কওমী কেন্দ্রিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের আহবানে নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তির দাবিতে আগামী ০৬ এপ্রিল লংমার্চ। ইসলামের স্বার্থে লংমার্চ কেন আরো কঠোর কর্মসূচী দেয়া উচিত। তবে অবশ্যই পরিকল্পিত কর্মসূচী। বিচক্ষণ মহলের ধারণা পরিকল্পনা-হীন কাজের প্রতিক্রিয়ায় ভয়াবহ সঙ্কটের মুখোমুখি হবে কওমী মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থা। আসুন কিছু বিশ্লেষণ করা যাক।
(১)
একদিকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে জামায়াত ও সরকার মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। অন্যদিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবীতে দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক সংগঠন বিএনপিও রাজপথে। দ্বিমুখী চাপ মুকাবিলায় সরকার খুব একটা স্বাচ্ছন্ধবোধ করছে না সেটা তাদের মারমুখী অবস্থান পরিষ্কার করে দিয়েছে। রাজনৈতিক সঙ্কটে অতীতে সরকার-পন্থীরা নমনীয়তার পরিচয় দিলেও এবারের অবস্থা সম্পূর্ণ ভিন্ন। এমতাবস্থায় কওমী কেন্দ্রিক উলামায়ে কেরামের আন্দোলন সরকারের জন্য ভয়াবহ এক দুঃস্বপ্ন।
(২)
রাজনৈতিক অঙ্গনে কওমী মাদরাসার উলামায়ে কেরাম সাফল্য না পেলেও দেশের জনগণের কাছে তাদের ভাবমূর্তি বরাবরই উজ্জ্বল। ভোটের রাজনীতিতে সমর্থন না পেলেও সত্য-পন্থী হিসেবে আওয়ামী,বিএনপি,জাতীয় পার্টিসহ সর্ব মহলে তাঁদের গ্রহণযোগ্যতা পূর্ণরূপে বিদ্যমান। দুনিয়া বিমুখ মনোভাব থাকায় সাধারণ মানুষের কাছে কওমীর উলামায়ে কেরামগন সত্যিকারর্থে ধার্মিক হিসেবে পরিচিত। ফলে রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে যখনি উলামাগণ মাঠে নেমেছেন,জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সমর্থন,সহযোগিতা করেছে।
(৩)
ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন থেকে নাস্তিকরা কটূক্তি করে আসছে। ব্লগ,অনলাইন পত্রিকা,ফেসবুক,টুইটার সহ বিভিন্ন মাধ্যমে ধর্মকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ,অপব্যাখ্যা সহ বিভিন্নরূপে ভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। শাহবাগ আন্দোলনের কর্মী ব্লগার রাজীব হায়দার খুন হওয়ার পর উলামায়ে কেরাম প্রথম জানতে পারেন,ব্লগে ধর্মকে নিয়ে একশ্রেণীর অমানুষ এরূপ কাজ করছে। এহেন ন্যক্কারজনক কাজের প্রতিবাদে উলামায়ে কেরাম মাঠে নামেন। বিভিন্ন কর্মসূচী ঘোষিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ছয় এপ্রিলের লংমার্চ।
(৪)
আল্লামা আহমাদ শফী সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলিম। শায়খুল ইসলাম আল্লামা হুসাইন আহমাদ মাদানী (রহঃ) এর খলীফা এই মহা মনীষীর আহবানে বিগত ২২ ফেব্রুয়ারি সারাদেশের মসজিদ থেকে মুসল্লিগণ মিছিল করেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য একটি মহল শান্তিপূর্ণ সেই মিছিলে নিজেদের স্বার্থে প্রবেশ করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। পরিণামে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে একাধিক মানুষ মারা যায়।
চাক্ষুষ অভিজ্ঞতা থেকে বলছি,বিশাল জনসমুদ্রে বিশেষ মহলের অনুপ্রবেশ ঠেকানো অসম্ভব নয় অকল্পনীয়ও বটে। আগামী লংমার্চে আওয়ামীলীগ,বিএনপি,জামায়াতের মধ্য থেকে যে কেউ বিশৃঙ্খলা বাধানোর সুযোগ নিতে পারে। কারণ লাখো মানুষের উপস্থিতিতে কোনোভাবে ঝামেলা বাঁধিয়ে দিতে পারলেই নিজেদের স্বার্থ হাসিল হয়ে যাবে। চলবে………….April 4, 2013