(পিয়াস করিম থেকে গোলাম আযম; প্রজনন যোদ্ধাদের কর্মতৎপরতার আলোকে লিখিত কাঁচা হাতের গল্প।)
ঝিলম রাজার প্রাসাদে নপুংসক একটি চাকর ছিলো। তার কাজ ছিলো রাজার হাত-পা মালিশ করা, জুতো পরিষ্কার করা ইত্যাদি। ফলে সে রাজার কাছাকাছি থাকার সুযোগ পেতো। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অন্য কর্মচারীদের উপর খবরদারী ফলাতো।
একদিন এক সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি রাজার কাছে আসলো। নপুংসক চাকরটি দরজায় দাঁড়ানো ছিলো। রাজার সাথে দেখা করিয়ে দেয়ার বিনিময়ে সে আগত লোকটির কাছে বিরিয়ানি দাবী করলো। আগন্তুক বললো; আমার দেশের রাজার সাথে আমি দেখা করবো। তুই আবার কে যে, তোকে বিরিয়ানি দিয়ে অনুমতি নিতে হবে। এই বলে লোকটি ভিতরে চলে গেলো। নপুংসক চাকরকে অপদস্থ হতে দেখে অন্য কর্মচারীরা হা হা করে হেসে উঠলো। তখন চাকরটি সবাইকে বললো; এই লোকটিকে রাজার দরবার হতে অপদস্থ করে বের করতে না পারলে আমি রাজার কিসের বিশেষ গোলাম হলাম। দেখো আমি কি করছি।
এই বলে সে দৌড়ে ভিতরে গেলো এবং ফিসফিস করে রাজাকে কিছু বললো। সাথে সাথে রাজা লোকটিকে বললেন; আপনি এখন চলে যান। পরে আপনার সাথে দেখা হবে। লোকটি হতাশ হয়ে রাজার দরবার থেকে বেরিয়ে গেলো। নপুংসক তখন রাজ্য জয়ের আনন্দে ছাগলের বাচ্চাদের মতো লাফাতে লাগলো।
বেশ কিছুদিন পর। রাজার আমন্ত্রণে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করতে পার্শ্ববর্তী জম্মু দেশের রাজা ঝিলম রাজ্যে বেড়াতে আসলেন। জম্মু রাজের আগমনে সাজসাজ রব পড়ে গেলো। নপুংসক সবকিছু দেখে জম্মু রাজের কাছে উপস্থিত হয়ে তোষামোদি শুরু করলো, যাতে তার পকেট ভারী হয়।
জম্মু রাজ ছিলেন সচেতন। নপুংসক গোলামের আচরণ দেখে তিনি তার অভ্যাস সম্পর্কে ধারণা করলেন এবং তাকে মেহমানখানা থেকে বেরিয়ে যেতে বললেন। তৎক্ষণাৎ সে বেরিয়ে গেলেও পরবর্তীতে আবার জম্মু রাজের কাছে আসলো।
তখন জম্মুর রাজা নপুংসককে একপ্রকার অপমান করে বের করে দিলেন এবং আর তার কাছ আসলে ঝিলম রাজের কাছে অভিযোগ করার হুমকি দিলেন। নপুংসকের কাঁচুমাচু চেহারা দেখে প্রহরীরা হেসে উঠলো। তখন সে বললো; দেখো আমি কি করি। আমি রাজাকে রাজদরবার থেকে লাঞ্ছিত অবস্থায় বের করে ছাড়বো।
এরপর সে ভাবতে লাগলো কিভাবে কি করা যায়। সবাইকে তো বলেছে সে রাজাকে বের করবে। কিন্তু কিভাবে কি করবে! অনেক ভেবেচিন্তে সে রসুইখানায় গেলো এবং পাচককে বলে ভোলা ডিম আর পচা মোলা সংগ্রহ করে বাইরে এসে খাওয়া শুরু করলো।
অতঃপর দ্বিপাক্ষিক চুক্তি উপলক্ষে দুই রাজা যখন একত্রিত হলেন, নপুংসক গোলামও সেখানে গেলো। আলোচনা চলাকালীন গোলাম এমন বিকট আওয়াজ ও বিদঘুটে গন্ধ সমৃদ্ধ বায়ু ত্যাগ করলো যে, অনুষ্ঠান-স্থলে অবস্থান করা কঠিন হয়ে উঠলো। কে এমন কাজ করলো জানা গেলো না। তখন বাধ্য হয়ে ঝিলমের রাজা জম্মুর রাজার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলেন এবং অন্দরমহলে নিয়ে গিয়ে চুক্তিপত্র সম্পাদন করলেন।
অন্যদিকে নপুংসক গোলাম কখনো ছাগলের বাচ্চা আবার কখনো গাধার বাচ্চার মতো লাফাতে লাফাতে বাইরে এসে বললো; দেখেছো! জম্মুর রাজাকে কিভাবে বের করলাম। সবাই যখন বললো; আরে! তুমি বললে লাঞ্ছিত অবস্থায় রাজাকে রাজদরবার থেকে বের করবে। আর এখন উল্টো আমাদের রাজা ক্ষমা চেয়ে অন্দরমহলে নিয়ে গেলেন। তখন নপুংসক বললো; ধ্যাত, তোমরা কি বুঝো! আমি তো সফল হয়েছি। রাজাকে বের করার কথা বলেছিলাম, সাথে বোনাস হিসেবে বায়ু খাওয়ালাম। এটাই কি অধিক সফলতা নয়! এই বলে সে বিশ্বজয়ের আনন্দে লাফাতে লাগলো। সবাই যে তাকে নিয়ে হাসছে সেদিকে তার যেন ভ্রূক্ষেপ নেই।
উপসংহার>>> কদিন পূর্বে পিয়াস করিমের লাশ শহীদ মিনারে যেতে দেয়া হয়নি। দুর্বল পিয়াস করিমকে ঠেকিয়ে চেতনা ব্যবসায়ী তরুণ প্রজন্মের লাফালাফি ছিলো দেখার মতো। আজ একই গোষ্ঠী থেকে গোলাম আযম সাহেবের জানাযা জাতীয় মসজিদে যাওয়ার পথে বাঁধা দেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছিলো। বাঁধা দেয়া তো দূরে থাক, সামনে আসার সাহসই হয়নি। দূর থেকে প্রতিবন্ধী বাঁধন মুন্সী জুতো নিক্ষেপ করেছে, তাতেই যেন তারা বিশ্ব জয় করে ফেলেছে। নপুংসক গোলামের বায়ু ত্যাগের আনন্দ আর বাঁধন মুন্সির জুতো নিক্ষেপের আনন্দে আমি পার্থক্য খুঁজে পাইনি। আপনি পেয়েছেন কি? ফেসবুকে প্রকাশিত