জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেব বৃহস্পতিবার ইন্তেকাল করলেও পরিবারের সদস্যদের অপেক্ষা করতে গিয়ে আজ শনিবার বাদ জোহর বায়তুল মোকাররামে জানাযার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
গোলাম আযমের বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিকদের! বিস্তর অভিযোগ। বলা হয়ে থাকে স্বাধীনতা যুদ্ধের সবচেয়ে বড় রাজাকার হচ্ছেন গোলাম আযম। এমনটি বিরুদ্ধবাদীদের দাবী; খুন, ধর্ষণ থেকে শুরু করে সবরকমের মন্দ কাজই তিনি করেছেন।
গোলাম আযম সাহেব মানুষ হিসেবে কেমন ছিলেন সত্যিই আমি জানি না। তবে একজন মুসলমান হিসেবে বিশ্বাস করতে চাই, তাঁর সাথে যেসব অপরাধ যুক্ত করা হচ্ছে, তিনি সেই অপরাধ থেকে নিরাপদ দূরত্বে ছিলেন। এই বিশ্বাসের স্বপক্ষে (দুর্বল) দলীল হচ্ছে; তথাকথিত দেশপ্রেমিকদের কুৎসিত চরিত্র এবং দেশ প্রেমের নামে ধর্মের বিরোধিতা। আর শয়তান কখনো ভালো বললেও সেই ভালোর পিছনে কালো ঠিকই লুকিয়ে থাকে। এছাড়া গোলাম আযম সাহেবের ছোট ছেলে সালমান আযমী বাবাকে নিয়ে স্মৃতিচারণমূলক একটি লেখা লিখেছেন। সেখানে তিনি তার বাবার যেসব গুণাবলী উল্লেখ করেছেন, তার কিছুও যদি সত্য হয়, তবে নিঃসন্দেহে অধ্যাপক গোলাম আযম একজন ভালো মানুষ ছিলেন।
তবুও বলি; তিনি ভালো কাজ করলে আল্লাহ তায়ালা যেন উত্তম বদলা দান করেন আর মন্দ কর্ম করলে সেই শাস্তিও প্রদান করেন।
কদিন আগে শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবী পিয়াস করিম ইন্তেকাল করেছিলেন। তখন রাজাকারের সহযোগী খেতাব দিয়ে তার লাশ শহীদ মিনারে নিতে দেয়া হয়নি। গোলাম আযম সাহেবের জানাযা যেন জাতীয় মসজিদে না হয় কিছু অমানুষ এমন দাবি করেছে। আমি মনে প্রাণে চাই, বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতিতে অধ্যাপক গোলাম আযমের জানাযা যেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররামে অনুষ্ঠিত হয়।
আবারও বলছি; গোলাম আযম সত্যিই অপরাধী হয়ে থাকলে তার বিচার যেন আল্লাহ তায়ালা করেন। কিন্তু সন্দেহ নেই; সদ্য ফোঁটা ধর্ম বিদ্বেষী দেশদ্রোহিতার অপরাধে তাঁকে যতোটা ঘৃণা করে, তারচেয়ে বেশি একজন মুসলিম হিসেবে ঘৃণা করে। ধর্ম এবং সমাজে গালাগালিকে এমনিতেই খারাপ চোখে দেখা হয়। আর মৃত মানুষকে গালাগালি তো চূড়ান্ত পর্যায়ের নির্লজ্জ মনোভাবের পরিচায়ক। নিজেকে মুসলমান পরিচয় দিয়ে তরুণ তরুণীরা যেভাবে গালাগালি করছে, তাতে তাদের নামধারী মুসলমান হওয়ার বিষয়টি তো স্পষ্ট। এমনকি অনেকের আচার আচরণ দ্বারা স্পষ্ট, ধর্ম তাদের কাছে পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা তো নয়ই, বরং ধর্মের বিরুদ্ধে গেলে সমাজের চোখে দায়ী হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখেই ধার্মিক পরিচয় দিয়ে আড়ালে অধর্ম লালন করে চলেছে। দেশপ্রেমের আড়ালে যারা ধর্মকে আক্রমণ করতে চায়, তারা আর যাই হোক, আমাদের সহানুভূতি পেতে পারে না।
গোলাম আযম সাহেবের জানাযা জাতীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত হলে বিরুদ্ধবাদীরা অন্তত বুঝবে; সবার সাথে সবকিছু চলে না। এই দেশে যা ইচ্ছা তা করা যাবে না। এখানে লাশ নিয়ে রাজনীতি চলবে না। এতোসব কারণে দুর্বল পিয়াস করিম আর সবল গোলাম আযমের পার্থক্য স্পষ্ট হোক এমনটি আমি চাইতেই পারি। আমার ধারণা; এতে বাহ্যত গোলাম আযম কিংবা জামায়াতে ইসলামীর জয় দেখা গেলেও সমস্ত ধার্মিকদের পক্ষ থেকেই ধর্ম বিদ্বেষীদের কাছে একটি আওয়াজ পৌঁছুবে। আর এই আওয়াজ যেকোনোভাবে পৌঁছানো এখন জরুরী হয়ে পড়েছে।
*এটি আমার নিজস্ব ভাবনা। লেখার সাথে পরিচিত অনেকেই দ্বিমত পোষণ করতে পারেন। তবে কষ্ট না পাওয়ার অনুরোধ করছি। ফেসবুকে প্রকাশিত