সম্ভ্রান্ত জমিদার আরকম আলির একমাত্র পুত্র কুমকুম আলী বড্ড বেয়াড়া। বয়স এখনো ১৫ পেরোয়নি। কিন্তু আচরণ দেখে মনে হয় যেন সে জমিদার হয়ে বসে আছে। কাউকে পরোয়া করার বালাই নেই।
জমিদার সাহেব ছেলেকে নিয়ে চিন্তিত। সারাদিন টো টো করে ঘুরে বেড়ায়। একসময় বোর্ডিং স্কুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে থাকতে তার কষ্ট হয় বলে অনেক বলে কয়ে বাড়িতে চলে এসেছে। কিন্তু বাড়িতে আসার পর থেকে পড়াশুনার প্রতি আগ্রহ নেই। বাড়ি ভর্তি চাকর বাকর। কেউ তাকে সামলাতে পারে না।
অনেক ভেবে চিনতে জমিদার ছেলে কুমকুমের ফায় ফরমাশ খাটার জন্য গ্রাম থেকে মাহমুদ নামী বারো/তেরো বছর বয়সী একটি ছেলেকে নিয়ে আসলেন। আসলে মাহমুদকে আনার পিছনে গোপনে জমিদারের আরেকটা উদ্দেশ্য ছিলো; ছেলের এখন নষ্ট হবার সময়। সাথে কেউ একজন থাকলে জানতে পারবো কখন কি করে না করে।
জমিদার বাড়ির দারোয়ানের গ্রামে মাহমুদের বাড়ী। দারোয়ান জানিয়েছে, বয়স কম হলেও মাহমুদ ছেলেটা বেশ বুদ্ধিমান। জমিদার সাহেব মাহমুদকে কাছে ডেকে নিয়ে বললেন; দেখ, আমার ছেলেটা বড্ড রাগী। তোরে আনা হইছে তার সাথে সাথে থাকার জন্য। ফায় ফরমাইশ খাটার জন্য। উল্টা পাল্টা কিছু করিস না। আর শুন; কুমকুম কি করে না করে গোপনে আমারে কইস। মাহমুদ জি হুজুর বলে বিদায় নিলো।
পরদিন সকালে মাহমুদ জমিদারের ছেলের কাছে গিয়ে হাজির। বললো; হুজুর! আমি আজ থেকে আপনার খিদমত করবো। আপনার সাথে সাথে থাকবো। কুমকুম তো রেগে-মেগে অস্থির। এই বাচ্চা ছেলে কিনা তার সাথে থাকবে। লাথি মারতে গিয়ে থমকে গেলো। এতটুকুন ছেলেকে লাথি দিলে সমস্যা আছে। তারচেয়ে বরং গালি দেয়া যায়। বললো; ……..লা। যা ভাগ এখান থাইকা।
মাহমুদ তবুও দাঁড়িয়ে রইলো। আরো কিছু গালি দেয়ার পরও যখন দেখলো যাচ্ছে না, জমিদারের ছেলে বললো; দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি করস! যা, আমার জন্য চা নিয়া আয়। মাহমুদ একটু পরে চা নিয়ে আসলো।
দুপুরে কুমকুম আলী বাইরে গেলো। মাহমুদ বললো, হুজুর আমি আপনার সাথে আসি। কি মনে করে কুমকুম মাহমুদকে নিতে রাজি হলো।
একটু দূরের দোকান গিয়ে সিগারেট কিনে নদীর ধারে গিয়ে কুমকুম খাওয়া শুরু করলো। মাহমুদ তখন বললো; হুজুর! জমিদার হুজুর কি জানে যে, আপনি সিগারেট খান? কুমকুম বললো; আবে! তুই এইসব জাইনা কি করবি। তখন জমিদার যে ছেলে কি করে না করে তা গোপনে জানানোর জন্য বলেছেন, মাহমুদ কুমকুমকে বলে দিলো। কুমকুম বললো; সাবধান, আব্বুকে এসব বলিস না। তুই সবসময় আমার সম্পর্কে ভালো ভালো কথা বলবি। মাহমুদ মাথা নেড়ে সায় দিলো।
কয়েকমাস পর> এভাবে ধীরে ধীরে জমিদার পুত্রের আস্থা ভাজন হয়ে উঠলো মাহমুদ। এখন মাহমুদের সহায়তায় কুমকুম ঘরের মধ্যেই সিগারেট খেতে পারে। জমিদারও যখন তখন ছেলের বাইরে যাওয়া বন্ধ দেখে বেশ খুশী।
মাহমুদ কুমকুম আলির জন্য এতো খাটে, তবুও একটু এদিক ওদিক হলেই ছোটে গালির ফোয়ারা।
একদিন ভোরে মাহমুদ কিছুটা অসুস্থ ছিলো। ওদিকে কুমকুমের সিগারেট ফুঁড়িয়ে গেছে। ডেকে নিয়ে বললো; এই যা। আমার জন্য সিগারেট নিয়া আয়। মাহমুদ বললো; হুজুর! একটু পরে যাই। শরীর বেশি ভালো না। বলা শেষ হয়নি, কুমকুম বললো; ……চ্ছা, তুই এখনি যাবি। সাহস তো কম না; আমারে কস একটু পরে যাই। মাহমুদ গালি শুনে মন খারাপ করে সিগারেট কিনতে গেলো।
কিছুদিন পর এক শুভ্র সকালে টেবিলে চা রাখতে গিয়ে মাহমুদের হাত থেকে কাপ নিচে পড়ে গেলো। কুমকুম আলী টয়লেটে ছিলো। আওয়াজ শুনে বাইরে এসে সবকিছু দেখেই থাপ্পড় বসিয়ে দিলো।
বিশ্বাসযোগ্যতার পুরস্কার স্বরূপ এভাবে কথায় কথায় গালি আর থাপ্পড় প্রাপ্তি মাহমুদের মনকে খারাপ করে তুললো। সে ভাবতে লাগলো; আমি প্রতিটি কথা কতো নির্ভরতার সাথে আদায় করি, তবুও সামান্য এদিক সেদিক হলে আমায় গালি আর থাপ্পড় খেতে হয়। তবে কি দরকার এতো আমানতদারী দেখানোর!
