আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনায় আগামীকাল জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ৩ লাখ মানুষ একত্রিত হয়ে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লিখাতে জাতীয় সঙ্গীত গাইবে। এই আয়োজনে ব্যয় হবে মাত্র ৫০ কোটি টাকা!
ইংল্যান্ডের এক মদ নির্মাতা কোম্পানির মালিক হিউ বিভারের পরিকল্পনায় ১৯৫৫ সালের ২৭ আগস্ট ১৯৮ পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয় গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের প্রথম সংখ্যা।
গিনেস বুক কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন বিরল তথ্য দিয়ে প্রতিবছর বই বের করে। যাতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডের পাশাপাশি উদ্ভট রেকর্ডের উল্লেখ থাকে। অদ্ভুত এই সংকলন বছরে বিক্রি হয় ৩০ লাখ কপি।
বিশ্বের সর্বাধিক লম্বা/খাটো মানুষের তথ্য যেমন গিনেস বুকে জায়গা করে নিয়েছে, তেমনি রয়েছে একমিনিটে কে বেশি বায়ু ত্যাগ করেছে, কে নাক দিয়ে নুডুলস খেয়েছে, কে একত্রে সর্বাধিক পোশাক পরেছে, কার নখ/জিহ্বা সবচেয়ে লম্বা, কে সবচেয়ে বেশীদিন পানি স্পর্শ করেনি ইত্যাদি সব আজগুবি তথ্য।
গিনেস বুকের রেকর্ড দেখার পর ধারণা হয়, এটি গুরুত্ব দেয়ার মতো কোনো প্রতিষ্ঠান নয়। সম্ভবত বাংলাদেশ বিশ্বের প্রথম রাষ্ট্র, যাদের রাষ্ট্রপ্রধানের উদ্যোগে গিনেস বুকে নাম লেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ অনুন্নত দেশগুলোর মাঝে উল্লেখযোগ্য একটি নাম। দারিদ্রতা দেশকে অক্টোপাসের মতো জড়িয়ে আছে। শিক্ষা, সামাজিক অবস্থান, সম্প্রীতি, রাজনীতি সবদিকেই বাংলাদেশের অবস্থান হতাশাজনক। দেশের অগণিত বিদ্যালয়ে ছাঁদ নেই। মানুষ সামান্য খাবারের জন্য রীতিমতো যুদ্ধ করছে। এমতাবস্থায় গিনেস বুকে নাম লেখানোর জন্য পঞ্চাশ কোটি টাকা ব্যয় কতটুকু যুক্তিসঙ্গত প্রশ্নের উদ্রেক হওয়াটা স্বাভাবিক।
টাকা ব্যয় ব্যতীত বিশ্ব রেকর্ড গড়তে তো প্রধানমন্ত্রীর সামনে অনেক কিছু ছিলো। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ভোটার বিহীন নির্বাচনে ১৫০+ সাংসদ নির্বাচিত হওয়া, একই জোটের সদস্য হয়ে বিরোধী দলের মর্যাদা প্রাপ্তিসহ বিভিন্ন রেকর্ড গিনেস বুকে তুলতে পারলে সম্ভবত একটি অতিরিক্ত রেকর্ড দেশের ভাগ্য জুটতো। রেকর্ড গড়া হয় ভাঙার উদ্দেশ্যে। ইতিপূর্বে রবির উদ্যোগে সর্ববৃহৎ জাতীয় পতাকার রেকর্ড গড়ার মাত্র কয়েক দিনের ভিতর পাকিস্তান সেই রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়েছিলো।
মাত্র ৩ লাখ মানুষের কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীতের রেকর্ডও কদিন ঠিকে থাকবে আল্লাহই জানেন। শতকোটি মানুষ বসবাসকারী কোনো রাষ্ট্রের একটি অঞ্চলই বাংলাদেশের রেকর্ড ভেঙ্গে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু ভোটার বিহীন নির্বাচন সম্ভবত বাংলাদেশ ছাড়া অন্য রাষ্ট্রে আয়োজন হবে না। সুতরাং স্থায়ী রেকর্ড গিনেস বুকে তোলার উদ্যোগ গ্রহণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। ফেসবুকে প্রকাশিত