গতকাল (২৯/১১/২০১৪) শনিবার আমাদের পাঁশের গ্রামে একটি দাওয়াত ছিলো। যে বাড়িতে দাওয়াত ছিলো, সেই বাড়ির বাসিন্দাদের অদ্ভুত একটি শখ আছে। প্রতি বছর একদিন তাঁরা সিলেটের প্রায় সব শীর্ষ উলামায়ে কেরামকে একত্রিত করেন। তো প্রতিবেশী হিসেবে আমন্ত্রিত হয়ে ভাই, ভাতিজাদের সাথে আমিও সেখানে গেলাম।
দাওয়াতে যারা উপস্থিত ছিলেন, তাঁদের উল্লেখযোগ্যদের একটি তালিকা দেই। তবে আংশিক একটি চিত্র ধারণা করতে পারবেন।
উপস্থিত ছিলেন জামেয়া ক্বাসিমুল উলূম দরগাহ মাদরাসার শায়খুল হাদিস মাওলানা মুহিব্বুল হক গাসবাড়ী, জামেয়া মাহমূদিয়া সোবহানিঘাট মাদরাসার শায়খুল হাদিস মাওলানা মুহাম্মাদ ইসহাক, জামেয়া মাদানিয়া কাজিরবাজার মাদরাসার শায়খুল হাদিস মাওলানা আহমদ আলী, আযাদ দ্বীনী এদারায়ে তা’লিম বাংলাদেশের মহাসচিব শায়খুল হাদিস মাওলানা আবদুল বাসিত বরকতপুরী, জামেয়া গলমুকাপন মাদরাসার মুহতামিম ও শায়খুল হাদিস মাওলানা আব্দুশ শহীদ গলমুকাপনী, উমরপুর মাদরাসার শায়খুল হাদিস মাওলানা মুখলিসুর রহমান কিয়ামপুরী, জামেয়া মাদানিয়া বিশ্বনাথের শায়খুল হাদিস মাওলানা ফযলুর রহমান বানিয়াচঙ্গি, জামেয়া ক্বাসিমুল উলূম দরগাহ মাদরাসার মুহতামিম ও শায়খুল হাদিস মুফতি আবুল কালাম জাকারিয়া, শেরপুর ও জামেয়া আব্বাসিয়া কৌড়িয়া মাদরাসার শায়খুল হাদিস মাওলানা নাযির হুসাইন প্রথমপাশী, ভবেরবাজার মাদরাসার শায়খুল হাদিস মাওলানা আব্দুর রশীদ, জামেয়া ক্বাসিমুল উলূম দরগাহ মাদরাসার মুহাদ্দিস মাওলানা আতাউল হক জালালাবাদী, মাওলানা আব্দুন নূর সদরঘাটী, মাওলানা আসআদ উদ্দিন রানাপিঙ্গী, জামেয়া আয়েশা সিদ্দীকা মহিলা মাদরাসার মুহতামিম ও শায়খুল হাদিস মাওলানা সালেহ আহমদসহ জামেয়া ইসলামিয়া আব্বাসিয়া কৌড়িয়া মাদরাসার উল্লেখযোগ্য সব আসাতিযা।
অসুস্থ থাকায় যেতে পারেননি খলীফায়ে মাদানী মাওলানা আবদুল মুমিন ইমামবাড়ী, সিলেট আলিয়া মাদরাসার সাবেক শায়খুল হাদিস মাওলানা জিল্লুর রহমানসহ উল্লেখযোগ্য আরো কিছু উলামায়ে কেরাম।
এতো উলামায়ে কেরামের সমাবেশ থাকতে পেরে সত্যিই বেশ তৃপ্তি অনুভব করলাম। সবার সাথেই মোসাফাহা এবং অল্প হলেও কথাবার্তার সুযোগ হলো। ফলে অনেক কিছু জানা হলো, শেখাও হলো।
