(১)
“মাত্র ৩০ মিনিট পূর্বে নিশ্চিত করলাম আমি ঢাকা যাচ্ছি। পূর্ব পরিকল্পনা ছিলো সিলেটে বসে অনলাইনে কিছু কাজ করবো। কিন্তু আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা বড্ড কঠিন জানা ছিলো না। ঐতিহাসিক এই আন্দোলনে সশরীরে উপস্থিত হতে পারা আমার জন্য সৌভাগ্যের বিষয়। মহান মালিক আল্লাহ তায়ালা ক্ববুল করুন।”
স্ট্যাটাস পড়ে কি চমকে উঠলেন? স্ট্যাটাসটি ৪ মে ২০১৩ ঢাকায় রওয়ানা হবার ঠিক পূর্বমুহূর্তে দিয়েছিলাম। ইচ্ছে থাকলেও নানাদিক বিবেচনা করে ঢাকায় যাত্রা স্থগিত রেখেছিলাম। কিন্তু যখন আমার একাধিক পরিচিতজন তৈরি হয়ে ফোন দিয়ে বললো, আমরা একটু পরে যাত্রা করবো। বিদায় দিতে আপনি কি আসবেন? আমি এমনিতে তড়িৎ সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। কিন্তু তখন মাত্র ২/৩ মিনিটের মধ্যে কিভাবে যে ঢাকায় যাবো বলে সিদ্ধান্ত নিলাম এখনো ভেবে পাই না। আম্মুকে বলতেই প্রথমে নিষেধ করলেন। কিন্তু ২/৩ বার বলতেই অবশেষে সম্মতি অর্জিত হলো। আল্লাহ তায়ালার উপর ভরসা এবং মায়ের দোয়া নিয়ে যাত্রা করলাম ঢাকার পথে।
(২)
“গতরাতের ঠিক এই সময়টাতে আমি শাপলা চত্বরের অস্থায়ী মঞ্চের সামনে ছিলাম। তখন একটু পরপরই ককটেল বিস্ফোরণের আওয়াজ শুনা যাচ্ছিল। তৌহিদী জনতার ঈমানী আবেগ উপচে পড়ছিলো। শাপলা চত্বরের এই ভূমি আজ হাজারো শহীদের রক্তে রঞ্জিত। অথচ আমার মতো অনেকেই এখন নিরাপদে ঘরে বসে আছে।
প্রায় ৬০ ঘণ্টা পর ভাত খেতে গিয়ে দেখলাম,গলা দিয়ে ভাত যাচ্ছে না। ক্ষমা করো আমার শহীদ ভাইয়েরা; হয়তো এরচেয়ে বেশি কিছু দেয়ার মতো সামর্থ্য আমাদের মতো মানুষদের নেই।”
৬ মে ২০১৩ বাসায় বসে এই স্ট্যাটাসটি দিয়েছিলাম। নিজেকে একেবারে নিঃস্ব লাগছিলো। কথা বলতে গেলেই চোখ ভরে উঠছিলো। এমন তো আমাদের সাথে হবার কথা ছিলো না।
(৩)
“যতোটুকু বিধ্বস্ত হওয়া সম্ভবপর ছিলো, সবটুকু আমি হয়েছি কিনা নিশ্চিত করে বলতে পারবো না, তবে বেশ খারাপ সময় যে কেটেছে, সেটা নিশ্চিত করে বলতে পারি।
স্বপ্নভঙ্গের যাতনা কখনো অনুভূত হয়নি। ঢাকা থেকে সিলেটে আসার পর বুঝতে পারলাম স্বপ্ন ভঙ্গের যাতনা কতো কষ্টের হতে পারে।
তবে আলহামদুলিল্লাহ্, নিজেকে অনেকটা সামলে নিয়েছি। অনেক ভেবে দেখলাম, আসলে হারানোর কিছু নেই। কিছু পেলে সেটা হতো অতিরিক্ত। যৌক্তিক বিবেচনায় অবস্থান ঠিকই আছে। তবুও মন বলে কথা। মানতে চায় না।”
১৩ মে ২০১৩ স্ট্যাটাসটি দিয়েছিলাম। ধকল অনেকটা তখন কাটিয়ে উঠেছি। আমার ধারণা এতো কঠিন সময় ইতিপূর্বে খুব একটা অতিবাহিত হয়নি। ফেসবুকে প্রকাশিত