সর্বজন বিদিত, কওমী মাদরাসা জনগণের টাঁকায় পরিচালিত প্রতিষ্ঠান। আর কওমী মাদরাসা পরিচালনার উদ্দেশ্য যে, সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে “সহনশীলতা, সহমর্মিতা, সততা, শৃংখলাবোধ, সমঝোতা-বোধ, সত্যবাদিতার শিক্ষা-দীক্ষা, সৎ এবং ন্যায়ের পথে চলার শক্তি, ধর্মীয় মূল্যবোধের বিপ্লব সাধন” তা কারো অজানা নয়। মুসলিম জনতার স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতা নিয়ে যুগ যুগ ধরে কওমী মাদরাসা পরিচালিত হয়ে আসছে।
কওমী মাদরাসার শিক্ষার্থী সংখ্যা কয়েক লক্ষ। ঢাকা, চিটাগাং এবং সিলেট অঞ্চলে সর্বাধিক কওমী মাদরাসার অবস্থান হওয়ার কারণে দূরের ছাত্রদের সুবিধার্থে বড় মাদরাসাগুলোতে ফ্রি বোর্ডিং এর ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া আর্থিক অসচ্ছলতা, পড়ালেখার পরিবেশে অবস্থান সহ নানা কারণে বোর্ডিং রয়েছে এমন মাদরাসার অধিকাংশই শিক্ষার্থীই ক্যাম্পাসে থেকে পড়ালেখা করে। সঙ্গতকারণে মাদ্রাসাগুলোতে প্রতিমাসেই কয়েক লক্ষ টাঁকার প্রয়োজন হয়। ধর্মপ্রাণ জনতার আন্তরিক সহযোগিতার ফলে প্রয়োজনীয় টাঁকার সঙ্কুলান সাধারণত হয়ে যায়।
তবে কখনো কখনো ঘাটতিও দেখা দেয়। আর নিজস্ব উপার্জন ব্যবস্থা না থাকার ফলে ঘাটতির মুখে আপতিত সমস্যা থেকে বাঁচতে বড় অঙ্কের একটি ফাণ্ড প্রতিবছর কোরবানির মৌসুমে মাদরাসাগুলো সংগ্রহ করে নেয়। কেননা আর্থিক দুর্গতির কারণে মাদরাসাগুলো বন্ধ হয়ে যাক, মাদরাসার সাথে সংশ্লিষ্ট ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ এমনটি ভাবতেই পারেন ন।
আর কুরবানির চামড়ার বিঁধান হচ্ছে “কুরবানির চামড়া দান করে দিবে কিংবা নিজের জন্য ব্যবহার করবে। বিক্রি করে দিলে সেই টাকা নিজে ব্যবহার বৈধ নয়। বরং সেই টাকা বিতরণ করে দিতে হবে। কুরবানির পশুর গোশত কাটার কারণে বিনিময় হিশেবে পশুর চামড়া কসাইকে দেয়া জায়িয নেই।”
আর দানের ব্যাপারে বিখ্যাত ফতোয়া গ্রন্থ শামিতে লেখা হয়েছে > “আত্তাসাদ্দুক্বু আলাল আলিমী আফজালূ। (অন্য খাতে খরচ করার চাইতে) জ্ঞানীদের উপর খরচ করা অধিক উত্তম।” সুতরাং সুস্পষ্ট যে, মাদরাসায় দান করে দেয়া উত্তম দান।
তবে আশেপাশের গরীবদেরকে দিতে চাইলে চামড়া বিক্রি করে অংশবিশেষ মাদরাসায় দিতে পারেন। তাঁতে অন্তত দানের একটা অংশতো বৃহৎ কাজে ব্যবহৃত হলো।
যদিও বর্তমান সময়ে কেউ কেউ মাদরাসায় চামড়া দেয়ার বদলে “কুচিকুচি করে দিয়ে রাস্তার কোন কুকুরকে খাওয়াতে চান” বলে হিমালয় সাইজের বানী প্রসব করেছেন। প্রচণ্ড ধর্ম বিদ্বেষ থেকেই যে এসব বানী প্রসবিত হচ্ছে তাঁতে কারো সন্দেহ নেই। চামড়া বিক্রির টাকায় মাদরাসার পরিচালকরা বোম কেনার সরঞ্জাম, হেলিকপ্টারে প্রমোদভ্রমণ সহ নানা কাজে ব্যবহার করেন বলে নানারকম মিথ্যা অভিযোগের ডালি সাজিয়ে বসেছেন সুশীল নামধারী চুষিলেরা! যদি মাদরাসা ছাত্ররা খুনের মামলার আসামি হতো, মাদরাসা পরিচালকদের অন্তত একজন সিআইপি খেতাবধারী হতেন, তবে না হয় কথাগুলো। বিশ্বাসযোগ্যতা পেতো। কিন্তু সত্য জানতে এসব গণ্ডমূর্খেরা কখনো মাদরাসা ঘুরে দেখেনি; কিভাবে কষ্ট সহ্য করে কুরআন ও হাদিসের সেবায় নিজেদের লাগিয়ে রেখেছে মাদরাসা ছাত্ররা। দিনের পর দিন একেবারে সাধারণ খাবার খেয়ে নিজেদের দায়িত্ব আদায় করে চলেছে।
কীবোর্ড চেপে অলস মস্তিষ্কে ইবলিসের যোগান দেয়া কথাগুলো কম্পোজ করেই তথাকথিত ধার্মিক বেশধারী সুশীলদের দায়িত্ব শেষ!
ধর্মীয় বিঁধানকে নিয়ে কটাক্ষ করে ধার্মিক সাজার মতো ভণ্ড যে আমাদের সমাজে এখন অজস্র পাওয়া যায় তাঁতে সত্যি অবাক হতে হয়। ধর্ম কারো চাহিদার অনুকরণ করে না; ধর্মের অনুকরণ করতেই মানুষ নির্দেশিত। আক্ষেপ! যদি নির্বোধগুলো বুঝতো!
*আরেকজনের লেখা। ভালো লাগলো বলে অনুমতি সাপেক্ষে কপি পেস্ট করলাম।
> আমি চামড়া তোলার সমর্থক নেই। অনেক হয়েছে। এবার অন্তত মাদরাসাগুলোর স্থায়ী আয়ের পথে হাটা উচিত। তবে যে প্রেক্ষাপটে লেখাটি তৈরি হয়েছে তাঁতে আমার সমর্থন রয়েছে। ইটের বদলে পাটকেল না দিলে আমাদের দুর্বলতাই প্রকট হবে। > লেখক : নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। ফেসবুকে প্রকাশিত শব্দনীড় ব্লগে প্রকাশিত