মানুষ অনুভব করার ক্ষমতা রাখে। সমাজে বসবাস করতে গিয়ে কখনো আনন্দিত হয় কখনো বা দুঃখিত। কখনো তার মাঝে ভালোবাসা ভরপুর করে তো কখনো রাগান্বিত হয়ে উঠে। সময়ের প্রেক্ষিতে মানুষের অবস্থা বৈচিত্র্যপূর্ণ হয়।
উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, কিছু বর্তন একত্রে রাখতে গেলে আওয়াজ হয়। এমনিভাবে মানুষ এক জায়গায় বসবাস করার সময় কখনো কখনো তাদের মাঝে বিরোধ বিতর্ক তৈরি হয়। আর ভালো মানুষ সেই, যে বিরোধপূর্ণ মুহূর্তে ধৈর্য ধারণ করে। রাগের মুহূর্তে ধৈর্যহীন হয়ে যাওয়া ভালো বিষয় নয়।
উদাহরণ হিসেবে মনে করুন; দ্রুত গাড়ী চালানোর মাঝে পৃথক কোনো মাহাত্ম্য নেই। গাড়িকে কন্ট্রোল করতে পারাই মাহাত্ম্য। ছোট শিশুকে গাড়িতে বসিয়ে দেয়ার পর সে স্টিয়ারিঙে চাপ দিলেই গাড়ী দ্রুত ছুটতে শুরু করবে। কিন্তু কন্ট্রোল করতে পারা কঠিন।
রাসূল (সা:) বলেছেন; যে ব্যক্তি অন্যের ত্রুটিকে পৃথিবীতে যতো দ্রুত ক্ষমা করবে, কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তায়ালা তার ত্রুটিকেও ততো দ্রুত ক্ষমা করবেন। অপর হাদিসে আছে, আল্লাহ’র রাসূল (সা:) বলেন; যখন কেউ কারো কাছে স্বীয় দোষ ত্রুটির জন্য ক্ষমা চায়, আর সেই ব্যক্তি বলে, আমি তোমাকে ক্ষমা করবো না। তবে যে ব্যক্তি বলবে, “আমি তোমাকে ক্ষমা করবো না” সে যেন কিয়ামত দিবসে হাউজে কাউসারের কাছে উপস্থিত না হয়। আর এখন তো অবস্থা এমন যে, স্বামী স্ত্রীকে আর স্ত্রী স্বামীকে পর্যন্ত ক্ষমা করতে রাজি নয়।
এক বুজুর্গ সম্পর্কে বর্ণিত যে, একদা তিনি হজ্জের সফরে ছিলেন। একটি থলের ভেতর তাঁর সফরের সরঞ্জামাদি ছিলো। আচমকা এক যুবক তাঁর সেই ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে গেলো। কিছুদূর যেতেই সেই যুবক অন্ধ হয়ে গেলো। অন্ধ হওয়া মাত্র সে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলো। মানুষ তার কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করলে সে বললো; আমি একটু পূর্বে এক ব্যক্তির ব্যাগ ছিনিয়ে এনেছি। মনে হচ্ছে এখন তাঁর বদদোয়ার কারণে আমি অন্ধ হয়ে গেছি। তখন সবাই তাকে বললো, কোথায় সেই বুজুর্গ? সে বললো; অমুক দোকানের কাছে। সবাই সেখানে গেলো এবং সেই বুজুর্গকে বলা হলো; আপনি এই যুবককে ক্ষমা করে দিন। যুবকও বললো; আমায় ক্ষমা করুন। সেই বুজুর্গ বললেন; আমি তো তাকে সেই সময়ই মাফ করে দিয়েছি। সবাই বললো; আপনার সমস্ত টাকা পয়সা নিয়ে পালিয়ে গেলো, আর আপনি সেই কখন মাফ করে দিয়েছেন? বুজুর্গ বললেন; হ্যাঁ, আমার একটি কথা মনে হয়েছে। যার ফলে আমি তাকে মাফ করে দিয়েছি। সবাই যখন বললো, কি মনে হওয়াতে মাফ করে দিলেন? বুজুর্গ বললেন; যখন সে আমার ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে গেলো, তখন আমার মনে আসলো, কিয়ামত দিবসে আমি যখন আল্লাহ তায়ালার অভিযোগ করবো, তখন এই যুবক থেকে হিসাব গ্রহণ করা হবে। আর রাসূল (সা:) বলেছেন; উম্মতের হিসাব শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি জান্নাতে যাবো না। চিন্তা করলাম; এই যুবকের সাথে আমার বিচার শেষ হতে যতক্ষণ লাগবে, ততোক্ষণ আমার রাসূলকে অপেক্ষা করতে হবে। আমার কারণে আমার রাসূলের জান্নাতে যেতে দেরি হবে। সুতরাং আমি যুবককে মাফ করে দিলাম। ফলে বিচার দায়েরের প্রয়োজন হবে না। আমার কারণে আমার রাসূলের জান্নাতে প্রবেশেও বিলম্ব হবে। আহ! আমাদের সবার ভাবনা যদি এমন হয়ে যেতো।
>>>পীর যুলফিকার আহমদ নকশবন্দী হাফিজাহুল্লাহ’র বয়ান থেকে অনূদিত। ফেসবুকে প্রকাশিত