অতঃপর আসলো সেই প্রভাত। কুমকুম আলী মাহমুদকে সিগারেট আনতে যখন টাকা দিচ্ছিলো, মাহমুদ বললো; হুজুর, বাজারে দেখলাম একজন গাজা বিক্রি করছে। দেখবেন নাকি একটু? মাহমুদের কথা শুনে কুমকুম আলির শখ জাগলো সে একটু গাজা টেস্ট করবে। সিগারেট তো এখন ঘরের মধ্যে প্রতিদিনই খায়। একটু গাজা খেয়ে দেখা দরকার কেমন লাগে। নতুন অভিজ্ঞতা হবে ভাবতেই অন্যরকম লাগছে। মাহমুদকে বললো; তুই সেখান থেকে গাজা নিয়ে আয়। সাবধান, কেউ যেন জানতে না পারে কার জন্য কিনছিস। যদি কেউ ঠের পায় তবে তোর বা…………।
বাপকে নিয়ে গালি দেয়াতে মাহমুদের মিজায বিগড়ে গেলো। এতদিন কতো গালি খেয়েছে, কতো লাথি সহ্য করেছে। কিন্তু বাপকে তুলে গালি দেয়াটা তাকে প্রচণ্ড কষ্ট দিলো। প্রচণ্ড রাগ উঠে গেলো। মনে মনে বললো, আজ ঠের পাবি বাছাধন।
কুমকুমের কাছ থেকে টাকা নিয়ে সে বাইরে গিয়ে গাজা কিনে সরাসরি আরকম আলী জমিদারের কাছে গেলো। গাজার পোটলা সামনে রেখে বললো, হুজুর! কুমকুম হুজুর দেখলাম আগুন দিয়ে পুড়িয়ে এসব কি খাচ্ছে। প্রচণ্ড খারাপ গন্ধ পেয়ে আমি লুকিয়ে নিয়ে এসেছি। আমার ভয় করছে, হুজুরের কিছু হয়ে যায় কিনা।
আরকম আলী পোটলা হাতে নিয়েই গাজা চিনতে পারলেন। তার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। ছেলে তার ঘরে বসে গাজা টানছে।
ছেলেকে নিয়ে আসতে মানুষ পাঠালেন। সামনে আসার পর আরকম আলী কুমকুম আলিকে বললেন; তোমার উপর আমার অনেক আশা ছিলো। সেই আশায় তুমি পানি ঢেলে দিছো। ঘরে বসে আজ গাজা টানতে পারছো কাল আরও কি করে বসবে কে জানে। শুনো! আগামীকাল তুমি বোর্ডিং এ চলে যাচ্ছো। মানুষ হতে পারলে এই মহলে যায়গা হবে নইলে পথে পথে ঘুরবে।
কুমকুম আলির মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। ভাবতে লাগলো; যদি আজ মাহমুদকে গালি না দিতাম তবে এই বিপদে পড়তাম না। কিন্তু তখন তো আর কিছু করার নেই।
>ট্রেইলার (Trailer) একটি ইংরেজি শব্দ। আগামী …… নমুনা হিসাবে প্রদর্শিত খণ্ড চিত্রকে ট্রেইলার বলা হয়।
>গল্পে বর্ণিত প্রতিটি ঘটনা ও চরিত্র কাল্পনিক। বাস্তবের কোন ঘটনা বা ব্যক্তির সাথে তার মিল অনিচ্ছাকৃত ও কাকতালীয় মাত্র। ফেসবুকে প্রকাশিত