হাদিয়া প্রদানের মাঝে নানারকম কল্যাণ রয়েছে। আল্লাহ’র রাসূল সা: হাদিয়া দেয়ার জন্য উৎসাহিত করেছেন। হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে : (عن عائشة رضي الله عنها قالت : ” كان الرسول صلى الله عليه وسلم يقبل الهدية ويثيب عليها”) — (وقال الرسول صلى الله عليه وسلم : ” تهادوا تحابوا”)
আমি সময় সুযোগে পরিচিতদের হাদিয়া দেয়ার চেষ্টা করি। পরিচিত-জনরা আমাকেও হাদিয়া দেন। হিসেব করে দেখলাম, আমি যে পরিমাণ হাদিয়া প্রদান করি, তারচেয়ে অনেক বেশি গ্রহণ করি।
পবিত্র রমযানের পর থেকে অপ্রত্যাশিতভাবে অনেকগুলো হাদিয়া হাতে এসেছে। এই হাদিয়াগুলোর পিছনে লুকানো রয়েছে অনেক দোয়া, স্নেহ, মমতা আর ভালোবাসা। আমি জানি, এতো স্নেহ মমতা পাওয়ার উপযুক্ত আমি নই। কিন্তু আমার প্রতিপালকের করুণা।
মূলত উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হাদিয়ার পিছনের গল্পগুলো বলতেই এই লেখাটির অবতারণা।
১) বিগত সপ্তাহে হাটহাজারি গিয়েছিলাম। দোয়া নেয়ার উদ্দেশ্যে মুফতিয়ে আ’যম আব্দুছছালাম চাটগামী হাফিজাহুল্লাহ’র সাথে সাক্ষাত করলাম। অনেক্ষন কথাবার্তা বলে বিদায় নেয়ার সময় বললাম, “হযরত! দোয়া চাহতা হো”। বললেন, “দোয়া ভী দেতা হো আওর কিতাব ভী” বলেই খাদিমকে বললেন, তাঁর লিখিত কিতাব সবাইকে দেয়ার জন্য। সৌভাগ্যক্রমে সেই কিতাবে হযরতের সাক্ষরও নেয়া হয়েছে। লাকাল হামদু আলা কুল্লি হাল!
২) ইংল্যান্ড থেকে এক ভাই ফোন দিয়ে বললেন, অমুক তারিখে একটু এয়ারপোর্ট যেতে পারবে কিনা! (আমি জানি তাঁর আসার কথা না) মজা করে বললাম, কেন? আপনি আসবেন নাকি! বললেন, না। তোমার জন্য একটি হাদিয়া ছিলো। কষ্ট করে এয়ারপোর্ট থেকে সংগ্রহ করতে হবে। বলে একটি নাম্বার দিয়ে ফোন করে চলে যেতে বললেন। কি আর করা। ভাবলাম একজন এতো কষ্ট করে হাদিয়া দিয়েছেন, আমি না হয় ১০ মিনিট কষ্ট করে এয়ারপোর্ট চলে গেলাম।
ভুলে গিয়েছিলাম। নির্ধারিত দিনে একটি নাম্বার থেকে ফোন আসলো। আজকে একটু কষ্ট করে এয়ারপোর্ট আসবেন। মনে পড়লো। সাথে সাথে গেলাম এবং আমার জন্য পাঠানো হাদিয়া নিয়ে আসলাম। বাসায় এসে দেখি একটি ঘড়ি এসেছে, যার দেশি মূল্য প্রায় বিশ হাজারেরও অধিক!!! (যদিও নিয়মিত ঘড়ি ব্যবহারের অভ্যাস নেই)
৩) তাসনীম! আমেরিকায় থাকেন। ছোটবেলায় একসাথে খেলাধুলা করেছি। একজন দ্বীনী ভাই ও বন্ধুর মতো সম্পর্ক। একদিন টেক্সট করে জানতে চাইলেন, আমি কি পছন্দ করি? কারণ তিনি আমাকে কিছু একটা হাদিয়া দিতে চান। আমি কিছু না দিতে অনুরোধ করলাম। কিন্তু তিনি কিছু দিবেনই। শেষ পর্যন্ত বিশাল এক প্যাকেট চকোলেট পাঠিয়ে দিলেন (আমি আবার চকোলেট বেশি খাই কিনা)। ধারণা করছি, এখনো ফ্রিজ খুঁজলে কয়েকটি পাওয়া যাবে। এই হাদিয়া পেয়ে আমি সত্যিই আপ্লুত। এতদূর থেকে মনে করা সহজ বিষয় নয়।
৪) বিশেষ একটি মুহূর্ত। অধিক পরিচিত অনেকেই জেনে গেছেন আমার মন খারাপ। একজন আসলেন এবং মন ভালো করার উদ্দেশ্যে ছোট একটি ব্যাগ দিয়ে বললেন, এটি তোমার জন্য। মন খারাপ ছিলো। কিছু না বলে রেখে দিলাম। কিছুদিন পর মনে হতেই বের করে দেখি, আমার নামের অক্ষর সম্বলিত চমৎকার একটি চাবির রিং।
কবি কতো সুন্দর করেই না বলেছেন (هدايا الناس لبعضهم بعض . . . . . تولد في قلوبهم الوصال
وتزرع في الضمير هوى ووداً . . . وتلبسهم اذا حضروا جمالا)
বিঃ দ্রঃ> নির্মল অনুভূতিগুলো সজীব রাখতেই এই লেখা। কেউ কিছু মনে করবেন না প্লিজ।
*আমি জানি, যারা হাদিয়া দিয়েছেন, তারাও এই লেখাটি পড়বেন। এই লেখাটি কিন্তু আপনাদের জন্য নয়। ফেসবুকে প্রকাশিত