ভূমিকা> আজ ঐতিহাসিক ০৬ এপ্রিল। ২০১৩ সালের এই দিনে শাপলা চত্বরে সংগঠিত হয়েছিলো বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জাগরণ। অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের উদ্যোগে নাস্তিক মুরতাদদের শাস্তির দাবীতে আয়োজিত লংমার্চকে কেন্দ্র করে সরকার কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে। পরিবহন শ্রমিকদের হুমকি প্রদানের মাধ্যমে একপ্রকার অঘোষিত ধর্মঘট জারি করে। ঘাদানিকের নেতৃত্বে ২৭টি আওয়ামীলীগ-পন্থি রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন হরতাল আহ্বান করে। তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চ লংমার্চ রুখে দেয়ার দাবী করে।
কিন্তু সব বাঁধা বিপত্তিকে পাঁশ কাটিয়ে ধর্মপ্রাণ জনতা দলমত নির্বিশেষে সেদিন প্রমাণ করে দেয়; এই দেশের ইসলামী বিপ্লব থমকে যাবার নয়।
(১)
২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি এশিয়ার বিখ্যাত ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী’র সম্মানিত পরিচালক, সর্বজন শ্রদ্ধেয় বুজুর্গ, আলেমেদ্বীন, হযরত মাদানী রহ.-এর সুযোগ্য খলীফা, শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী সাহেব (দামাত বারাকাতুহুম) এর নেতৃত্বে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ গঠিত হয়। যদিও নাস্তিক মুরতাদদের শাস্তির দাবীতে আন্দোলনের মাধ্যমে সংগঠনটি সর্বাধিক পরিচিতি লাভ করে।
হেফাজতে ইসলামের লক্ষ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে!
১) মহান আল্লাহ তা’আলার সন্তুষ্টি অর্জন।
২) কুরআন-হাদীস অনুসারে জীবন যাপনের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা।
৩) আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে একটি আদর্শ ইসলামী সমাজ বিনির্মাণ।
হেফাজতে ইসলাম সূচনালগ্ন থেকে স্বীয় লক্ষ্য উদ্দেশ্য প্রতিষ্ঠায় অবিচল। দেশের ধর্মপ্রাণ কোটি কোটি জনতাকে সাথে নিয়ে একদিন হেফাজত তাঁর কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছুবে ইনশাল্লাহ।
(৩)
তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চের ইসলাম বিদ্বেষী কর্মকাণ্ড হেফাজতে ইসলামকে মাঠে নামতে উদ্বুদ্ধ করেছিলো। ধর্ম বিদ্বেষী নাস্তিক রাজিব হায়দার ওরফে থাবা বাবা নিহত হলে তাকে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ উপাধি প্রদান পূর্বক অজু ছাড়া জানাযা আদায়, জাতীয় সংসদে শোক প্রস্তাব অনুমোদনসহ যাবতীয় ঘৃণ্য কর্মকাণ্ডই প্রত্যক্ষ করেছিলো এদেশের তৌহিদী জনতা। অথচ রাজিবের কুরুচিপূর্ণ লেখার দাবী ছিলো, তাকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে দেয়া।
হেফাজতে ইসলাম তখন নাস্তিকদের শাস্তির দাবীতে ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ আহ্বান করে। সরকার হেফাজতকে স্বেচ্ছায় প্রতিপক্ষ বানিয়ে কর্মসূচী বাতিলে জন্য হুমকি প্রদান করে। ধাবমান জনতাকে রুখতে ট্রেন, বাস এমনকি বিমান চলাচল পর্যন্ত পর্যন্ত বন্ধ করে দেয়। একাত্তরের মুরগি সাপ্লাইয়ার শাহরিয়ার কবিরের নেতৃত্বে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির(ঘাদানিক) নেতৃত্বে ২৭টি আওয়ামীলীগ-পন্থি রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন হরতাল আহ্বান করে।
কিন্তু সেদিন জনতার স্বতঃস্ফূর্ত আবেগকে রুখার সাধ্য ছিলো না সরকারের। গাড়ি না পেয়ে পদযাত্রার মাধ্যমে প্রায় ৭০/৮০ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করেও মানুষ শাপলা চত্বরে উপস্থিত হয়েছিলো। ঢাকাবাসীও পথে পথে পানি, বিভিন্ন ফলমূল, খাবার দিয়ে জনতার সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছিলেন।
সরকার বাঁধা সৃষ্টি করাতে মহাজাগরণ শাপলা পেরিয়ে পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়েছিলো। চট্টগ্রামের ওয়াসা মোড়, সিলেটের কোর্ট পয়েন্ট থেকে শুরু করে রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, রংপুর এমনকি জেলা শহরগুলোতে অবস্থান কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়েছিলো।
