আমি হানাফি মাযহাবের অনুসারী। তবে আমার মধ্যে এখনো এমন যোগ্যতা হয়নি যে,আমি আমার মাযহাব সম্বন্ধে কাউকে ভালোভাবে ধারণা দিতে পারবো। মাদরাসায় পড়ালেখা করার সুবাদে প্রতিনিয়ত নতুন কিছু শেখার সৌভাগ্য হচ্ছে।
আমি এই বিশ্বাস রাখি যে,আমাদের মাযহাব সঠিক। অন্য মাযহাবের অনুসারীরা নিশ্চিত ভুলের উপর আছেন এমন ধারনাও আমি রাখি না।
আহলে হাদিস সম্প্রদায় সম্বন্ধে আগ্রহভরে জানার চেষ্টা করি। পরিচিত মুফতি সাহেবানদের সাথে দেখা হলেই প্রশ্নের পর প্রশ্ন করতে থাকি। এর ফলে অন্তত কিছুটা ধারণা হয়েছে এমন দাবী করাটা ভুল হবে না।
আমাদের বিশ্বাস অনুযায়ী মাযহাব মানা ওয়াজিব। যারা কোনো মাযহাবে বিশ্বাস করে না তাদের সর্বোচ্ছ ‘ফাসিক’ বলা যাতে পারে। কয়েকদিন পূর্বে আমার এক শিক্ষক পড়ানোর সময় বললেন : লা মাযহাবিদের এমন একটা কথাও খুঁজে পাবে না,যেটা মাযহাব চতুষ্টয় থেকে ভিন্ন। অর্থাৎ তাদের সবগুলো কথাই কোনো না কোনো মাযহাবের সাথে মিলে যায়। সুতরাং তাদের পথভ্রষ্ট বলা যাবে না।
এতো লম্বা ভূমিকা লেখার পিছনে বিশেষ একটা উদ্দেশ্য আছে। দু’জন মানুষের কথোপকথন শেয়ার করতে চাই। যাতে এমন কিছু কথা রয়েছে যা আমাদের চিন্তা করতে বাধ্য করে যে, ‘আমরা মাদরাসায় পড়ে কি শিখছি’? ইসলাম তো মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছে। ইচ্ছে হলো আর কাউকে কাফির অথবা নাস্তিক বলে দেয়া কতটুকু উচিৎ?
একথা ঠিক যে,লা মাযহাবিরা মাযহাবের বিরোধিতা করতে গিয়ে মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করে। তবে এমন মানুষও তাদের মধ্যে আছেন যাদের নাম শুনলে ‘রহঃ’ কিংবা ‘দাঃ বাঃ’ নিজের অজান্তেই মুখ থেকে বের হয়ে আসে। সুতরাং লা মাযহাবি হলেই যে তাকে কাফির কিংবা নাস্তিক বলতে হবে এমনটি ইসলাম কখনোই বলে না। আর যদি হাদিসের দরসে বসার সৌভাগ্য অর্জনকারী কেউ এমনটি বলে বসেন তবে কষ্টের পরিমাণ কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
১ম ব্যক্তি) : ডা: জাকির নায়েক একটা নাস্তিক!
২য় ব্যক্তি) : ভালোই বলেছেন। কি কি কাজ করলে মানুষ নাস্তিক হয়ে যায় আরেকটু বিস্তারিত বললে ভালো লাগতো।
কথায় কথায় নাস্তিক বলাটা ফ্যাশন হয়ে যাচ্ছে! আল্লাহ তায়ালা হিফাজত করুন।
১ম ব্যক্তি) : যে মাযহাব মানে না সেতো নাস্তিক!
২য় ব্যক্তি) : আপনার কথা অনুযায়ী এখন দেখছি শায়্খ বিন বায (রহঃ),নাসিরুদ্দিন আলবানী (রহঃ),ইউসুফ কারযাবী (দা: বাঃ) এর মতো মানুষদের নাস্তিক বলতে হবে। তারাতো মাযহাবী নন।
একটা কথা বলি। উপযুক্ত প্রমাণ ছাড়া কারো উপর অভিযোগ আরোপ কতো বড় গোনাহ সেটা আপনার জানা আছে। কোন মুফতি সাহেবের কাছে কি কখনো শুনেছেন যে,মাযহাব না মানলে নাস্তিক হয়ে যায়! নাস্তিক তো সেই,যে আল্লাহকে অস্বীকার করে। এখন যদি আপনার কথা মিথ্যা হয়,তবে ভেবে দেখেছেন কি . . . . . . . . .!