যেমন জামেয়া মাদানিয়া কাজিরবাজার মাদরাসার শায়খুল হাদিস মাওলানা আহমদ আলী হাফিজাহুল্লাহ’র সাথে মোসাফাহা করার পর নাম জিজ্ঞেস করলেন। বললাম মাসুম। তখন এক নিঃশ্বাসে> মুহাদ্দিস, মুফাসসির, মুজাহিদ, মুজতাহিদ, মুয়াল্লিম, মুতায়াল্লিম, মুবাল্লিগ, মুহাম্মাদসহ আরো কিছু শব্দ উচ্চারণ করে বললেন সবই তো মীম দিয়ে। তোমার নামও মীম দিয়ে। আমি তো তখন হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি। জিজ্ঞেস করলেন কোন জামাআতে পড়ি? বললাম, মিশকাত। বললেন এভাবে বলতে নেই। আমরা যদি শুধু মিশকাত বলি তবে মানুষ আমাদের মাওলানা বলে ডাকবে। আর যদি বলি মিশকাত শরীফ, জালালাইন শরীফ, তবে আমাদেরও মাওলানা সাহেব বলবে। বললাম, ইনশাল্লাহ এখন থেকে এভাবেই বলবো। দোয়া চাইলাম।
জামেয়া দরগাহ মাদরাসার দস্তারবন্দী মহাসম্মেলনে মুফতি তাকী উসমানী হাফিজাহুল্লাহ’র আসাটা এতোদিন অনেকটা অনিশ্চিত ছিলো। খতীবে মিল্লাত মাওলানা উবায়দুল হক (রহঃ) –এর ছেলে, আমাদের মাদরাসার সহকারী নাযিম মাওলানা আতাউল হক জালালাবাদী হুজুরের সাথে দেখা হওয়ার পর জিজ্ঞেস করার আগেই বললেন, “মাওলানার আসার একটি সুযোগ হয়েছে।” উল্লেখ আমাদের জামেয়ায় দারুল উলূম করাচির বেশ কয়েকজন ছাত্র উস্তাদ হিসেবে আছেন। তাঁরা সবাই মুফতি তাকী উসমানী (দা: বাঃ) –কে মাওলানা বলে সম্বোধন করেন। যাক, জালালাবাদী হুজুরের কথায় বেশ আনন্দ লাগলো। তাকী সাহেবের আগমন দস্তারবন্দীর উজ্জ্বলতা অনেকগুণ বাড়িয়ে দেবে ইনশাল্লাহ।
বিকেলে সিলেটে এসে সন্ধ্যার পর এক শ্রদ্ধেয় বড় ভাইয়ের বাসায় গেলাম। অনেক আলোচনা হলো। অনেক কিছু জানা হলো। একটি কথা মনের ভেতরে বেস দাগ কাটলো। তিনি বললেন, আমাদের মাদরাসা অঙ্গনে পরচর্চা ইদানীং অনেক বেড়ে গেছে। এছাড়া আরও কিছু সমস্যা প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে তিনি বললেন, কলেজ ইউনিভার্সিটির ছেলেরা পড়ালেখার বাইরে প্রেম করে, নেশা করে, আড্ডাবাজী করে, ছবি দেখে সময় কাটায়। আমাদের ছেলেরা আলহামদুলিল্লাহ্ এসব থেকে মুক্ত হলেও পড়ালেখার বাইরে যে সময় মেলে তাতে ভালো ছাত্ররা বাড়তি পড়ালেখায় ব্যস্ত হলেও সাধারণ ছেলেপেলে দলবেঁধে গল্পে লিপ্ত হয়ে পড়ে। আর এভাবেই পরচর্চার হার প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ভেবে দেখলাম, সত্যিই তো এমন হচ্ছে। আচ্ছা, এসব প্রতিকারের কি কোনো উপায় নেই???
রাতে বাসায় আসলাম। সারাদিনের হিসেব করে দেখলাম সত্যিই অনেক ভালো একটি দিন কাটিয়েছি। ফেসবুকে প্রকাশিত