সেদিন দেশবাসী এক নতুন প্রভাত প্রত্যক্ষ করেছিলো। জনতার আবেগ, ধর্মের প্রতি ভালোবাসা, নাস্তিকদের প্রতি ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ সবকিছুই ছিলো চমক জাগানিয়া। আলোকিত সেই ভোরের প্রতীক্ষায় বহুকাল অপেক্ষমাণ জনতার অপেক্ষার প্রহর সেদিন সীমানায় পৌঁছেছিলো। নতুন স্বপ্নের সাহস যুগিয়েছিলো। বিশ্বাস করতে বাধ্য করেছিলো; ইনশাল্লাহ পথ হারাবে না বাংলাদেশ।
(৪)
০৬ এপ্রিলের লংমার্চের বিরুদ্ধে তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চ হাজার-খানেক মানুষ নিয়ে বিকেলে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছিলো। কয়েক লক্ষ জনতার বিরুদ্ধে হাজার খানেক মানুষ প্রতিবাদ করতে গেলে নির্লজ্জ হতে হয়। গণজাগরণ মঞ্চ সেদিন নির্লজ্জের মতোই আচরণ করেছিলো। কিন্তু তাদের প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলামের গ্রহণযোগ্যতা বিন্দুমাত্র হ্রাস পায়নি।
লংমার্চ পরবর্তী একমাস হেফাজতে ইসলাম দেশব্যাপী শানে রিসালত মহাসম্মেলনের আয়োজন করেছিলো। প্রতিটি সমাবেশে লাখের অধিক মানুষ অংশ নিয়েছিলো।
সিলেটের সমাবেশ সম্পর্কে জানতে> ক্লিক করুন >চট্টগ্রামের সমাবেশ সম্পর্কে জানতে> ক্লিক করুন > খুলনার সমাবেশ সম্পর্কে জানতে> ক্লিক করুন > বগুড়ার সমাবেশ সম্পর্কে জানতে> ক্লিক করুন
অথচ দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের সৈনিকেরা শাহবাগের বাইরে একটিও উল্লেখযোগ্য! সমাবেশ করতে পারেননি। সত্যি বলতে হেফাজতের মহাজাগরণের সাথে শাহবাগের তথাকথিত গণজাগরণের তুলনা হতে পারে না। সব ধরণের বিপত্তিকে অতিক্রম করে পায়ে হেঁটে শাপলা চত্বরে উপস্থিত হওয়া কিভাবে দিনের পর দিন পুলিশি প্রহরায় মাগনা বিরিয়ানি খেয়ে চেঁচামেচি করার সাথে তুলনীয় হতে পারে! মাত্র কুড়ি-খানেক মানুষের বিপরীতে কয়েক লক্ষ জনতা!!!
(৫)
লংমার্চে ০৫ মে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা অবরোধের ঘোষণা দেয়। নির্দিষ্ট দিনে ঢাকা অবরোধ শেষে রাতে শাপলা চত্বরে অবস্থানকালে সরকার নির্লজ্জের মতো হামলা করে। কিন্তু এই হামলা সরকারকে লাভবান করতে পারেনি। জনগণের অল্প যা কিছু সহানুভূতি ছিলো, হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হামলা করে সেটিও হারিয়ে বসে সরকার। ফলাফল, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের বৃহৎ দলগুলোকে রেখে একাকী নির্বাচন করে সরকার গঠন। কোরআন পোড়ানোর মিথ্যা অপবাদ দিয়েও প্রমাণ দেখাতে পারেনি। সরকার জানে এই দেশের জনতা হেফাজত নেতৃবৃন্দের প্রতি বিশ্বাস হারাবে না। এই কারণেই তো বিভিন্ন সময় সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের শাহ আহমদ শফী সাহেবের কাছে গিয়ে দোয়া চাওয়ার নামে ক্ষমা/অনুরোধের ঝুলি নিয়ে উপস্থিত হতে দেখা যায়। বিভিন্ন বামপন্থী সংগঠনের দাবী সত্ত্বেও আহমদ শফী (দা: বাঃ) কে গ্রেফতারের কথাও ভাবতে পারেনি।
অথচ গণজাগরণ মঞ্চের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে ভাবলে হাসতে হাসতে অবস্থা খারাপ হবার দশা। সর্দি হলে টিস্যু ব্যবহার হবার আগ পর্যন্ত মানুষ যত্ন করে পকেটে রাখে। ব্যবহার শেষে ঘৃণা ভরে ডাস্টবিনে ফেলে দেয়। তথাকথিত মঞ্চের অবস্থা টিস্যুর মতো হয়েছে। প্রয়োজনের সময় বিরিয়ানি খাইয়ে দিনের পর দিন শাহবাগে জায়গা দিয়েছিলো। প্রয়োজন শেষে এখন পায়ের ধুলোর মূল্য দিতেও রাজি নয়।
পরিশিষ্ট> হেফাজতে ইসলামের মহাজাগরনের বর্ষপূর্তিতে পত্রিকা পড়ে চরম হতাশ। দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের মহান বিপ্লবীদের সাথে এই আচরণ!!!
০৫ এপ্রিল ২০১৪ হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরীকে সিলেট এয়ারপোর্টে সংবর্ধনা প্রদানের ছবি আসছে। সেইসাথে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের উপর পুলিশি হামলার রিপোর্টও আসছে।(http://www.gonojagoronmoncho.com/…/682-2014-04-04-19-07-33.…)
একবছর শেষে এই প্রাপ্তি দেখে তো হতাশ হওয়া যায় না। গজা-মঞ্চের সমর্থকগণ! আপনারা হতাশ হননি তো। > লেখক : নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। ৬ এপ্রিল, ২০১৪ ফেসবুকে প্রকাশিত ইস্টিশন ব্লগে প্রকাশিত