১ম ব্যক্তি) : যে মাযহাব মানে না সেতো মুমিন থাকে না,আর যে মুমিন থাকে না সেতো নাস্তিক। এতে আপনি কি বেজার? যে নাস্তিক তাকে নাস্তিক বলতে হয়!
২য় ব্যক্তি) : শ্রেণির হিসেবে আপনি আমার বড় ভাই। আপনার কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। তাই আরেকটু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। বলা বাহুল্য যে,আপনার স্ট্যাটাসটা পড়ে খারাপ লেগেছে।
যে ধর্মে বিশ্বাস করে, (চাই মুসলিম হোক,ইহুদী হোক,খ্রিস্টান হোক) সে আস্তিক। বিভেদ এই কথায় যে ইহুদী,খৃস্টানরা নবী (সা:) কে বিশ্বাস করে না।
আর যে মাযহাব মানে না,তার অমুসলিম হওয়ার সম্ভাবনা যেখানে ০%,নাস্তিক হওয়ার কল্পনাতো পাগলামি।
১ম ব্যক্তি) : তাঁরা মাযহাব মানে না আপনাকে কে বলছে? (সম্ভবত শায়্খ বিন বায (রহঃ),নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ),ইউসুফ কারযাবী (দাঃ বাঃ) যে সালাফি সেটার প্রমাণ খুঁজছেন?)
২য় ব্যক্তি) : কাদের কথা বলছেন? (মাদরাসায় উচ্চশ্রেণীতে পড়াশুনা করে এমন একজন ব্যক্তি তাঁদের চিনবেন না এমনটি ২য় ব্যক্তি ভাবতে পারেননি!)
১ম ব্যক্তি) : নবী (সা:) বলেছেন ”ان العلماء ورثة الانبيا” আর আপনারা তো টাই মার্কাদের অনুসরণ করেন। নবীর কথা মানেন না। আর যারা নবীর কথা মানে না,তারাতো নাস্তিক। তোমাদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তাই হক্কানি উলামাদের কাছে এসে মাথা ঠিক করো।
তুমি বললে আবার ভুলে গেলে। মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি।
২য় ব্যক্তি) : আপনি যদি আমাদের প্রতিষ্ঠানের সাবেক ছাত্র না হতেন,তবে আপনাকে অনেক কথা বলতাম। কিন্তু বিবেকের পর্দা আমার হাতকে থামিয়ে দিচ্ছে। তবুও কিছু কথা না বললে নয়। আপনি মাযহাব সম্বন্ধে মূর্খ এক মাদ্রাসা ছাত্র।এতো সংকীর্ণ মন মানসিকতা! আপনি মাদ্রাসায় পড়েন ভাবতে খারাপ লাগছে।
মনে করুন আমি এক মুহূর্তের জন্য লা মাযহাবি হয়ে গেছি। কেবল চারটি মাযহাব আমি একথা মানি না। মাযহাব চারটিতে সীমাবদ্ধ আপনি এটা প্রমাণ করে দিন। পারবেন? কুরআনের একটা আয়াত কিংবা সিহাহ সিত্তার হাদিস বলে মাযহাব প্রমাণ করেন! (মাযহাব চতুষ্টয় আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক মানুষের উপর এক বিশেষ দান। তাফসীরে আহমাদি সহ অন্যান্য কিতাবাদি খুজলে অগণিত প্রমানাদি পাওয়া যাবে। ২য় ব্যক্তি কেবল তর্কের খাতিরে প্রশ্নটি করেছিলেন। সুতরাং ভুল ধারণা করার কোনো অবকাশ নেই।)
আমি হানাফি মাযহাবের অনুসারী। তবে আমি জানার চেষ্টা করি আমার মাযহাবের কোথায় কি লেখা আছে।অন্য মাযহাবকে গালি দেই না। সালাফিদের বিধর্মি বলি না।
আপনার সাথে আমার এই পার্থক্য দেখে ভালো লাগছে। আমার ধারনা আপনি মাযহাবকে জানার চেষ্টা কোনোদিন করেননি। কষ্ট করে হাকিমুল উম্মত থানভী (রহঃ) এর লেখা ”তাকলীদ কি শরয়ী হাইসিয়াত” কিংবা মুফতি তাকি উসমানী (দা: বাঃ) এর লিখিত এবং সম্ভবত আব্দুল মালিক সাহেব কর্তৃক অনূদিত ”মাযহাব কি ও কেন” বইটা পড়ে নেবেন। ইনশাল্লাহ অনেক কিছু জানতে পারবেন। আল্লাহ আপনার সহায় হোন। January 14, 2013