কওমী মাদরাসার সরকারি স্বীকৃতির বিষয়টি আবেগ ও অধিকারের সাথে সম্পৃক্ত। সরকারি স্বীকৃতি দেশের নাগরিক হিসেবে কওমী মাদরাসার পড়ুয়া কয়েক লাখ ছাত্রের অধিকার। আমিও সেই দলের একজন সদস্য। খোলা বাজারে কওমী মাদরাসার সার্টিফিকেটের মূল্যমান না থাকায় আমাদের অনেকেই আলিয়া মাদরাসায় গিয়ে দাখিল, আলিম দিয়ে মহামূল্যবান সার্টিফিকেট সংগ্রহ করেন! সবমিলিয়ে সরকারি স্বীকৃতি সময়ের প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সম্প্রতি খবরে বেরিয়েছে, যাত্রাবাড়ীর মাহমুদুল হাসান (দা: বাঃ) কে চেয়ারম্যান ও গহরডাঙ্গা রুহুল আমীন সাহেবকে সদস্য সচিব করে কওমী মাদরাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠান গঠন করে সরকার কওমী মাদরাসাকে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে।
কিন্তু যে সরকার আমাদের ধ্বংস করতে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছে, তাদের দেয়া এই সনদ শেষ পর্যন্ত কার স্বার্থে ব্যবহার হবে এটাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা, চলতি মেয়াদে আওয়ামীলীগ কৌশলপূর্ণ রাজনীতির মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রচলিত রাজনৈতিক ধারাকে নতুন সাঁজে সজ্জিত করেছে।
আমাদের দাবী পুরোপুরি মেনেই সরকার স্বীকৃতি দিচ্ছে বলে অনেকে লাফিয়ে উঠছেন। নিম্নলিখিত কারণগুলো দেখে আপনার কি মনে হয় না, সরকার যতোটা না আন্তরিক, তার চেয়ে বেশি অনেক বেশি প্রতিশোধ পরায়ণ?
কওমী উলামাদের সাথে আওয়ামীলীগের সাম্প্রতিক সৃষ্ট দ্বন্ধ> ১৯৯৬-২০০১ শাসনামলের শেষদিকে ফতোয়া বিরোধী আইনের প্রতিবাদ করায় শায়খুল হাদীস আজিজুল হক (রহঃ) ও মুফতী আমীনি (রহঃ) কে জেলে প্রেরণ করেছিল আওয়ামীলীগ।
চলতি শাসনামলে যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির দাবিতে শাহবাগে গড়ে উঠা আন্দোলনে চরমপন্থি ইসলাম
বিদ্বেষীদের জড়িত থাকার প্রমাণ সামনে আসলে আল্লামা আহমদ শফির আহবানে হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে মাঠে নামেন কওমী অঙ্গনের উলামায়ে কেরাম।
৬ এপ্রিল ঢাকা-মুখী লংমার্চকে ব্যর্থ করতে পরিবহণ শ্রমিকদের হুমকি, প্রশাসনিক হয়রানী সহ সরকার বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে। কিন্তু সকল বাঁধা উপেক্ষা করে সেদিন ঢাকায় ইতিহাস সৃষ্টি করেন তৌহিদী জনতা। লংমার্চে সরকারের কট্টর মনোভাব কওমী কেন্দ্রিক উলামায়ে কেরামকে সরকার বিরোধী বক্তব্যে বাধ্য করে। অতঃপর সরকারও প্রকাশ্যে হেফাজতে ইসলামকে রুখতে নানা তৎপরতা শুরু করে।
এই ধারাবাহিকতায় ৫ মে হেফাজতে ইসলামের অবরোধ কর্মসূচী পরবর্তী শাপলা চত্বরের অবস্থান কর্মসূচীতে রাতের আঁধারে গণহত্যা চালায়। জাতির সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারী উলামায়ে কেরামকে কান ধরে শাপলা চত্বর ত্যাগ করতে বাধ্য করে।
পরদিন জোরপূর্বক আল্লামা শাহ আহমদ শফিকে চট্টগ্রাম প্রেরণ করে। মিথ্যা মামলায় আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরিকে কারাগারে বন্দী করে রিমান্ডের নামে মর্মান্তিক নির্যাতন করে। কুরআন, হাদীসের সেবাই যাঁদের ধ্যান জ্ঞান, সেই কওমী উলামায়ে কেরামের উপর কুরআন পোড়ানো ও লুণ্ঠনের অপবাদ আরোপ করে। কদিন পর শায়খুল হাদিস পুত্র মামুনুল হককে আটক করে।
