কাগজে লিখে বন্ধুত্ব হয় না। বন্ধুত্ব বাস্তবতার অংশ। কাগজ অবশ্যই মুখের চাইতে অধিক দামী নয়! আর মুখতো তুলনায় মনের কাছাকাছি পৌছার ক্ষমতা রাখে না। আর স্থিতিশীল মনের জন্য বন্ধুত্ব যেন ওষুধ। অতএব যুক্তির নিরিখে কাগজে শর্ত করে বন্ধুত্ব করার চিন্তা পাগলামো ছাড়া কিছু নয়।
সরলতা বিহীন বন্ধুত্ব কষ্ট সহ্য করে সংসার করার নামান্তর। সজীব প্রায়ই কথা দিয়ে সময়মতো আসতে পারে না। কিন্তু যখন সে মুজীবের সাথে দেখা করে তখনি ক্ষমা চেয়ে নেয়। কিন্তু মুজীব এতো রেগে যায় যে ক্ষমা করাতো দূরে থাক,এ ব্যাপারে কথাই বলে না। অথচ বন্ধুত্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হচ্ছে নিজের ভেতর কষ্ট সহ্য করা যাবে না। মানসিক ভাবে প্রতিশোধ নেয়া যাবে না। মুজীবের কিছু না বলাটা সজীবের মন আরো খারাপ করে দেয়। সে ভাবতে থাকে চেপে রাখার পরিণতি কি তবে সম্পর্কচ্ছেদ! এভাবেই সম্পর্ক জটিল হয়ে ওঠে!
অনীহা ভাব প্রকাশ করার পরিবর্তে সহজভাবে যাকে কোনো কিছু বুঝিয়ে বলা যায়,যার অন্যায়কে নিঃসঙ্কোচে শুধরে দেয়া যায় সেইতো বন্ধু।
অনেকে বলে বন্ধু কাকে বলে সেটাই বুঝলাম না!
যার উপর অভিমান করা যায়,রাগ করা যায় না, বন্ধুতো সেই। সে অন্যায় করলে মন খারাপ হয়। মুখ ফুলিয়ে রাখতে ইচ্ছে করে। কথা বন্ধ করার অভিনয় করতে হয়। কিন্তু মন ভেতরে ভেতরে ঠিকই তাঁর সাথে কথা বলার জন্য কাতর হয়ে ওঠে। তাঁর সংস্পর্শ কামনা করে। মোবাইল ট্র্যাকার দিয়ে বারবার তাঁর অবস্থান জানতে ইচ্ছে করে। স্ট্যাটাস আপডেট করছে কি না! মেইল করছে কি না! জানতে বারবার লগইন করতে হয়।
সত্যিকারর্থে বন্ধুত্বকে কোনো সংজ্ঞায় আটকানো সম্ভবপর নয়। অনেক কিছু বুঝা যায় কিন্তু! কিন্তু প্রকাশ করা যায় না!
সুন্দর বন্ধুত্বের জন্য মন-মানসিকতায় মিল থাকা চাই। বিপরীত চেতনার দু’জন ভালো বন্ধু হতে পারবে না।
সজীব আর মুজীব যদি আর্জেন্টিনার কট্টর সমর্থক হয়,তবে তাদের বন্ধুত্বে ভাসবে নীলপদ্ম। আর যদি হয় সজীব ব্রাজিলের সমর্থক আর মুজীব আর্জেন্টিনার,তবে কট্টরপন্থী হওয়ার কারণে ছোট বিষয়ে যে কোন সময় তাদের মধ্যে মতবিরোধ হতে বাধ্য। এক্ষেত্রে পয়েন্ট হচ্ছে মনের পছন্দে ছাড় দেয়া স্বাভাবিক কারো পক্ষে সম্ভবপর নয়।
অতএব সম্পর্কের প্রথমে রুচি-বোধ স্পষ্ট ভাষায় জানানো উচিৎ। ভিন্ন রুচির কারনে সহজ বিষয় অনেক সময় জটিল হয়ে ওঠে। ভালো কিছু মন্দ রূপে আসে। সাদাও কালো রঙ হয়ে ভাসে।
বন্ধুত্ব হবে নির্মল। থাকবে না কোনো প্রেতাত্মার অশুভ ছোঁয়া। উড়বে না মন খারাপের কালো ধোয়া!
ত্যাগ করার মানসিকতাই সম্পর্কের একমাত্র ভিত্তি। নিজের স্বার্থে পথ চললে বিরোধ অবধারিত। স্বার্থের কাঠামোয় দণ্ডায়মান সম্পর্ক অনেকটা মূর্ছিত দেহের ন্যায়।
বন্ধুত্বকে নিষ্পাপ রাখতে হবে। কামনার অনেক উপরে বন্ধুত্বের ঠিকানা। কামনা অস্থায়ী এক জৈবিক চাহিদা মাত্র। বন্ধুত্ব স্থায়ী।
অতএব সম্পর্ক স্থায়িত্বের আশায় গড়া উচিৎ। কামনার নেশায় গড়া সম্পর্ক কেবল প্রতারকদের জন্যই থাকুক।