জন্য লাগাতার হরতাল দিতে পারলেও রাসূল (সা:) –এর বিরুদ্ধে কটূক্তি নিয়ে তাদের আলাদা কোনো কর্মসূচী নেই। যা কিছু আছে, তা লোক দেখানো বললে খুব একটা ভুল হবে না। সুযোগ সন্ধানী জামায়াতে ইসলামী আজকের হরতালে সমর্থন দিয়েছিলো। অনেক সময় বন্ধুতার আহ্বান শত্রুতার চাইতেও ভয়ংকর হয়। জামায়াতের সমর্থনের কি দরকার ছিলো।
দিবসে যখন বাইরে গেলাম, ভেবেছিলাম কিছুটা হলেও হরতালের আভাস থাকবে। কিন্তু সবকিছু এতো স্বাভাবিক ছিলো যে, কেউ যদি আগে থেকে না জেনে থাকে, তবে আজ যে হরতাল ছিলো বুঝতে পারবে না। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের অবস্থা জানি না, তবে সিলেট শহরে কেউ পিকেটিং করেছে বলে শুনিনি।
যদি সামর্থ্যই না থাকে, তবে কি দরকার ছিলো এভাবে হরতাল ডেকে লজ্জিত হওয়ার! বিএনপি জামায়াতের স্বার্থে আমাদের অনেকেই ব্যবহৃত হয়েছেন, এখনো হচ্ছে। আগামীতেও হয়তো হবেন। শুধু একটাই অনুরোধ> এতোটা নির্লজ্জভাবে নিজেদের উপস্থাপন করবেন না। আপনাদের পকেটের স্বার্থে উলামায়ে কেরামকে ছোট বানানোর অধিকার আপনাদের নেই। আল্লাহ তায়ালা সবাইকে হিদায়ত করুক। ফেসবুকে প্রকাশিত