সম্প্রতি জমিয়তের মহাসচিব মুফতী ওয়াক্কাসকে গ্রেফতার করে রিমান্ডের নামে এখনো অত্যাচার করে যাচ্ছে। গ্রেফতার করেছে তরুণদের আদর্শ মুফতী হারুন ইজহারকেও।
গতকাল জমিয়তের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি রেজাউল করিম এবং আজ ইসলামী ঐক্যজোটের সহকারী মহাসচিব মাওলানা আহলুল্লাহ ওয়াসেল, সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন, সহদপ্তর সম্পাদক আলতাফ হোসাইন ও ঢাকা মহানগর কমিটির সদস্য মঞ্জুর মুজিবকে আটক করেছে।
আল্লামা শাহ আহমদ শফির পুরনো একটি বক্তব্যকে! মিডিয়ায় প্রচারের মাধ্যমে কওমী অঙ্গনের বিরুদ্ধে সাধারণ জনতাকে ক্ষেপিয়ে তোলার চেষ্টাও করেছে। যদিও ভিডিওটির সত্যতা সম্পর্কে যথেষ্ট অভিযোগ আছে। সেই ভিডিও চিত্রকে কেন্দ্র করে দেশ বরন্য এই বয়োবৃদ্ধ আলেমকে তেঁতুল হুজুর বলে কটাক্ষ করছে।
মুফতী ইজহারুল ইসলাম কর্তৃক পরিচালিত লালখান বাজার মাদরাসার আইপিএস বিস্ফোরণকে গ্রেনেড বিস্ফোরণ বলে অপপ্রচার চালিয়ে কওমী মাদরাসাকে জঙ্গিবাদের আঁতুড়ঘর বলেও প্রচার করছে।
স্মৃতির উপর নির্ভর করে তড়িঘড়ি করে লিখেছি বলে অনেক দিক বাদ পড়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক। তবুও সরকারের আচরণের এই তালিকাটা একেবারে ছোট নয়।
ধৈর্যশীল আলেমদের রাতের আঁধারে গড়িয়ে যাওয়া চোখের পানির ফসল হিসেবে এসব অপকর্মের প্রতিদানও খারাপ হয়নি। আলেমদের উপর অত্যাচারকে দেশ ভাষী ভালোভাবে গ্রহণ করেনি। ফলে চারটি বিভাগীয় শহরের সিটি নির্বাচনে সরকারি দলকে হারতে হয়েছে। বিভিন্ন জরিপে সরকারের জনপ্রিয়তা একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে বলেও প্রমাণিত হয়েছে।
আমার মনে হয়, সার্বিকভাবে বিশ্লেষণ করলে সরকারের কওমী মাদরাসা স্বীকৃতির এই আয়োজন, আন্তরিকতা নয় কৌশল বলেই প্রমাণিত হয়। হয়তো, স্বীকৃতিকে কেন্দ্র করে আভ্যন্তরীণ বিরোধে কওমী বোর্ডগুলোকে লাগিয়ে দিতে চায় সরকার। এই প্রসঙ্গে আমার উদ্ভট কিছু প্রশ্ন রয়েছে। স্বীকৃতির স্বপক্ষের ভাইয়ের সম্ভব হলে উত্তর দিয়ে সহযোগিতা করুন।
১)সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী আল্লামা আহমদ শফিকে মাদরাসা বোর্ডের চেয়ারম্যান থেকে সরিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। এখন যদি, আল্লামা শাহ আহমদ শফিকে রেখে অন্য কাউকে চেয়ারম্যান বানানো হয়, তবে বিষয়টি কি সুন্দর দেখায়? সরকারের সাথে বিরোধের পূর্বে আল্লামা শফিই তো এই কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন!
২)দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা কওমী বোর্ডগুলোর পারস্পরিক বিরোধ বহাল রেখে একটি কমিশনের অধীনে সবকিছু সঠিকভাবে পরিচালনা সম্ভব হবে কি?
৩)নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে ফিরে আসবো মর্মে যারা লাফালাফি করছেন, তারা কি সত্যিই মনে করেন, সরকারের কাছে ভিড়ার পর ফিরে আসা একেবারে সহজ? ফেসবুকে প্রকাশিত