১) আজ (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যার পর কিছু কাজে বন্দরবাজার ছিলাম। এশার নামাজ পড়তে ঐতিহ্যবাহী শাহ আবু তোরাব জামে মসজিদে গিয়ে দেখি আমার পরম-প্রিয় উস্তাদ, দরগাহ মাদরাসার শায়খুল হাদিস মুহিব্বুল হক গাসবাড়ী হাফিজাহুল্লাহ প্রথম সারিতে বসে আছেন।
নামাজের সময় ইমাম সাহেব তাঁকে নামাজ পড়াতে অনুরোধ করলে তিনি রাজি হননি। ইমাম সাহেব ফরজ নামাজ শেষ করেই পিছনে ফিরে আসলেন আর গাসবাড়ী হুজুরকে মিম্বারে যাওয়ার অনুরোধ করলেন। তখন হুজুর সুন্নাত, বিতর ইমাম সাহেবের স্থানে দাঁড়িয়ে আদায়
করলেন।
মুহিব্বুল হক (দা: বাঃ) –স্বীয় ইলম, বয়স, কর্মের বিবেচনায় সিলেটের উলামায়ে কেরামের অভিভাবকের আসনে অবস্থান করছেন। তিনি সম্মান প্রাপ্তির অধিকার রাখেন। তাই বলে আবু তোরাব মসজিদের ইমাম সাহেব যে, এতোটা সম্মান প্রদর্শন করবেন
ভাবিনি। আল্লাহ তায়ালা উভয় হযরতের হায়াত বাড়িয়ে দিন।
২) বিগত পরশু (বুধবার) পরীক্ষা দিয়ে বাসার কাছাকাছি মসজিদে যোহরের নামাজ পড়তে আসলাম। ২ সারি বিশিষ্ট মসজিদের বারান্দায় নামাজ পূর্ববর্তী সুন্নাতে ২ ব্যক্তি এমনভাবে দাঁড়িয়েছিলেন যে, মধ্যখানে একজন মানুষ চাইলে নামাজ পড়তে পারবে। যদিও নামাজ পড়াকালীন দুই পাঁশের নামাজির সাথে সামান্য শরীর স্পর্শের সম্ভাবনা আছে। এমন স্পর্শ নামাজে সবসময়ই হয়ে থাকে। হঠাত দেখলাম একব্যক্তি মধ্যবর্তী খালি জায়গায় দাঁড়িয়ে আবার পিছিয়ে গিয়ে শেষ কাতারে সুন্নাত পড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তখন আমার পরিচিত তরুণ আলেম আমীর হোসাইন (যিনি নিজেও সুন্নাতের প্রস্তুতিতে ছিলেন) তাঁকে প্রথম কাতারে সুন্নাত পড়ার অনুরোধ করলেন। কেননা শেষ সারিতে নামাজ পড়লে যাতায়াতে বেশ সমস্যা হয়। কিন্তু ওই ব্যক্তি প্রথম সারিতে দুজন মানুষের মধ্যখানে দাঁড়াতে রাজি নয়। তখন আমীর ভাই নিজের জায়গা ছেড়ে ওই ব্যক্তিকে সেখানে জায়গা দিলেন এবং তিনি নিজে দুজন নামাজির মধ্যবর্তী ছোট জায়গায় সুন্নাত পড়লেন।
সবকিছু দেখে বেশ ভালো লাগলো। তিনি যদি তৎক্ষণাৎ নিজের জায়গা ছেড়ে না আসতেন, তবে লোকটি শেষ সারিতে নামাজ পড়তো। অন্য মানুষের চলাফেরায় তখন বেশ ঝামেলা হতো। কিন্তু আমীর ভাইয়ের বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্তে বিষয়টি কতো সহজে সমাধান হয়ে গেলো। কথার চেয়ে কাজ উত্তম নতুন করে বুঝতে পারলাম।
৩) জামেয়া দরগাহ’র দস্তারবন্দী মহাসম্মেলনের এক ভিনদেশী অতিথির পাসপোর্টে ফটোকপি পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব ছিলো আমার কাঁধে। যিনি আমার কাছে মাদরাসায় ফটোকপি পৌঁছে দেয়ার জন্য দিলেন, তিনি আমাকে ফটোকপির আরেকটি কপি করে তার কাছে দেয়ার জন্য বললেন। কেননা আর কোনো কপি তার কাছে নেই। ঘটনাক্রমে আমি সেদিন ফটোকপি করতে পারিনি। আবার প্রয়োজন থাকায় ভিসা ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা উস্তাদকে সেদিনই
পাসপোর্টের কপি দেয়া দরকার। আমি উস্তাদজিকে কাগজ দিয়ে বললাম, এই কারণে এর একটি ফটোকপি লাগবে। আপনি সময় করে আমাকে বললে আমি ফটোকপি করে নেব।
এরপর প্রায় ৩ সপ্তাহ চলে গেছে। সেই উস্তাদ আর আমায় কিছু বলেননি। আমিও লজ্জায় বিষয়টি তাঁকে বলিনি। দস্তারবন্দীর এতো বিশাল কাজের মাঝে একটি কাগজের ফটোকপির আলোচনা আমার কাছে সুন্দর দেখাচ্ছিলো না। যাক, গতকাল তাখাসসুসের এক ভাই সেই ভিনদেশী অতিথির পাসপোর্টের ফটোকপি আমায় দিয়ে বললেন, অমুক হুজুর দিয়েছেন। স্বস্তি পেলাম। আমিও যথাস্থানে কাগজটি পৌঁছে দিলাম।
কাগজটি পেয়ে যতোটা খুশী, তারচেয়ে বেশি ভালো লাগছে এই ভেবে যে, এতো ব্যস্ততা, কাজের এতো চাপ, তবুও আমার উস্তাদ ছোট একটি কথা ভুলে যাননি।
*লেখাটা লিখতে গিয়ে ঠের পেলাম, অনুভূতির প্রকাশ ঘটানোর চাইতে কঠিন কিছু আর নেই। ফেসবুকে প্রকাশিত