উপহার সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়তা করে। ভালোবাসাকে বৃদ্ধি করে। ইমাম বুখারী (রহঃ) আল-আদাবুল মুফরাদ গ্রন্থে আবু হুরায়রা (রা:) –এর বর্ণনায় আল্লাহ’র রাসূল (সা:) থেকে বর্ণনা করেছেন> تهادوا تحابوا
আমি প্রথমবার কারো সাথে সাক্ষাত করতে গেলে উপহারস্বরূপ কিছু নিতে চেষ্টা করি। আমার কাছেও কেউ কেউ উপহার নিয়ে আসেন। উপহারের ভালো মন্দ মিলিয়ে আমি একটি নীতি তৈরি করেছি। বেশ পরিচিত কেউ আমার জন্য উপহার নিয়ে আসতে পারবেন না। প্রথমবার কেউ আসলে অবশ্য ভিন্ন কথা। প্রথমবার আগত কাউকে তেমন কিছু বলি না। শুধু আগামীতে যাতে না নিয়ে আসেন, কথাটি শুনিয়ে দেই। আমার ধারণা, বর্তমান যুগে নিয়মিত উপহার আদান প্রদান উন্নত সম্পর্কের পথে বাঁধা। অবশ্য মাঝেমধ্যে হলে তেমন সমস্যা নেই।
ভূমিকা ছেড়ে মূল প্রসঙ্গে আসি। উবায়দুল্লাহ মাহফুজ ভাইয়ের সাথে প্রথম পরিচয় কোথায় হয়েছিলো মনে নেই। ফেসবুক থেকে আন্তরিক সম্পর্কের সূচনা। তাঁর মরহুম পিতার পিছনে নামাজ পড়ার জন্য আমি পাগল ছিলাম। মুগ্ধ হয়ে মরহুমের ভরাট কণ্ঠের তিলাওয়াত শুনতাম।
যাক, অনেকদিন থেকে তাঁকে বলছি আপনি একদিন আমাদের বাসায় আসুন। আমার এক প্রিয় সহপাঠী হাবিবুল হক ভাইকেও অনুরোধ করেছি যে, উবায়দুল্লাহ মাহফূজ ভাইকে নিয়ে আপনি একদিন আসুন।
তো যাক, প্রায় ২ সপ্তাহ পূর্বে একদিন মাগরিবের নামাজের পর উবায়দুল্লাহ মাহফুজ ভাই ও হাবিবুল হক ভাই আসলেন। এই দুজন মানুষকেই আমার বেশ পছন্দ। তাঁদের কথাবার্তা, রুচিবোধ, উম্মাহর চিন্তা, নতুন কিছু করার স্বপ্ন এককথায় সবকিছুই আমার ভালো লাগে। অনেক কিছুতে তাঁদের সাথে মিল খুঁজে পাই বলে হয়তো এই ভালোলাগা।
উবায়দুল্লাহ মাহফুজ ভাই আসার সময় কাগজের ব্যাগে উপহার নিয়ে এসেছিলেন। আমার হাতে দেয়ার পর ফেরত নেয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করলাম। উপহার বিষয়ে আমার নীতিও বললাম। যেহেতু প্রথমবার এসেছেন, সেই হিসেবে উপহার গ্রহণ করলাম। এশার নামাজের পর তাঁরা বিদায় নিয়ে চলে গেলেন। তাঁদের বিদায় দেয়ার বেশ কিছুক্ষণ পর উপহারের প্যাকেট খুলে তো আমি অবাক। অবাক হবার কারণ একটু পরে বলছি।
আমাদের আকাবিরদের জীবনীতে পেয়েছি, তাঁরা পরস্পরকে এমন বস্তু উপহার দিতেন, যা উপহার-গ্রহীতার কাজে লাগবে। যেমন মুফতী শফী (রহঃ) –এর জন্য আরেক বুজুর্গ কাগজ উপহার নিয়ে এসেছিলেন। আমাদের আকাবিরগন একে অপরকে নগদ টাকা উপহার দিয়ে প্রয়োজনীয় কিছু কিনে নিতে বলতেন।
উবায়দুল্লাহ মাহফুজ ভাই আমার জন্য নিয়ে এসেছিলেন ছয় ছয়টি “আল ফারেস” আতর। আতর উপহার আনতেই পারেন। অবাক হবার কারণ হচ্ছে, তিনি এতোগুলো আতর নিয়ে এসেছেন। আর এমন এক আতর এনেছেন যা আমি নিয়মিত ব্যবহার করি।
অনেকে বিভিন্ন ফ্লেভার ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু আমি একটিতেই সন্তুষ্ট। প্রায় বছর-খানেক ধরে নিয়মিত “আল ফারেস” আতর ব্যবহার করি।
আম্মুও এতো আতর দেখে অবাক হলেন। সব-শুনে একটি নিতে চাইলে দিলাম। বাকি পাঁচটি যত্ন করে রেখে দিয়েছি। আপাতত পুরনো আতরে চলছে। আগামী পাঁচ মাস ইনশাল্লাহ আর আতর কিনতে হবে না।
জানি না, উবায়দুল্লাহ মাহফুজ ভাই আগে থেকেই জানতেন নাকি যে, আমি “আল ফারেস” আতর ব্যবহার করি? নাকি তাঁর পছন্দের সাথে আমার পছন্দের এই মিল কাকতালীয়! তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়নি। থাকুক না কিছু প্রশ্নের উত্তর অজানা। অজানা কিছুর মাঝেও তো অনেক সময় আনন্দ পাওয়া যায়।
>>> উবায়দুল্লাহ মাহফুজ ভাই ও হাবিবুল হক ভাইয়ের অনুমতি ছাড়াই লেখাটি লিখে ফেললাম। মন থেকে মাফ চাইছি। হয়তো লিখতাম না। কিন্তু এই আনন্দদায়ক অনুভূতি কি একাকী উপভোগ করা উচিৎ??? ফেসবুকে প্রকাশিত