১০) নিয়মিত লম্বা পাঞ্জাবী ও পাগড়ি পরার অভ্যাস নেই। ইজতেমায় যাওয়ার সময় ধুলোবালি থেকে রক্ষা পেতে লম্বা কালো পাঞ্জাবি পরলাম। টঙ্গি পৌঁছার পর ২৪ জানুয়ারি শুক্রবার মনে হলো, পাগড়ি পরছি না কেন! সহপাঠী ওয়ালী উল্লাহ খুব সুন্দর করে আরবদের মতো পাগড়ি বাঁধতে পারেন। তাঁকে বলে বিকেলে পাগড়ি পরলাম। কালো লম্বা পাঞ্জাবী, আরবদের মতো পাগড়ি নিয়ে যে এতো কিছু হবে তখন একটুও ভাবিনি। তবে সবগুলো অভিজ্ঞতাই আনন্দদায়ক।
১) জর্ডানের ৩ শাইখের সাথে মার্কেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। প্রায় সবাই তাঁদের সাথে সাথে আমার সাথেও মোসাফাহা করছে। সেই সাথে আমাকেও ভিনদেশী মনে করে পাঁশে দাঁড়ানো মানুষদের নবাগত কেউ কেউ জিজ্ঞেস করছে, এরা কোথাকার মেহমান। অতঃপর আমি যখন কারো সাথে বাংলায় কথা বলছি, তখন আবার অবাক হয়ে আমায় জিজ্ঞেস করছে; আপনি কি বাংলাদেশী!!!
২) পৃথকভাবে বেশ-কজন মাদরাসায় পড়ুয়া আমার সাথে মোসাফাহার পর যখন জিজ্ঞেস করলেন; “কাইফা হালুকা”? আমি বললাম; ভালো। লজ্জিত ভঙ্গিতে বললেন; ভেবেছি, আপনি দেশি নন!!!
আবার অনেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এমনভাবে চেহারা দেখছিলেন যে, অনেকবার হাঁসির প্রভাবে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম!!!
৩) স্লিপিং বেড কিনার জন্য মার্কেটে গেলাম। সহপাঠী ওয়ালী উল্লাহ বললেন; এখানে আরবিতে কথা বলবো। আমি না করার পরও তিনি আরবিতে মূল্য জিজ্ঞেস করলেন। দোকানদার সম্ভবত অনুমানের উপর ভর করে বললো “3 thousand” এরপর ওয়ালী উল্লাহ ভাই যখন বললেন; “ثمن فاحش” তখন আর বিক্রেতা কিছু বলতে পারে না।
সেই দোকান ত্যাগ করে আমরা পরবর্তী দোকানের পথে যাচ্ছি, ওয়ালী উল্লাহ ভাইকে বললাম, এই দোকানে আরবী চলবে না। এভাবে আরবি বলতে গিয়ে শেষে আমার বেড কেনা হবে না। তিনি আমার কথা মেনে নিলেন। দোকানের সামনে যেতেই বিক্রেতা “Where Are You From” (আপনি কোথায় থেকে আসছেন) বলে উঠলো। যখন বললাম; বাংলাদেশী। হাত দুটো এগিয়ে কাঁধের উপর রেখে বললো; ভাই! যেভাবে আসছেন, আমি তো ভাবছি পাকিস্তানী নয়তো ইন্ডিয়ান। অতঃপর অনেক্ষন সবাই মিলে হাসলাম।
৪) আমার বোনের শ্বশুর ইজতেমা উপলক্ষে দেশে এসেছেন। প্রায় ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি তাবলীগের সাথে সম্পৃক্ত। ইসরাইল, জার্মানিসহ অনেকগুলো দেশে চিল্লা দিয়েছেন। তাঁর সাথে দেখা করতে যাওয়ার সময় রাস্তায় দেখা হয়ে গেলো। আমার হাতে ধরে তাঁদের অবস্থানস্থলে নিয়ে গেলেন। ভিতরে প্রবেশ করতেই তাঁদের সাথে থাকা এক মাওলানা সাহেব সালাম দিয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন; কোন দেশি মেহমান? যখন পরিচয় দিলেন তখন সবাই মিলে হাসলেন আর মাওলানা সাহেব বললেন; দেখতে তো আরবদের মতো লাগছে!!! তাই আমি ভাবছিলাম………
৫) মেহমানদের জন্য টমেটো আর লেবু কিনে ফেরার পথে হাটতে ইচ্ছে করছিলো না বলে ভাবলাম রিকশা নিয়ে যাই। ওয়ালী উল্লাহ ভাই ড্রাইভারকে বলতেই আমাদের নিয়ে বিদেশিদের নির্ধারিত খিত্তার দিকে রওয়ানা দিলো। মাঠের পশ্চিম দিকে তুরাগ নদীর সেতুতে আসা মাত্র প্রহরায় থাকা স্বেচ্ছাসেবকরা ড্রাইভারকে বাঁধা দিলেন। ড্রাইভার বললো; বিদেশি মানুষ! বিদেশি মানুষ! আমরা তখন নীরব বসে আছি। প্রহরীগণ কিছুক্ষণ আমাদের ইশারায় রিকশা নিয়ে যাওয়া নিষেধ বুঝানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে অবশেষে যাওয়ার অনুমতি দিয়ে দিলেন!!!
৬) বিদেশি স্ট্যান্ডের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছি। অবস্থা দেখে আমার ধারণা, এই জায়গাটায় সর্বাধিক নিরাপত্তা দেয়া হয়ে থাকে। লাঠি হাতে ২ জন এগিয়ে এসে আমাকে আর জর্ডানের অপর শাইখকে বললেন; এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন কেন! গেইটের ভিতরে যান!!! যদিও আমরা ভিতরে না গিয়ে খানিকটা সরে দাঁড়িয়েছিলাম।
৭) রবিবার এশার নামাজের পর খাওয়া দাওয়া করে সিলেটের পথে রওয়ানা দিলাম। জায়গা ছাড়ার সময় আমীর সাহেব বললেন; গাড়ীতে উঠার পূর্ব পর্যন্ত সবাই যেন লাইন বেঁধে হাঁটি। আমি নিয়ম মেনে হাঁটছিলাম। নাটোরের এক মাদরাসা ছাত্র আমাদের মাদরাসার (কোন জামাতের ছাত্র মনে নেই) একজনকে জিজ্ঞেস করলো; উনি কি বিদেশী? সেই সাথী এসে আমায় বললেন; নাটোরের এক ছাত্র জানতে চেয়েছে; আপনি বিদেশী কি না!!!
৮) আহমদ লাট সাহেবের বয়ান চলাকালীন বয়ানের মিম্বারের সামনে গেলাম। অনেক্ষন বয়ান শুনে যখন ফিরছি, বসে থাকা একজন বলছে; পাকিস্তানী ব্যাটা এখানে বয়ান শুনতে আসছে!
*বিশ্বাসযোগ্যতার জন্য গতকাল তোলা ২টি ছবি এডিট করে কমেন্ট বক্সে দিলাম। যদিও আমি পাগড়ি বাঁধতে পারি না বলে ভালোমতো হয়নি।
>ইজতেমার বিশেষ নোটবুক থেকে…… ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ ফেসবুকে প্রকাশিত