ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ পিয়াস করিম সোমবার ভোরে ইন্তেকাল করেছেন। পরিবারের প্রবাসী সদস্যদের অপেক্ষায় এখনো তাঁর লাশ দাফন হয়নি। মরহুমের ছোট ভাই জহির করিম জানিয়েছেন, বর্তমানে স্কয়ার হাসপাতালের হিমঘরে লাশ রাখা হয়েছে। আগামী শুক্রবার বায়তুল মোকাররম মসজিদে জানাযা শেষে পিয়াস করিমকে দাফন করা হবে।
হিমঘরে লাশ রেখে শুরু হয়েছে চরম কুৎসিত রাজনৈতিক খেলা। পিয়াস করিমের পরিবার সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য (আজ) বুধবার সকাল ১০ টা থেকে ১ টা পর্যন্ত শহীদ মিনারে লাশ রাখার ঘোষণা দিয়েছিলো। যেহেতু তিনি শাহবাগের তুখোড় সমালোচক ছিলেন, হাতে গুনা গুটিকয়েক শাহবাগি শহীদ মিনারে প্রতিরোধের ঘোষণা দেয়। তাদের এই হম্বিতম্বি নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন ছিলো না।
কিন্তু পিয়াস করিম যে সরকারেরও তীব্র সমালোচনা করে গেছেন। জীবিত থাকাকালীন সেই সমালোচনা সহ্য করা ছাড়া সরকারের কিছু করার ছিলো না। কিন্তু মৃত পিয়াস করিমের কাছ থেকে বদলা নেয়ার সুযোগ হাতছাড়া করতে রাজি নয় সরকারও! সরকারের সব কাজের একনিষ্ঠ সমর্থক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিকী দাবী করে বসেছেন, ঢাবি প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া লাশ রাখা যাবে না।
আজ অবশ্য শহীদ মিনারে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়নি। কিন্তু মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নাগরিক সমাজ শুক্রবার সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লাশ রাখার ঘোষণা দিয়েছে। সেই সাথে যদি কোনো বাঁধা আসে তাহলে পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরী, কলামিস্ট ফরহাদ মজহার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ।
ছাত্রলীগ প্রথমে তেমন প্রতিক্রিয়া না দেখালেও এখন তারাও প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়েছে। আবার খালেদা জিয়া প্রতিরোধকারীদের সমালোচনা করেছেন। অদ্ভুত এক দেশ আর অদ্ভুত সব মানুষ।
লাশ শহীদ মিনারে রাখলেই কি আর না রাখলেই বা কি! পাথরের মিনার মৃতের কীইবা উপকার করবে! আমাদের রাজনীতিবিদদের ভাবনাগুলো কতো অদ্ভুত। কি আশ্চর্য তাদের তৈরি আইন। জুতো পায়ে শহীদ মিনারে যাওয়া নিষিদ্ধ। এ যেন উপাসনালয়। ৯০% মুসলমানের দেশে এই জড় বস্তু প্রীতি প্রমাণ করে, এই রাষ্ট্রে কেবল নামেই ৯০% মুসলমান বসবাস করে।
আর শহীদ মিনারে লাশ রাখতে যদি ঢাবি প্রশাসনের অনুমতি নিতে হয়, তবে সেটি আবার কিসের শহীদ মিনার । গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, যেখানে জনগণকে সব ক্ষমতা দিয়ে দেয়া হয়েছে, সেখানে শহীদ মিনার ব্যবহারে ঢাবি ভিসির অনুমতির যৌক্তিকতা কোথায়!
যাক, এসব নিয়ে আমার না ভাবলেও চলবে। পিয়াস করিমকে পছন্দ করতাম। তার লাশ নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে, বিষয়টি খারাপ লাগছে। তারচেয়ে বেশি এই ভেবে খারাপ লাগছে; সরকার হয়তো শেষ পর্যন্ত লাশ শহীদ মিনারে রাখতে দেবে না। এই সুযোগে শাহবাগের নিবেদিতপ্রাণ কর্মী, ধর্ম বিদ্বেষী কিছু অমানুষ, যাদের সংখ্যা এতো কম যে, কয়েকশো মানুষ তাদের পিষে ফেলতে পারবে, এবং তাদের নখের চিহ্ন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যাবে না> লাশ রাখতে না দেয়ার সমূদয় ক্রেডিট দাবী করবে। নিজেদের সাফল্য হিসেবে ব্লগ, ফেসবুকে লেখালেখি করে আত্মতৃপ্তি লাভ করবে।
ভাবছি, লাশ শহীদ মিনারে নেয়া না নেয়াতে সত্যিই তো আমাদের কিছু যায় আসে না। কিন্তু যখন ছাত্র ঐক্য আর ছাত্র মৈত্রীর নেতারা স্ট্যাটাস দেবে, প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়েছিলাম, প্রতিরোধ করেছি; তখন তাদের আনন্দ দেখে কিছুটা হলেও কি খারাপ লাগবে না! ফেসবুকে প্রকাশিত